somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়ের স্কুলে প্রথম বারের মতো প্রবাসী বাবা

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কন্যার সাথে সেলফি, চিলপাড়া ব্রিজ , চৌদ্দগ্রাম , কুমিল্লা ।

মেয়ের স্কুলে প্রথম বারের মতো প্রবাসী বাবা। মুনতাহিনা জাহান - আমার মেয়ে - তার জন্মের পরথেকে বাবাকে তেমন কাছে পায়নি। আমার আট বছর যাবৎ দেশে যাওয়া হয়নি। এরমধ্যে অবশ্য তারা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব এসে কিছুদিন থেকে গেছে। সব মিলিয়ে আমার কন্যা তার প্রবাসী বাবাকে কাছে পেয়েছে মাত্র নয়মাস। এখন তার বয়স নয় বছর! প্রবাসী জীবনের ইতিকথা, এইসব দিনরাত্রি প্রায় প্রতিটি প্রবাসীর নিয়তি।

আট বছর পর আমার দেশে যাওয়া। প্রথমবার মেয়ের স্কুলে যাওয়া। মুনতাহিনা ৪র্থ শ্রেণীর, তার ক্লাস তখনো শুরু হয়নি। আমাকে এক স্যারের কাছে নিয়ে পরিচয় দিচ্ছে আমার বাবা। আমার চোখে তখন অশ্রু টলমল করছিল, যেখানে আমি স্যার কে বলার কথা আমার মেয়ে মুনতাহিনা! প্রবাসী বাবারা দেশে পৌঁছাতে পৌঁছাতে - অধিকাংশ সময়ই দীর্ঘ বিরতির নিয়তিতে সন্তানের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এই অশ্রু আসলে বেদনা ও আনন্দের যৌথ অনুভূতি।

সেই ক্লাস টিচার আমাকে অফিসে গিয়ে বসতে বললেন। আমি অফিসের দিকে রওনা হলাম। মেয়েকে বললাম আসো বাবা। তার হাতে ছিল খাবের কিছু একটা। আমি গেটের সামনে থেকে তাঁকে ডাকছি, মুমতাহিনা না এসে একটু দূরে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম, সে তার হাতের খাবারটি খেয়ে তারপর অফিসের ভিতরে এসেছে। আমার কন্যার এই সামান্য কাজটিও আমার খুবই ভালো লেগেছে। প্রবাসী বাবা-দের সন্তানের সবকিছুই ভালো লাগে!

কিছু সময় অফিসে কথা বলে বিদায় নেওয়ার সময় সিএনজি কাছাকাছি এসেছে মুনতাহিনা। গাড়িতে বসা ছিল তার ছোটভাই মুসতাকিম। সে এখনো স্কুল যাওয়া শুরু করেনি। তার হাতে ১০০ টাকা ছিল। নিজের টাকা! আপু দিয়ে দিয়েছে কিছু খেতে। বন্ধন!

প্রবাসী বাবারা সন্তানদের বেড়েওঠা, স্কুলের খোঁজখবর নেওয়া মন চাইলেও হয়ে উঠে না। বছর পরপর খুব কম প্রবাসীর ভাগফ্যে জোটে দেশে যাওয়া। অধিকাংশই আমার মতো।

উন্নত জীবনের আশায় বাহিরে পড়ে থাকা প্রবাসীদের সন্তানেরা বেড়েওঠে বাবার আদর বিহীন মায়ের আঁচলে। প্রবাসে সুখের আশায় রক্তের বাঁধনের মানুষ গুলোকে পিছনে রেখে কষ্ট আর হাহাকার নিয়ে সুখের আশায় এই দৌড়ঝাঁপ দিতে দিতেই আমাদের জীবন নিভে যায়।

আট বছরে মাত্র একমাস দেশে, ছুটি শেষে ফিরে এসেছি নিজ কর্মস্থল জেদ্দায়। নিজের মা-বাবা আর সন্তানদের ও তাদের মায়ের কথা বারবার মনে পড়ে। যখন আকাশে বিমান ওড়ে আবারও চলে যেতে মন চায়। কিন্তু অল্প বেতনের চাকুরি করা ছেলেটি উড়তে পারেনা, কেবল চেয়ে থাকে। কবে মাস শেষ হবে বেতন হাতে পাবে, বছর কবে শেষ হবে দেশে যাবে।

প্রবাস জীবনে আজ অবধি অনেক চাহিদাই আল্লাহ পূরণ করেছে। একটাই কমতি ছিল, পরিবারের সাথে দৈনন্দিন সময় বিভিন্ন উদ্‌যাপন উপভোগ করে কাটানো। সেটাও কিছুটা পূরণ হয়েছে। পরিবার ছেড়ে ৬ হাজার মাইল দূরে মরুর দেশ সৌদি আরবে এসেছি একযুগেরও বেশি সময়। চলছে জীবন নামের আশায় বসতি প্রবাস-রেলগাড়ি। অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সার্বজনীন পেনশন স্কীম সেই আশার প্রদীপকে সবুজ-রঙ্গিন করেছে। প্রবাসীদের সার্বজনীন পেনশন স্কীম সফল হোক।


মুনতাহিনা ও মাসফি , ভাই বোন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ভোর ৫:০০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×