somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Errors of Online Writing আধুনিক ব্লগারদের ১০টি প্রিয় ভুল। মাঈনউদ্দিন মইনুল।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১) অন্য ব্লগারকে অনুকরণের চেষ্টা: Aping Others
পত্রিকায় আর টিভিতে সহজেই সংবাদ পাওয়া যায়। ব্লগার হতে গিয়ে সাংবাদিক হতে চাইলে প্রথমত ব্লগসাইট ছেড়ে দিতে হবে। অন্য দশটি ব্লগপোস্টের মতোই যদি আমার লেখা হয়, তবে পাঠক কেন আমার লেখা পড়বে? অন্যগুলো পড়ে নিলেই তো হলো। অন্ধভাবে অন্যকে অনুকরণ করা, আর সৃজনশীলতাকে গলাটিপে মারা একই কথা। প্রচুর পড়ে ও দেখে খুঁজে নিতে হয় নিজের বিষয়টি। অনন্যতা-ই পাঠককে অনুপ্রাণিত করবে আমার লেখাটি পড়ার জন্য। (মনে থাকে না!) ;)

২) কাদাছুঁড়াছুড়ি বা অন্যের সমালোচনায় অংশ নেয়া: Gossiping
এটি খুবই মজার ও আনন্দদায়ক এবং অভিন্ন শত্রু মানুষকে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে দেয়। অজান্তেই লিখিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি, যাকে বলে আজাইরা পেঁচাল, বুঝতেও পারি না। একেই বলে আদি পাপ, যাতে আমরা অবচেতনে আটকে পড়ি। অন্যের বিষয়ে আপনি ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত অন্যকে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক হবার প্রত্যাশা করা বোকামি। (B-) জ্ঞানের কথা!) ব্লগের সমাজ প্রেক্ষিতটি ভুলে গেলে হয় না। যেমন রোপণ সেরকম কর্তন, আপনি রোপণ না করলে কাটবেন কী? তাই ভালোবাসা সহানুভূতি শ্রদ্ধা রোপণ করুন, ঠিক সেটাই আপনার কাছে ফিরে আসবে। শতভাগ গ্যারান্টি! বাংলা ব্লগে প্রচুর সৃজনশীল লেখার সাথে আছে প্রচুর দলাদলি। লেখার মান বাড়লে এসব শেষ হবে এক দিন।

৩) রাতারাতি সফলতার প্রত্যাশা: Dreaming for Rapid Exposure
লেখালেখি একটি শ্রমসাধ্য বিষয় – আমি সেটা বলতে চাই না, কারণ যারা লেখতে ভালবাসেন তাদের কাছে এটি কষ্টদায়ক নয় মোটেই। রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন, লেখতে লেখতে আমি লেখা শিখেছি। লেখে-ই নিজেকে আবিষ্কার করা যায় একজন বিদগ্ধ লেখক হিসেবে। পাঠকপ্রিয়তা শুধু ভালো লেখাতেই আসে না, এরজন্য সময়েরও প্রয়োজন। ধারাবাহিকভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় লেখার জন্য বরাদ্দ করলে, সফলতা আসবেই! তবে অতি শিঘ্রই সফলতা আশা করলে হতাশ হয়ে অকালেই লেখা বন্ধ করে দেবার যোগার হয়। (ব্লগারের আবার সফলতা কী?)B-)

৪) পাঠকের বিষয়টি উপেক্ষা করে যাওয়া: Ignoring the Attitudes of the Audience
একটি নির্দিষ্ট সময় ব্লগে অতিক্রম করার পর অনেক ব্লগার নিজেকে আত্মকেন্দ্রিকতায় আবদ্ধ করে ফেলেন। তারা কী করেছেন, কতদিন ধরে ব্লগিং করছেন, কী পছন্দ করেন, কী তাদের ভালো লাগলো, কী ডিসগাস্টিং লেগেছে, কী তার অনুভব, তিনি কত মহৎ, কত আদর্শবান – ইত্যাদি বিষয়ে নিজেকে আটকে ফেলেন। একটি ব্লগ পোস্ট সাধারণত পাঠকের পড়ার জন্য। তাই তার প্রয়োজনটাও ভুলে গেলে হবে না।

৫) অগণিত ভুল করে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরক্তি উৎপাদন করা: Irritating Mistakes in Language, Spelling and in Presentation
লেখার স্টাইল খুবই উন্নতমানের, বিষয়ও দরকারী, ভাষাও সরল এবং পাঠক-বান্ধব। কিন্তু বানানের ভুল, ব্যাকরণের ভুল, অনাকাঙ্ক্ষিত ছোট ভুল, বিরামচিহ্নের অবিরাম ভুল, তথ্যের ভুল, সূত্রের ভুল, অপ্রাসঙ্গিক ছবি – হরেক রকমের ভুল দিয়ে এই ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, আপনি পাঠককে খুব থোরাই কেয়ার করেন।

৬) দিনে একশ’বার মতামত স্ট্যাট দেখা: Killing Time Seeing Hit Stats
কতগুলো মন্তব্য পড়লো আমার লেখায়? কে মতামত দেয় নি? কেন দেয় নি? এতো ভালো লেখা পোস্ট দিলাম, পাঠক আমারটি না পড়ে কী করছে এখন? ( B-)নিজের কথাই কইতাছি!) বারবার নিজের রূপকে দেখার এই নার্সিসিজম আপনার লেখক সত্ত্বাকে কুঁকড়ে মারবে। শেইক্সপিয়রের লেখা আমরা এখনও পড়ে ভিমরি খেয়ে বলি, আহা কত চমৎকার কথা! তিনি তার ৫শ’ বছর পরের পাঠকের কথা মনে রেখেছিলেন? চিন্তিত হয়েছিলেন তার পাঠকপ্রিয়তার কথা?

৭) কৃতীত্বকে স্বীকার না করা: Ignoring Other People’s Credit/Contribution
যেখানে যার কৃতীত্ব, সেটা লেখকের হোক বা পাঠকের হোক, তা স্বীকার না করা অতি স্বাভাবিক মানসিকতা। সাধারণত অন্যের ভালো দিক সহজে আমাদের চোখে পড়ে না; চোখে পড়লেও মনে থাকে না; মনে থাকলেও মুখে তা স্বীকার করি না; স্বীকার করলেও তা উদারভাবে প্রকাশ করি না। উত্তম যদি হতে চান তবে অন্যের উত্তম দিকটি ভালোমত সনাক্ত করুন, এবং তা স্বীকার করুন (এহেম!)।B-)
একসময় দেখবেন সকলের উত্তম গুণগুলো কীভাবে আপনার মধ্যে চলে এসেছে। তাই প্রশংসা করুন উদার হস্তে এবং পকেট খালি করে। (একখান খাঁটি কথা কইলাম!)

৮) মন্তব্যের উত্তর না দেওয়া: Non-responsive to Readers’ Comments
এবিষয়টি রহস্যময়, কেন জানি না উত্তর দিতে মন চায় না। (অর্থাৎ মুন্চায় না!) অথবা একই কথা দিয়ে সকলকে একটি দায়-সারা ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করে দিই। মাঝে মাঝে সকলের মন্তব্যের নিচে একটি ‘গণ ধন্যবাদ’ দিয়ে দিয়ে বলি, “যারা আমার লেখায় মতামত দিয়েছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ।” এর অর্থ অনেকটা এরকম: “আরে, আমার লেখা পড়বেন না তো, কার লেখা পড়বেন? আমার লেখা তো পড়বেনই, এটাই স্বাভাবিক।” এখানে বলে রাখি: ব্লগে অনেক ভালো ভালো পোস্ট মাত্র দু’একটি মতামত নিয়েই তলিয়ে যায় লেখকের নিজ আরকাইভে। তাই ভালো লেখা দিলেই যে পাঠকে তা গোগ্রাসে গিলবে, এরকম আশা করা অনেকাংশেই ভুল।

৯) মিথ্যা, অনুমান-নির্ভর এবং প্লেজিয়ারাইজড পোস্ট দেওয়া: Plagiarized Post/Information
পাঠকের পর্যবেক্ষণশীলতার ব্যাপারটি অনেকেই আঁচ করতে পারি না। মনে করি পাঠক বুঝি খুবই বোকা-সোকা, কিছুই বুঝে না। ‘লেখা’ মানে হলো দলিলভুক্ত করা, এটি কত বছর ধরে কত সহস্র পাঠক পড়বেন তা আর লেখকের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মিথ্য আর ধার-করা লেখা প্রকাশ করলে, আজ নয় কাল তা প্রকাশিত হবে এবং লেখক না জানলেও নবীণ প্রজন্ম ধিক্কার দেবে লেখককে। একটি বিষয় লেখকের নিয়ন্ত্রণেই থাকে চিরদিন। তা হলো, লেখক তার লেখারকনটেন্ট ও কোয়ালিটি দিয়ে কালোত্তীর্ণ মনোভাব তৈরি করতে পারেন পাঠক-হৃদয়ে।

১০) পইন্টলেস রাইটিং বা উদ্দেশ্যহীন লেখা: Pointless Writing – Writing Without any Purpose
বিশাল বড় একটি প্রবন্ধ লেখে একদিন দেখলাম, এর মূল বক্তব্য নিজেই খুঁজে পাচ্ছি না! অথবা দেখি, সারবক্তব্য থাকলেও তা অস্পষ্ট। কোন মেসেজ নেই, বিশ্লেষণ নেই। লেখকদের কী করতে হবে তা বলা মুশকিল, তবে ব্লগারদেরকে সুনির্দিষ্ট বিষয় ও বিশ্লেষণ ছাড়া লেখা দিলে পরে পস্তাতে হয়। (কী আর কমু!) B-)


[ পাবলিক ব্লগে লিখতে গিয়ে কিছু উপলব্ধি আসলো - সেটাই শেয়ার করলাম। হয়তো সকলেরই এরকম ভুল হয় না। পাঠক ব্রাকেটের কথাগুলোতে লেখকের অবস্থান বুঝতে পারবেন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আধুনিক ব্লগারদের শক্তি সামর্থ্যে আর সম্ভাবনায়। বিশ্বাস করি, ছাপার অক্ষরের চেয়ে ব্লগারের লেখার শক্তি অন্যরকমভাবে বেশি, কারণ এখন বইয়ের পাতার চেয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে মানুষ বেশি দৃষ্টি রাখে। তাই, এবিষয়ে সামু’তে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। বাকি তেনার ইচ্ছা :D ]
৭১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×