somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিশাপে লাভ ক্ষতি পর্ব ০২

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভিশাপে লাভ ক্ষতি পর্ব ০১
Click This Link


শরিফ নিজের গ্রামে উঠার চিন্তাও করে না। সে উঠে পাশের গ্রামে তার খালার বাড়ী। খালার বাড়ী উঠেই, সে খালুকে হাতে নেয়ার জন্য খালুকেই বলে আমার কলেজের সামনে বাজারে মেইন রাস্তার লগে জমি দরকার। খালু ভাবে আরও অনেক কিছু। তা ছাড়া শরিফের খালা এখন শরিফ শরিফ কইরা পাড়া মহল্লা তুইল্লা নিছে। শরিফের সাথে কোন খেলা খেলার সুযোগ নেই। আর তাছাড়া পাড়ায় শরিফের খালু হাজী কলিমের একটা নাম ডাক আছে।

শরিফকে খালু নানা যায়গা দেখায়। কিন্তু শরিফের মন ধরলো খালুর নিজের পেয়ারের একটা জমি। রাস্তার পাশে কলেজের সামনে। শরিফ কয় খালু আমি যতটুকু জমি চাই ঐডা বিক্রি করার পর মানুষ খালি চোখে বুজতে পারবো না যে আপনার জমি এক দুই ছটাক কমছে। আমি ছোট একটা মার্কেট দিমু। মার্কেটের জন্য যতটুকু জমি দরকার তার থিকা এক গিব্বা বেশী জমি আমার দরকার নাই।

হাজী কলিম ভাবে মার্কেট তো বেডা আমারো দিবার মন চায় কিন্তু সব ক্যাশ টাকাতো নতুন ধান্দায় ঢাইলা দিলাম। নে জমি নে আমি যতটুকু জমি বিক্রি করুম এর বেশী তো তুই পাবিনা। পরে হাতে টাকা আইলে তোর ঐ এককাডি সাইজের মার্কেটের সামনে আমি তাজ মহল বানামু। এই ফাঁকে দেইখা নেই তোর মার্কেট হাউজ ফুল হয় না হাঁপানি রুগী হয়। আবার একটু নরম হয় হাজী কলিম তার ঐ ভাবনাটার জন্য।

দেহ আমি জমি বিক্রির নিয়তে নাই। তুমি কইলা ছোট মার্কেট করবা মার্কেটের বাইরে এক হাতো জমি তোমার দরকার নাই ঠিক আছে নাও। সামনের সপ্তাহের পরে কাগজ কলম করুম নে।



ছোট জমি ছোট মার্কেট। দুই তলা হয়ে গেল চোখের পলকে। কোন কোন দিন শরিফ সারা দিনের গোসল সে রাত ১২টায় করেছে।প্রথম তলায় ষ্টেশনারী, কনফেকশনারি, দর্জিঘর ও কাপড়ের দোকান দিল। দোতলায় তার অফিস আর কোচিং সেন্টার। দু তলার ছাদের উপর সে বাঁশ ছন টিন দিয়ে রেস্টুরেন্ট করলো। নাম দিন ছনঘর রেস্তোরা। ছন ঘর রেস্তরায় সে জানালায় কোন কপাট রাখলো না। পাছে কেউ অভিযোগ তুলে যে শরিফের রেস্তোরায় মেয়েরা ছেলেরা নষ্টামি করে। শরিফের মার্কেটের সামনে যদি কোন একটা তিন তলা বাড়ী বা মার্কেট থাকতো বা কক্ষনো হয় তবে তারা যাতে দেখতে পারে যে শরিফের রেস্তোরায় ইসটুডেনদের আড্ডাবাজী বাদে অপবিত্র কিছুই হয় না। শরিফের প্লান সুদূরমুখী। শরিফ একজায়গা থেকে ধাক্কা খেয়ে আসছে নিজ জেলায় নিজ ইউনিয়নে যদি ধাক্কা খায় তাহলে ওর লাইফে জীবন বলে আর কিছু থাকবে না।

শরিফের মার্কেট দেখে যখন খালার চোখ জড়িয়ে যাচ্ছিল। বোনের ছেলেকে নিজের ছেলে ভাবা শুরু করছিল। তখন হাজী কলিমের কাছে তার মেয়ে শাবানার জন্য, জেলার মাথা যিনি তার ডান হাত না হলেও বাম হাত জনাব সোবহান চৌধুরীর ছেলের জন্য প্রস্তাব আসে। শাবানার বিয়েতে শরিফ কম দৌড়ায় নাই। নতুন আত্মীয় হল তার উপর হেডম ওয়ালা। শরিফের তো তাই চাই। শরিফ নতুন আত্মিওদের দেখায় তার মার্কেট। দুই তলার উপর বাঁশ ছন টিনের রেস্তোরা আবার সেই রেস্তোরায় হালকা বিলাতি মিউজিক বাজে। লাল নীল বাত্তির আলো পুরা ফ্লোর ধইরা দৌড়ায়। বর্ষার দিনে তিন তলার উপর টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আর ইসটুডেন গো আড্ডা কেমন একখান সিনারি যে হইবো।

নতুন কুটুম্বদের অনেক পছন্দ হয় কিন্তু পছন্দ হইতাছে না শুধু হাজী কলিমের।

হাজী কলিমের প্লান ছিল শাবানারে শরিফের কাঁধে চাপাইয়া দেয়া যায় কিনা কিন্তু এখন তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। হাজী কলিমের মনে হয়, যেন শরিফের কাছে বেচা জমি, পথ হারিয়ে যাওয়া বাচ্চার মত কাঁদছে আর সেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পারা সত্যেও হাজী কিছু করতে পারছে না। মার্কেটটাকে এখন মনে হয় বুকের উপর একটা জগদ্দল পাথর। শরিফের উপর সরাসরি কিছু বলাও যাবে না কারন শরিফের খালার মুখে এখন নতুন বুলি আমার যদি আরেক খান মাইয়া থাকতো তাইলে আমি শরিফের হাতে গোছাইয়া দিতাম। শাবানার বিয়ের পর শরিফের প্রতি ওর খালার খেয়াল রাখার ঝোঁকটা যেন আরও বেড়ে গিয়েছে।

হাজী কলিমের মনে পরে শরিফের বাপের সাথে তার আছিল দোস্তির সম্পর্ক তারপর হল ভায়রা ভাই। এই দোস্তি এই ভায়রা ভাই যাই সম্পর্ক থাকুক তাদের মাঝে একটা ঠাণ্ডা যুদ্ধ ছিল সব সময়। হাজী কলিমের বাপ সেই ছোট বেলায় মারা যায় তাই তাদের পরিবার সব সময় ছিল বেকায়দায়। আর এই জোড়েই শরিফের বাপে আগাইয়া থাকতো, কি সিনেমা হলে কি তাসের আসরে সব যায়গায় গরম থাকতো। সেই গরম পরে আর ছিল না কিন্তু সেই আদি গরম শরিফে ঢাকায় থিকা নতুন কইরা নিয়া আইছে। যাক শাবানা জেলার তিন নাম্বার বাড়ীর বউ এহন। সাপও মরতে হইবে লাঠিও ভাঙন যাইবো না।



বাজারে নাকি আরেক্ষান মসজিদ হইবো। রেল লাইনের পাশে যেই ডোবাটা আছে রেল ওয়ের হেইডায়। রহিম মিয়া ওর নিজের জমিতে পুকুর কাটবো হেই মাটি দিয়া নাকি রেলওয়ের ডোবা ভরাট করা হবে। আরে রহিমের কাটা পুকুরের মাটি দিয়া নাকি ভরাট হবে। কে আমরা কি আন্ধা? হে রেইল ওয়ের জমিতে ডোবা হইলো ক্যামনে? এই ডোবা কি রেইল ওয়ের অফিসাররা কান্ধে কোদাল মাথায় টুকরী লইয়া আইয়া কইরা দিয়া গেছে? রহিমের ছোড চাচার শালার ঘরের মাইয়ার ভাসুর গিয়াসুদ্দিন, মাইন্সে কয় গজা, হেই গজায় দিন দুপুরে রেইল ওয়ের মাটি ডাকাতি কইরা, হেই মাটি দিয়ে ঘর বানায়। গজা রে তহন কে কি কইবো। গজায় কিছু দিন আগে পুলিস ম্যানেজ কইরা লাল নিশানরে লাল সালাম দিয়া মাত্র আইছে।

যার কাছে পুলিশ ম্যানেজ! দিন দুপুরে পুকুর চুরিতে হেরে কে কি কইবো ?

হেই গজার ছোট ভাইয়ের বউয়ের বাপের দুলাভাইয়ের ভাতিজা রহিম তার পুকুরের মাটি দিয়া ভরাট করবো ডোবা। ভালোই গজারা ডোবা বানাইবো রেইলের জমি, রহিমরা রেইলের ডোবা ভরাট কইরা মসজিদ বানাইবো! এই সব পুকুর চুরি আল্লাই কি দেহেনা, মানুষ কি বুঝেনা?

বাজারেই তো একটা মসজিদ ছিলই। কেয়ামতের আগে মসজিদ বাড়বো আর মুসুল্লি কমবো। ঐ তোরাই ক মুসুল্লি কি বারছে? কেয়ামত রে আমরাই টাইনা হেঁচড়াইয়া আগে ভাগে নিয়া আইতাছি। রহিম মিয়ারে আমার ভায়রা বেডা বুঝায়, আপনের পোলাডা 'আরে আধ পাগলা পোলাডা যেই ডা মারা গেল গত সালে' তো শরিফ বুঝায়' আপনের পোলা ডা অল্প বয়সে মরলো! তো পুকুর কাটছেন নিজের কামে আইবো, পাড়া প্রতিবেশি গো কামে আইবো বছরের পর বছর আর পুকুর কাটা মাটি বেইচা কয় টাকা আর আইব তা কয় দিন আর খাইবেন? আপনার পোলার নামে মাটিগুলা আল্লার কাছে ছইপা দেন।

আমি বাজারের আদি মসজিদের সভাপতি আমারে না জিগাইয়া! আমি তো ওর খালু। হে হইবে নতুন মসজিদের সভাপতি, রহিম হবে সহ সভাপতি। কে আমারগো মসজিদে কমিটি মেম্বার হইলে কি হেগো ইজ্জত কইমা যাইব?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×