somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

::: অনলাইন পত্রিকাগুলোর আগ্রাসী ‘ট্যাবলয়েড’ স্বভাব এবং জাতীয় পত্রিকার রুচিশীলতা

১১ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ব্যবসায়ী চৌধুরি আলমের একমাত্র মেয়ে নোমিতা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে আলম সাহেবের স্ত্রী মারা যান। মেয়ের ভবিষ্যত সম্পর্কে নিশ্চিত না হতে পেরে আলম দ্বিতীয় বিয়েতে মত দেন নি। ব্যবসায়ে পূর্ণ মনযোগ এবং কর্মশক্তি প্রয়োগ করেন। একমাত্র সংকল্প, মেয়েকে ভালো একটি জীবনের সন্ধান করে দেওয়া।

মেধাবী ছাত্রী নোমিতা এ-লেভেলস শেষ করলে বাংলাদেশী হবার সুবাদে নিজে থেকেই একটি ব্রিটিশ স্কলারশিপ যোগাড় করে। কিন্তু বাবা বেঁকে বসেন। বাবার ইচ্ছা ছিলো দেশেরই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেবেন। পিতৃ হৃদয়ের প্রত্যাশা ছিলো, তাতে মেয়ে চোখের সামনে থাকবে। কিন্তু আত্মীয়-বন্ধুরা তাকে বুঝালো যে, মা-মরা মেয়েকে এখানে যথাযথ দেখাশুনা করা যাবে না। বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশি ছেলেমেয়েরা অন্যরকম প্রেরণা পায় পড়াশুনা করার।

নোমিতার লন্ডন যাবার দু’বছরের মধ্যে আলম গ্রেফতার হন। তার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জের ধরে একটি জাতীয় পত্রিকার মালিকের সাথে তার বিরোধ তৈরি হয়। সেই পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষিতে কয়েক দিনের মধ্যেই চোরাচালান এবং সিন্ডিকেট ব্যবসায়ের অভিযোগে আটক তিনি হন। এরপর থেকে কযেকটি পত্রিকা নোমিতার প্রাত্যাহিক জীবন নিয়ে চমকপ্রদ খবর দিতে শুরু করে।



এবার একটি সংবাদ দেখুন*:

“মা নেই বাবা জেলে। তাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাই সারাক্ষণ নিজের খাম-খেয়ালিপনায় মত্ত থাকেন ঢাকার কুখ্যাত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী নোমিতা চৌধুরি। নোমিতা একজন পূর্ণ বয়স্ক নারী। দেখতেও মন্দ নয়। ব্রিটেনে পড়াশুনা ও বড় হওয়া। বাঙালির মেয়ে হলেও পশ্চিমা সংস্কৃতি তাকে ভীষণ ভাবে টানে। তাই প্রেমিক হিসেবে কোনো বাংলাদেশী যুবককে চান না নোমিতা। তাঁর চোখে বাংলাদেশীদের চেয়ে বরং ব্রিটিশরা ভালো। পশ্চিমারা নাকি সুখে থাকার মন্ত্র জানে! সেই নীতিতে নোমিতাও বিশ্বাসী। হইহুল্লা আর বাহ্যিক সুখটাই তার কাছে প্রধান বিষয়।

ভালো-মন্দ বুঝার বয়স নোমিতার হয়েছে। কিন্তু মা-বাবার অনুপস্থিতিতে আজকাল বেসামাল জীবন যাপন করছেন নোমিতা। বন্ধুদের সঙ্গে মাঝরাতের পার্টিতে হৈ-হুল্লোড় করতে আজকাল তার খুব পছন্দ। প্রায়ই তাকে বিভিন্ন পার্টিতে দেখা যায়। এই তো সেদিনের কথা। টাওয়ার হ্যামলেটের কলামবিয়া রোডে একটি লেট নাইট পার্টিতে তাকে খুব বেসামাল অবস্থায় দেখা যায়। শুধু তাই নয়, সেদিন রাতে তার এক বন্ধুর সাথে খুবই ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখা যায়। অবশ্য এখানে বিস্মিত হবার কিছুই নেই। একজন কালোবাজারির মেয়ের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু তো আশা করা যায় না!”



‘এই তো সেদিন’... অর্থাৎ একদিনের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে করে তারা বিশাল বড় একটি কাহিনি রচনা করতে পারেন। এরকম মুখরোচক সংবাদ এখন ব্রাউজার খুললেই চোখে পড়বে। ঘটনা কতটুকু সত্য সেটি অন্য বিষয়, কিন্তু পত্রিকাগুলোর উদ্দেশ্য যে ভালো নয়, তা নিশ্চিত বলা যায়। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যবচ্ছেদ করে সংবাদ বিক্রি করে তারা সমাজের কী উন্নয়ন করে আমার উপলব্ধিতে আসে না।







সম্প্রতি অগণিত অনলাইন পত্রিকার বিস্তৃতিতে বিষয়টি অনেকটা মহামারি আকার ধারণ করেছে। আগে জানতাম, ব্লগার বা অনলাইন একটিভিস্টরা ‘হিট খোর’ - তাদের একটি বড় অংশ হিট বা ক্লিক সংখ্যার জন্য প্রায় বেপরোয়া হয়ে খাটে। নানান রকমের চটুল লেখা দিয়ে পাঠকের দৃষ্টিকে মিলিসেকেন্ড সময়ও যদি ধরে রাখা যায়, তবেই তাদের হলো। হিট, ক্লিক আর লাইক এর সংখ্যা দিয়ে তারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার বিচার করে।


আরেকটি পক্ষ আছে যারা বাস্তবিক জীবনেও কম জনপ্রিয় নন। তবুও ফেইসবুকে ভক্তের সংখ্যা লক্ষাধিক না হলে তাদের চলে না। লক্ষাধিক থেকে মিলিয়নাধিক। এর মধ্যে প্রায় সকল শ্রেণীই আছেন: অভিনেতা, স্পোর্টম্যান, মডেল, নেতা, মন্ত্রী এবং খ্যাতিমান লেখক। ভক্তের সংখ্যা একটি বড় মাইলস্টোনে পৌঁছালে তারা আবার গর্বের সাথে ঘোষণাও দেন। যেমন, সেদিন একজন খুবই বিখ্যাত অভিনেত্রী তার একটি সেল্ফি দিয়ে ধন্যবাদ জানালেন ভক্তদেরকে।


যা হোক, যে বিষয়টি আমাকে বেশি বিস্মিত করেছে, তা হলো কয়েকটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকও এই পাল্লায় নেমেছে। আমি তাদের প্রিন্ট সংস্করণের পাঠক, তাই নাম প্রকাশ করছি না। হিট ক্লিক আর ফলোয়ার সংখ্যা তাদেরও দরকার। সাইবার সমাজে গ্রহণযোগ্যতার একটি প্রতীক হিসেবে তারা দেখছেন একে। আর এজন্যই মরিয়া হয়ে লেগেছেন ফলোয়ার ও হিটের পেছনে। প্রিন্ট মাধ্যমে কোন স্বল্পবসনা রমনীর ছবি বা পরকীয়া প্রেমের রোমাঞ্চকর সংবাদ দিতে তারা যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করতেন, অনলাইনে সেটি দিব্বি প্রকাশ করে দিচ্ছেন। এতে তাদের পেশাগত সততা এবং নৈতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন।


লাইফস্টাইল বা চটুল বিষয়ে পোস্ট দিয়ে তারা চটুল পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। পোস্টগুলো অনেকটা এরকম:

>অমুক নায়িকার বিয়ে ও ডিভোর্সের সাত অথবা বারো কাহন...

>অমুক নায়িকার সাথে তমুক নায়কের অবকাশ যাপন

>দাম্পত্য জীবনে সুখী হবার ৭টি সূত্র...

>পুরুষের যে ১০টি বিষয় নারীর অপছন্দ বা পছন্দ

>নারী যে ১০টি বিষয় লুকাতে চায় বা প্রকাশ করতে চায়

>নিজের নগ্ন ছবি আপলোড করায় অমুকের বিবাহবিচ্ছেদ (সাথে অবশ্যই একটি দৃষ্টান্ত)

>অমুক নায়িকার ৭ স্বামী (ভেতরে গিয়ে দেখবেন সেটি সিনেমার কাহিনি!)

>কর্মস্থলে নারীকে অপছন্দ করার ১০টি কারণ ইত্যাদি ইত্যাদি (সবচেয়ে ডিসগাস্টিং!)



যে কোন উপায়ে একটি ‘হিট’ পাওয়ার জন্য তারা আপসহীন। এজন্য কারণে অকারণে অর্ধনগ্ন ছবি দিতেও তারা পিছপা হন না। মজার ব্যাপার হলো এসবের অধিকাংশই তারা প্রিন্ট মাধ্যমে প্রকাশ করেন না। তবে কি সাইবার সমাজকে তারা কোন সমাজই মনে করছেন না? তারা কি ধরে নিচ্ছেন যে, ইন্টারনেটে যারা বিচরণ করে তারা মানুষ না, তারা এদেশের না। তারা বিপথে পরিচালিত হলে এদেশের সমাজ কলুষিত হবে না? এই কি তাদের ধারণা?



-----------
*চৌধুরি আলমের ঘটনা এবং সংশ্লিষ্ট খবরটি একটি প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:১১
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×