
চট্টগ্রাম শহর — দেশের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র, সমুদ্রবন্দরনির্ভর অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু এই শহরের মানুষ আজ উন্নয়নের ভারে ক্লান্ত। বোধশক্তি হওয়ার পর থেকেই দেখা যায় শহরের একটানা “উন্নয়ন” কার্যক্রম—রাস্তা খোঁড়া, ড্রেন নির্মাণ, ফ্লাইওভার, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ইত্যাদি। দিন যায়, মাস যায়, বছর পেরিয়ে যায়, তবুও যেন কাজের শেষ নেই।
বর্তমান বাস্তবতায় চট্টগ্রাম শহর বিশ্বের অন্যতম ধীরগতির নগরীতে পরিণত হয়েছে। এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টারও বেশি। অফিসগামী মানুষ সময়মতো কাজে পৌঁছাতে পারে না, শিক্ষার্থীরা ক্লাস মিস করে, অসুস্থ রোগী আটকে পড়ে যানজটে। উন্নয়নের গতিতে শহরের জীবন যেন থমকে গেছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সমন্বয়ের অভাব। একটি সংস্থা রাস্তা সংস্কার শেষ করলেই আরেকটি সংস্থা একই জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাজ শেষ না হতেই ওয়াসা পানি লাইনের অজুহাতে খনন শুরু করে; তাদের পর আসে বিদ্যুৎ বা টেলিফোন বিভাগ। এক প্রকল্পের পর আরেক প্রকল্প, অথচ কোনোটিই স্থায়ী সুফল দেয় না।
রাস্তা প্রশস্ত করার নামে দু’পাশে খনন করে রেখে দেওয়া হয় কোমরসমান গর্ত, মাসের পর মাস ঠিকাদারদের দেখা মেলে না। জনদুর্ভোগে নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এতে শুধু সময় নয়, নষ্ট হয় কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদও।
অর্থনীতির ভাষায় উন্নয়ন তখনই সফল, যখন তা মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটায়। কিন্তু চট্টগ্রামের চিত্র তার উল্টো। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বেকারত্ব দুই দিক থেকেই সাধারণ মানুষ দিশেহারা। নুন আনতে পানতা ফুরায়, অথচ এক শ্রেণির মানুষ রাতারাতি বিত্তবান হয়ে যাচ্ছে। সরকারের মুখে উন্নয়নের বড় বড় বুলি, কিন্তু মাঠে নামলে বাস্তবতা ভয়াবহ।
চট্টগ্রামের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যদি সঠিক সমন্বয়, জবাবদিহিতা ও পরিকল্পনার আওতায় না আসে, তবে এই শহর উন্নয়নের নয়, বরং ‘দুর্ভোগের শহর’ হিসেবেই ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। এখনই সময় উন্নয়নের গতি নয়, দিক পরিবর্তনের — যেখানে মানুষই হবে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




