somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কেমন ভাষায় কথা বলছে বাংলাদেশের আদালত?

২৪ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দেশ থেকে>>>>>>>>>
Click This Link
এ কেমন ভাষায় কথা বলছে বাংলাদেশের আদালত?
অ্যা ড ভো কে ট ন য় ন খা ন
সাম্প্রতিককালে হাইকোর্টে বিচারপতিদের ভাষা প্রয়োগ দেখে বাংলাদেশের আদালত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আগের সব ধারণা পাল্টে গেছে। বিচারপতিদের মুখ দিয়ে আগে কথা বের করতে আইনজীবীদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হতো। দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো তাদের পরিমিতিবোধ ও নীতিগর্ভমূলক বাক্য-বাণী শুনতে। সবাই পিনপতন নীরব হয়ে তাঁদের কথা শুনতেন।
আর এখন? বিচারপতিদের কথার চোটে অভিজ্ঞ কৌঁসুলীদেরই আদালত ত্যাগ করতে দেখা যায়।
নামকরা লেখক, গুণীজন সৈয়দ আবুল মকসুদকে আদালত যা শুনিয়েছেন তা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। এই যদি হয় মানুষের দুনিয়ার সর্বোচ্চ স্থানের প্রভুদের কথাবার্তা, তাহলে সে দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের আর আইনবিদ্যা শেখাবেন না।
মার্চ ৪, ২০১১ তারিখে বিভিন্ন পত্রিকায় আদালত কর্তৃক যে ভাষার প্রয়োগ উল্লেখ করা হয়েছে তা রীতিমত ভয়ঙ্কর।
আদালত জনাব মকসুদকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘একটা অশিক্ষিত-বর্বর লোকের দ্বারাই এমন কাজ সম্ভব।... এমন একজন অশিক্ষিত, নির্বোধ লোক বুদ্ধিজীবী হলে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কী? ... ‘লেখাপড়া করে আইনজীবী হতে হয়। কয়েক বছর চর্চা করে হাইকোর্টের সনদ নিতে হয়। তারপর বিচারপতি হতে হয়। অথচ উনি কিছু না জেনেই হরিদাস পাল হয়ে গেছেন। কোর্টকে শেখাতে আসেন।’ ... ‘গান্ধী সাজতে চান! গান্ধীজির নখের সমান বুদ্ধিও তাঁর নেই।’ আদালত আবুল মকসুদের ব্যাপারে আরও ক্ষুব্ধ ভাষা ব্যবহার করতে থাকলে ড. জহির এক পর্যায়ে আদালত থেকে বেরিয়ে যান। আদালত বলেন, এ ধরনের বুদ্ধিজীবীদের জন্যই দেশের আজ এ অবস্থা।
ঘটনার বিবরণে আমার দেশ, কালের কণ্ঠ ও প্রথম আলো মার্চ ৪, ২০১১ তারিখে মোটামুটি এভাবে লিখেছে—
মহাস্থানগড়ের মাজারসংলগ্ন মসজিদ রক্ষার জন্য হাইকোর্টে অপ্রাসঙ্গিক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয় কি না তা খতিয়ে দেখতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনারকে (ডিসি) এ বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সৈয়দ আবুল মকসুদকে আদালত অবমাননার অভিযোগে গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এছাড়া আগামী ১৩ মার্চ সৈয়দ আবুল মকসুদকে আবারও আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল সকালে সৈয়দ আবুল মকসুদ আদালতে হাজির হলে আদালত গত বুধবারের মতো তাকে তিরস্কার করেন।
আদালত সৈয়দ আবুল মকসুদকে উদ্দেশ করে বলেন, তিনি রাষ্ট্র ও সমাজের একজন শত্রু। নির্বোধ একটি লোক, এত বড় আহম্মক গান্ধী কী লিখেছেন তার কিছুই পড়েনি। অশিক্ষিত লোক বুদ্ধিজীবীর পোশাক ধারণ করলে দেশের কী অবস্থা হবে। তিনি আবার কলাম লেখেন। আমি গাফ্ফার চৌধুরী ও এবিএম মূসাকে বলব, আপনারা বিদায় নেন। এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী কী লিখেছে তা দেখতে হবে, ষড়যন্ত্র হয়েছে কি-না। সে আগুন জ্বালাতে বলেছে, এ সরকারের পতন ঘটাতে বলেছে। আদালত অবমাননা এখানে মামুলি ব্যাপার। বড় পণ্ডিত। বড় হরিদাস পাল। আমার কাছে দাবি জানাচ্ছে, আমাদের শেখাচ্ছে। হাসিও পায়, কান্নাও আসে। একটা অশিক্ষিত, মূর্খ লোক থেকে আমাদের শিখতে হবে—আমরা কী পারি আর কী পারি না। বছরের পর বছর ধরে আইন শিখে একটি অশিক্ষিত লোক থেকে শিখতে হবে। দুই দিনের বৈরাগী ভাতেরে বলে অন্ন।
এ পর্যায়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান আদালতকে বলেন, আদালত মহাস্থানগড় রক্ষার জন্য আদেশ দেন।
আদালত বলেন, সাংবাদিকদের কাছে আদেশের সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করুন। আদালত মসজিদ ভাঙার ব্যাপারে কোনো আদেশ দেননি। আদালত এমকে রহমানকে বলেন, এটি লিখতে তাকে কেউ বলেছে কি-না জিজ্ঞাসা করুন।
তখন এমকে রহমান সৈয়দ আবুল মকসুদকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনাকে কি কেউ লিখতে বলেছে?
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কেউ বলেনি। নিজেই লিখেছি।
এ সময় গত ১৫ জানুয়ারির দৈনিক যুগান্তরের একটি রিপোর্ট এমকে রহমান মহাস্থানগড়ের প্রত্নসম্পদ রক্ষা করা সম্পর্কিত আদালতের আদেশ পড়ে শোনান।
তখন আদালত বলেন, হি ইজ থরোলি ইল্লিটারেট ম্যান। সে কতদূর লেখাপড়া করেছে জিজ্ঞাসা করুন। আমি মসজিদকে ঐতিহ্য বলেছি, সে বলেছে উল্টো। সে যুগান্তরের রিপোর্ট দেখাচ্ছে। সে কি মূর্খ লোক, বাংলাও কি বোঝে না?
এ সময় সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ড. এম জহির আদালতকে বলেন, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি একজন সত্ ও ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ। তখন আদালত বলেন, তিনি চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন। ড. এম জহির বলেন, মসজিদ ভাঙলে তো আগুন জ্বলবে? না ভাঙলে জ্বলবে না।
তখন আদালত বলেন, তিনি আমাকে বলেছেন আপনি উপলব্ধি করতে পারেননি। শোনেন ড. জহির, অশিক্ষিত না হলে সে এটি লিখতে পারে? সে আমাদের শেখাচ্ছে, আমরা কী পারি আর কী পারি না। তার এই লেখা সারা দেশে একটি বিদ্রোহ সৃষ্টি করতে পারত। একে আমরা ছাড়ব না। তাকে জানতে হবে, আমরা কী করতে পারি। সে চায় দেশে আগুন জ্বলুক। তখন ড. এম জহির বলেন, এসব বললে তো অর্ডার দিয়ে দিচ্ছেন। তখন আদালত বলেন, ড. জহির, সে আমাদের লাইফ রিস্কে ফেলেছে। পাকিস্তানের একজন মন্ত্রীকে মৌলবাদীরা গুলি করে হত্যা করেছে।
তাকে বলেন উকিল ধরতে, আমরা তাকে ছেড়ে দেব না। যেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেল অনুরোধ করেছেন তাই আজকের মতো ছেড়ে দিচ্ছি। তবে আর পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
এরপর বেলা ১টার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বিশেষ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে গতকালের মতো অব্যাহতি দিয়ে আবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশের ক্ষতি করলে আমাকে জুতা মারুন। কিন্তু এভাবে অপদস্ত হতে হবে? যে ভাষায় গালি দেয়া হলো, এত গালি এই শেষ বয়সে এসে শুনতে হলো? আমি অসুস্থ মানুষ, দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। শেষ বয়সে আমার ভাগ্যে এত কিছু ছিল কল্পনাও করিনি।
আগের দিন সৈয়দ আবুল মকসুদ হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে হাজির হয়েছিলেন। বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পরিবেশ রক্ষার দাবিতে করা একটি রিটের শুনানির সময় আবুল মকসুদ হাজির হয়ে বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর কাছে একটি আবেদন জানান।
আবেদনে বলা হয়, ‘সীমাহীন উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ওই মামলার শুনানিকালে এবং কয়েক দিন আগেও একই মামলার শুনানিতে আপনি (আদালত) মহাস্থানগড়ে হজরত সৈয়দ সুলতান মাহমুদ মাহী সওয়ারের মাজার প্রাঙ্গণের মসজিদটি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যায় কি-না, সে পরামর্শ চেয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। আদালত সাড়ে চারশ’ বছর আগের মাজারটি সরানোর কথা বলেননি। মসজিদ হোক, মন্দির হোক, প্যাগোডা হোক বা গির্জা হোক, ভেঙে সরিয়ে নেয়ার ঘটনা উপমহাদেশে নেই। মাজার প্রাঙ্গণের শতাধিক বছরের পুরনো মসজিদটি প্রত্নসম্পদেরই অংশ। আপনার মতো বিজ্ঞ বিচারক এ কথা নিশ্চয়ই জানেন যে, পৃথিবীর কোনো দেশের আদালতই সব ব্যাপারে বক্তব্য দেয়ার অধিকার রাখেন না। যেমন, কোনোদিন কোনো দেশের আদালত বলতে পারেন না ধর্মনির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব পুরুষকে খতনা করতে হবে অথবা করার প্রয়োজন নেই।’
সৈয়দ আবুল মকসুদ আবেদনে বলেন, ‘আপনি উপলব্ধি করতে পারেননি যে, ওই প্রাচীন মসজিদ ভেঙে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে নতুন করে বানাতে উদ্যোগ নিলে গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় আগুন জ্বলবে। সে আগুন নেভানোর সাধ্য সরকারের কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর থাকবে না। পরিণামে বিপুল ভোটে নির্বাচিত এই সরকারের পতন ঘটবে। শুধু তা-ই নয়, চিরকালের জন্য আওয়ামী লীগের ও মহাজোটের অন্য শরিকদের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। মসজিদ ভেঙে সরানোর কথা বলে আপনি ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে একটি বড় অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার জন্য আমাদের মন্দির-মসজিদের ওপর আঘাত হানার প্রয়োজন পড়ে না। একজন নাগরিক হিসেবে আমি আপনার কাছে বিশেষ দাবি জানাচ্ছি, আপনার ওই বক্তব্য ও নির্দেশ প্রত্যাহার করুন এবং দেশকে সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন।
এই পর্যন্ত ছিল সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেবকে নিয়ে খবরটি। এবার একটু পেছনে ফেরা যাক।
বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেয়ার পরপরই ৩১টি ডিভিশন বেঞ্চ পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ ২৪ অক্টোবর ২০১০ থেকে কার্যকর হয়। বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী এবং বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ রাজউক, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ সংক্রান্ত সব রিট মোশন নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়।
ওই বেঞ্চ গঠন হওয়ার পর থেকে আমরা এর পেছনের কিছু কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত আকারে পর্যবেক্ষণ করতে পারি।
এক. জিয়া বড় অন্যায়কারী : আদালত
‘এরশাদ অন্যায় করলেও জিয়া করেছেন গুরুতর অন্যায়। তিনি পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী করাসহ একই ধারার অনেককে পুনর্বাসিত করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন।’ (বিডি ২৪, আগস্ট ২৬, ২০১০)
দুই. ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে রিট খারিজ
কুড়িগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যার ঘটনায় করা রিট আবেদন উপস্থাপন করা হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। (প্রথম আলো, ২৬ আগস্ট, ২০১০)
তিন. বাংলাদেশ এখন ধর্মনিরপেক্ষ। বাংলাদেশে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না। (অক্টোবর ৪, ২০১০)
বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে স্বেচ্ছায় ধর্মীয় পোশাক পরলে তাকে বাধা দেয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত। আজ (সোমবার) বিচারপতি এএইচএম শামসুি্দ্দন চৌধুরী এবং বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের ফলে বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চার নীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। চার মূলনীতির একটি ধর্মনিরপেক্ষতা হওয়ায় ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য করা সংবিধানের লঙ্ঘন বলে রায়ে বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ এখন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র’ বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক স্বতঃপ্রণোদিত রায়ে এ অভিমত দেন।
চার. সাবেক সচিব আসাফউদ্দৌলা কাঠগড়ায় (নয়া দিগন্ত, ২০ আগস্ট, ২০১০)
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে আসাফউদ্দৌলা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে চার ঘণ্টা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন। সাবেক সচিবকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, তিন বছর জেলা জজ হিসেবে কাজ করে আপনি মনে করেন সব জানেন।এরকম লিখতে থাকলে তালিকা দীর্ঘ হতেই থাকবে। অনেক ওসি-ডিসিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে অশ্লীল বাক্যবাণের কথা আর লিখলাম না।
প্রধান বিচারপতিকে বিচারপতিদের যোগ্যতার দিকে মনোযোগী হতে হবে। নইলে বিচার ব্যবস্থা নামক বস্তুটি যাইবা আছে সেটুকুও আর টিকে থাকবে না। প্রধান বিচারপতি টেরও পেয়েছেন মনে হচ্ছে।
দৈনিক সমকাল জানায়, এবিএম খায়রুল হক গত ৫ মার্চ, ২০১১ একটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আজকাল যে মানের রায় দেয়া হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে বিচারকদের দক্ষতা ও আইনগত তথ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রায়ই বলে দেবে আপনি কী মানের বিচারক। আইন কোথায় কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটা শিখতে হবে।’ এছাড়াও তিনি উপদেশ দেন, ‘অনুশীলন, পড়াশোনা ও ক্রমাগত রায় লেখার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সবাইকে সাহিত্য ও ইতিহাসের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ন্যায়বিচার করা কঠিন কাজ, সহজ নয়।’ প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই মন্তব্যগুলো করেন।
রাজনৈতিকভাবে বিচারপতি নিয়োগ দিলে এর ফল শুভ হয় না। সবাই মাথা থেকে রাজনীতির দুষ্ট ক্ষত সরাতে পারেন না।
৯ এপ্রিল ২০১০ আমার দেশ লিখেছে, ‘বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী হলেন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বর্তমান বিচারপতি। গত ১ এপ্রিল রাতে পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ড মেমসাব রেস্টুরেন্টে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আওয়ামী লীগ নেতা এবং আওয়ামী ঘরানার আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শুধু তাই নয়, একটি আলোচনা সভায়ও যোগদান করেন। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান মিনারের সভাপতিত্বে ব্যানার টানিয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি, রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ নানা প্রসঙ্গ স্থান পায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরী, মুখ্য আলোচক ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর। হাইকোর্টে কর্মরত বিচারপতির উপস্থিতিতে এ ধরনের সভার খবর এটিএন বাংলা ও চ্যানেল এসসহ মিডিয়ায় প্রচার পায়। ওই বৈঠকের ছবিও লন্ডন থেকে বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে এসে পৌঁছে। ছবিতে দেখা যায়, ডানের সারিতে সর্বপ্রথমে বসে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হাসেম, এর পরই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবীর, এরপর বসে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি সুলতান শরীফ, চতুর্থ স্থানে বসে আছেন বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন।
বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনকালে সুপ্রিমকোর্টে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগে সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে তাকে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি। এতে তিনি বিচারপতি পদ থেকে বাদ পড়েন। ফিরে আসেন আইন পেশায়। তবে স্থায়ী নিয়োগ না দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি মামলা করেন। হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।’
সাধারণ মানুষের আদালতের প্রতি ভালো ধারণা ফিরিয়ে আনতে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সব আইনজীবীকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
লেখক : সিনিয়র আইনজীবী, মিশিগান। ই-মেইল : [email protected]
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×