somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাঈনউদ্দিন মইনুল
উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী। শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার এবং নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার জন্য কাজ করি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কৌতূহলী।

ব্লগারের প্রতি পাঠকের আস্থা: Blogging Credibility

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক) প্রতিদিন লেখা হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন ব্লগ, প্রকাশিত হচ্ছে আর আরকাইভ হচ্ছে; কিন্তু কেউ কি খেয়াল করেছেন, কতগুলোর কথা মানুষ মনে রেখেছে? অথবা আবার ফিরে গিয়ে পড়ে এসেছে, বা অন্য জায়গায় এর উল্লেখ করেছে, ব্যবহার করেছে? বাংলা ভাষায়ই হাজার হাজার ব্লগের সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ব্লগার অন্যদের মনে স্থান করে নিয়েছে, দখল করে নিয়েছে হৃদয়ের একটুখানি জায়গা - এই অশরীরী পৃথিবীর মধ্যেই। না দেখা-ই সেখানে স্বাভাবিক; পুরোটাই উপলব্ধি আর মনোভাবের বিষয়।

ব্লগার যখন পাঠকের মনোভাব আর দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব সৃষ্টি করে, তখন অবচেতনে তার লেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তারা ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি অর্জন করেছে। পেয়ে গেছে লেখার জন্য একটি নিশ্চিত নিরাপদ বিষয়। অধিকাংশ পাঠক যে রকমের লেখা চায়, সেবিষয়ে যে ব্লগার ওস্তাদ তার তো আর কিছুরই প্রয়োজন নেই। আবার লেখার বিষয় ধরণ ও গুণগত মান দিয়ে কোন ব্লগার পাঠক সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তার মতো করে। উভয়েরই ফলাফল অভিন্ন: ব্লগে নিরাপদ স্থান (niche)।

ফ্রান্সিস বেইকনের ভাষায়, “কিছু লেখা চেখে দেখার জন্য, অন্যগুলো গিলে খাওয়ার জন্য আর সামান্য কিছু লেখা আছে যা চিবিয়ে খেয়ে হজম করতে হয়।” ব্লগিংকে পেশা হিসেবে নেবার সময় এসেছে। পশ্চিমে ব্লগিং করে জীবিকা অর্জন করছে এরকম ব্লগারের সংখ্যা গুণা যায় না। এখানে পুরোপুরি হুমায়ূন বা খুশবন্ত শিং হবার প্রয়োজন নেই। বরং তা হতে চেষ্টা করলেই বিপথে যাবার সম্ভাবনা আছে, কাকের কোকিল হবার চেষ্টার মতো। দরকার শুধু ব্লগার হবার।

কোন ব্লগারের লেখার ‘বিষয় ও ধরণের’ প্রতি সাধারণ পাঠকের আস্থাকে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি বলা যায়। কোন কোন ব্লগার পোস্ট দিলেই সেখানে পাঠক গিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন, অথবা তিনি কিছু নির্দিষ্ট পাঠক সকল ব্লগ পোস্টেই পেয়ে থাকেন। এরকম অবস্থাকে সাধারণভাবে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি বলা যায়। কথা হলো, কীভাবে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি অর্জন করা যায়? এবিষয়ে কোন ওয়ান-স্টপ সমাধান নেই। নানা জনের নানা কৌশল। সবচেয়ে বড় কৌশল হলো ভালো কিছু লেখা, নিশ্চিত হয়ে লেখা এবং সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা কথাটিকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা। অন্যভাবে বলা যায়, পাঠককে উচ্চতর স্থানে রাখা এবং তাকে হেয় জ্ঞান না করা।



দুই) ‘ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি’ বিষয়টিতে পাঠকের কৌতূহল নিবৃতির জন্য ব্লগিংএর দু’একটি জনপ্রিয় এবং পরীক্ষীত পদ্ধতি উল্লেখ করছি। আমি একে কৌশল বলছি না, কারণ কৌশলের সাথে কেন যেন ধূর্ত শট প্রতারক ইত্যাদি এট্রিবিউট চলে আসে। আস্থা অর্জনকারী ব্লগারদের মধ্যে এগুলোর স্থান খুব একটা নেই।


ক) নিজের সাথে বুঝাপড়া:

নিজের সাথে একটি গোপন চুক্তিতে আসুন। তা হলো, আপনি যে বিষয়ে লিখবেন, শপথ নিন যে তাতে ষোলআনা জেনে শুনেই লিখবেন। অথবা যা জানেন মানেন এবং বুঝেন সেগুলো দিয়েই লিখতে শুরু করবেন। প্রতিদিন পোস্ট দেবার বালখিল্য তাগিদে হাবিজাবি পোস্ট দেবেন না। অন্যের ব্লগ পড়া এবং মন্তব্যদানের ক্ষেত্রেও সাশ্রয়ী হোন। দেখে শুনে বুঝে মন্তব্য দিন। অযাচিত পরামর্শ দেবেন না বা কারও মনোভাবকে আঘাত করে মন্তব্য দেবেন না। এরকম আরও কিছু বিষয়, কমন সেন্স দিয়ে ভাবলেই বুঝা যায়। ওই ধরণের বিষয়গুলো নিয়ে নিজেকে সংযত রাখুন।


খ) আসল আপনি:

লেখায় আসল আপনাকে তুলে ধরুন। ব্যক্তিগত হোন। নিক আপনার যা-ই হোক, মানুষ এখনও বিশ্বাস করে যে, রোবটেরা ব্লগিং শুরু করে নি। ভেতরের মানুষটি প্রত্যেকেরই অনেক ভালো, গুডি বয়/গার্ল! সামাজিক ও বাহ্যিক কারণেই ইগো তৈরি হয়। অন্যকে অনুকরণ করার প্রয়োজন নেই। আপনার নামেই ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করুন। আপনার ‘আপনাকে’ তুলে ধরুন। ব্লগিং ছাড়া অন্য কোন এজেন্ডা না থাকলে, প্রোফাইলে যতটুকু সম্ভব আপনাকে জানতে এবং বুঝতে দিন।


গ) সাংগঠনিক আস্থা অর্জন:

একই ধরণের লেখা লেখেন, একই রকমের ভাবেন - এমন ব্লগারদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন। তাদের লেখায় দৃষ্টি দিন। মদনের লেখা চন্দনের পছন্দ। এদিকে চন্দনের বন্ধু হওয়ার সুবাদে সুমনও একদিন মদনের লেখায় ক্লিক করতে শুরু করলো। এভাবে একদিন সুমনের বন্ধু রোমনের চোখে পড়লো মদনের লেখা। ভালো ব্লগার হবার জন্য সেলিব্রিটি হবার প্রয়োজন নেই, তবে লেখার মাধ্যমে অন্যের সাথে ভাবের বিনিময় করুন। আন্তরিকতা, যদি থাকে, তবে প্রকাশ করুন নির্দ্বিধায়।


ঘ) কন্ট্রোল ইয়োর আঙ্গুল!

বাস্তবিক জীবনে সবাই যেখানে মেজাজ দমন নিয়ে চিন্তিত, সেখানে শুধু আঙ্গুল দমন করেই আপনি কিন্তু মহাত্মা ব্লগারে রূপান্তরিত হতে পারেন। চোখের দেখা হয় না বলে অনেকেই চশমখোর হতে পারেন, শুনিয়ে দিতে পারেন দু’টি শক্ত কথা। আপনার মেজাজটাও খিটমিট করবে, লিখে দিতে তার যথাযথ উত্তর। কিন্তু থামুন, যা লেখবেন তা-ই রয়ে যাবে - বয়ে যাবে আপনার বদমেজাজের সাক্ষ্য। যা ভাবছেন, তা যদি নেতিবাচক হয়, তবে যত সঠিকই হোক না কেন সেটিকে ওল্টে প্রকাশ করুন আপনার কম্পিউটারের স্ক্রীনে। শুধু দু’টো আঙ্গুলকে সংযত হয়ে ব্যবহার করলেই দেখুন কী চমৎকার ফল!


ঙ) লিখিত বক্তব্য চড়ে বসে:

Verba volant, scripta manent. এটি একটি ল্যাটিন প্রবাদ যার অর্থ হলো অনেকটা এরকম “মৌখিক বক্তব্য ওড়ে যায় - লিখিত বক্তব্য চড়ে বসে।” লিখিত বক্তব্য সাজিয়ে লিখুন, পলিশ করুন। মুখের কথা অনেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কিন্তু লেখা শুদ্ধ করা যায়, মুছে দেওয়া যায় এবং সম্পাদনা করা যায়। লেখা পোস্ট দেবার সময় শেষ ক্লিকটি করার পূর্বে দেখে নিন, আপনার লেখায় মানবতা সত্য সৃজন সুন্দর আর ভালোবাসা আছে কিনা।




বাংলা ভাষায় ব্লগিং-এর শক্তি সামর্থ্যে ও সম্ভাবনায় আমার একটি বিশ্বাস জন্মেছে। বিশ্বাস করি, ছাপার অক্ষরের চেয়ে ব্লগারের লেখায় আছে অন্যরকমভাবে ধার। এখন বইয়ের পাতার চেয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে মানুষ বেশি দৃষ্টি রাখে। আমার চাওয়া হলো: বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হোক আর সচেতন হোক নতুন প্রজন্মের নবীন লেখকেরা। ব্লগারের প্রতি পাঠকের আস্থা নিয়ে বিদগ্ধ পাঠকের মতামত কামনা করছি। শুভ ব্লগিং! (২৯/১১/২০১২)



------------------------------------------------------------------------
*বাংলা ভাষায় ব্লগিং নিয়ে অন্যান্য পোস্টগুলো

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫০
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×