somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দায় বাড়ছে আমার! বদলে যাচ্ছি আমি!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাস্তবতা! সবকিছু ভুলে বাস্তবতাকে মেনে এসে গ্রহণ করেছি প্রবাস জীবন। সেই যে প্রায় দশ বছর আগে পেয়েছিলাম স্বজনের অতুলনীয় ভালোবাসা। আজ তো সেই ভালোবাসা পাওয়ার কথা তো চিন্তাই করতে পারি না।



তাও মনকে খানিকটা শান্তনা দিতে পারি যে, শৈশবে বাবা-মা’র আদরে শৈশবটা বেশ ভালোই কেটেছে। আর শৈশবে তো আমার অধিকার ছিলো সেটা পাওয়ার। আর প্রত্যেক বাবা-মা’র তো সে ভালোবাসাটুকু সন্তানকে দেওয়া তাদের দায়িত্ব।কিন্তু আজ আমি পারছি না, নিজের দায়িত্বের বিন্দুমাত্র পালন করতে। যেটা আমার বাবা-মা ঠিকই আমাকে দিয়েছিলেন।

এখন আমি একজন বাবা। আমার সোনামনিটা এক পা দুপা করে করে পাঁচ বছরে পৌঁছেছে।


বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিলো, তাকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া। কিন্তু তার শৈশব তো বাবাকে ছাড়াই কেটেছে। অন্যরা তো বাবার হাত ধরে খেলার মাঠে গিয়েছে। কোলে করে তাদের বাবা নিয়ে গেছে বাজারের সেরা দোকানটিতে।


আহা বাস্তবতা! আমার সন্তান! আমি তো পারিনি তাকে বাজারে নিয়ে তার পছন্দের জিনিসটি হাতে তুলে দিতে। কেউ নেয়নি তাকে খেলার মাঠে। সন্ধ্যা হলে তার মা কি পেরেছে তাকে আবার কোলে করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। তাকে কি আসি পেরেছি সাঁতার দেওয়া শিখাতে! না পারিনি। হয়তো দোকানে যাওয়ার জন্য কতই না কান্না করেছে! খেলার মাঠে যাবে বলে কতোই না রাগ করে ছিলো। মা তো সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আহা! আমার সোনা মনিটা হয় তো ভালোভাবে খেলতেও যেতে পারেনি।

এসব ভালোবাসাটুকু তো তার পাওয়ার অধিকার ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা! আমাকে অনেক কঠিন করে দিয়েছে। আমি বাস্তবতার কাছে হার মেনেছি। পারিনি, সোনা মনিটার হাত ধরে তাকে নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে যেতে। বাবার ভালোবাসা ছাড়াই পাঁচ বছরে পা দিয়েছে মামুনি আমার।আমি আরও পারিনি।




আজ শনিবার। সে ঘর থেকে বের হয়ে জীবনের প্রথম স্কুলের ফটকে পা রাখবে। নতুন বছর, কত শিশুই তো ঘর থেকে বের হয়ে এ বছর পাঠশালার বেঞ্চে গিয়ে বসবে। ছোট্র শিশু তো জানেই না স্কুলের পথটা কোন দিকে বা সেখানে গিয়েই বা কী হবে!তাই তো বাবা শিশুটির হাত ধরে স্কুলের রাস্তাটির উপর দিয়ে যাবে। শিখাবে স্কুলের নিয়ম-কানুন। পড়নে থাকবে স্কুলের নতুন পোশাক, জুতা আর ব্যগ। হাতে একটা বেলুনও কিনে দিবে তার বাবা। বাবা আর সন্তানের এ দৃশ্য প্রকৃতিকে আরও সৌন্দর্যময় করে তুলবে।

আমার সোনা মনিটা!

আমার মেয়েটা!

আমার সোনামনি!

না। আমি পারবো না। পারবো না তার হাত ধরে…!

প্রথম দিনে পারবো না তার হাতে একটা বেলুন তুলে দিতে।

বড্ড বদলে যাচ্ছি আমি। ভুলে যাচ্ছি সোঁনালী দিন। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার মানুষদের সময় দেওয়া। জীবনের প্রয়োজনেই বদলে যাচ্ছি। সূর্য উঠার পরেই লাগামহীনভাবে ছুটছি আমি। পিছনে পড়ে যাচ্ছে কতো দেওয়া-নেওয়ার হিসাব। সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মা’র কাছে কতো দায় আমার। কিভাবে পূরণ করবো এসব ভালোবাসা!

বন্ধু কয়েকটি মেসেজের উত্তর না পেয়ে খুবই ক্ষেপেছে। এটি আমার প্রতি তার ভালোবাসা বা অধিকার। মেসেজ আমি ঠিকই দেখেছি, উত্তর দিবো দিবো আর হয়নি দেওয়া। এখন যে আমার আর সেই সোনালী দিন নেই। অফিসে এসেই কম্পিউটার ওপেন করে, প্রতিদিনের ধারাবাহিক কাজ আমাকে ব্যস্ত করে দিয়েছে।

সেই ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত এইভাবেই কাটিয়ে আসছি। তখন থেকেই লিখার প্রতি আগ্রহটা একটু বেশিই ছিলো। শিখেছি বাংলা টাইপ, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্লগে বেশি সময় দিতাম। পাঠক হিসেবেও ভালো অবস্থন আমার। এর পর নিজেই ব্লগে লিখতাম। পরবর্তীতে নিউজ লেখা শিখা।

এর পর আস্তে আস্তে জাতীয় সংবাদমাধ্যম মানব জমিন, বিডিনিউজ২৪ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে প্রবাসীদের জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম প্রবাস কথা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাইটিভি’র সৌদি আরব সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি।

যাই হোক। মানিকনগরের বাসিন্দা বন্ধু মামু, ইসমাইল হিরা’র সাথে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছি মানিকনগর এলাকায়। ফেইসবুকে মন্তব্য, জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো এখন আর হয়ে ওঠে না। নিজের স্ট্যাটাস নিচের বন্ধুদের প্রতি উত্তর এখন দেওয়া হয় না।



সবাইকে কেমন জানি ঠকানো হয়ে যাচ্ছে। কারও অধিকার রক্ষা করতে পারছি না।

বাস্তবতা! সব থেকে কঠিন!

আজ তো আমার সোনামনিটা স্কুলে যাবে। পারবো না, তার হাত ধরে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে। বাস্তবতা আমাকে কঠিন করে দিচ্ছে, দায় বাড়ছে আমার! বদলে যাচ্ছি আমি!

শুভ কামনা আম্মু!

মোবারক হোসেন ভুঁইয়া, জেদ্দা, সৌদি আরব

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৫৯
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×