somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীরবতা (ছোটগল্প)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীরবতা এক ধরণে ক্ষোভ, যেটা জমতেই থাকে, জমতেই থাকে। আর যতো জমে ততো ক্ষোভ বাড়ে, ততো নীরবতা বাড়ে। এটা আমার অভিজ্ঞতা। আপনারা যারা অন্যের জীবনে উঁকি দিতে পছন্দ করেন, আসুন, চা-কফি নিজ দায়িত্বে নিয়ে বসুন, আমি আপনাদেরকে নীরবতা আর ক্ষোভের কথা বলি। তবে আগেই বলে রাখা ভাল, সোজা করে একটা গল্প বলে দিতে আমি বসিনি। এটা নিশ্চয়ই আশা করা উচিত হবে না, কারো গোপন কথা অশ্লিলভাবে চাকুম চুকুম করে গিলবেন!
কাজেই ঠারে ঠোরে আর ইঙ্গিতে যা বলার বলবো। বুদ্ধি থাকলে বুঝে নেবেন, না থাকলে, খোদা হাফেজ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। দুঃখিত, যদি বলার মধ্যে বিনয় না-থাকে। বিনয় জিনিসটা আসলে এখন আমার কাছে ভন্ডামি আর ছলচাতুরির মামতো বোন। ‘সোনা, লক্ষ¥ীটি, জান আমার,’ এই সব বলে বলে স্রেফ কাজ আদায় করে নেয়ার ছেনালি আর কতো!
একটা জীবনের লক্ষ্য কী? প্রেম, সেক্স, মাতলামি? এ সব আপনি বুঝবেন না? কারণ এক সাথে থাকার নামে ২৪ ঘণ্টায় ক’ঘণ্টা আসলে এক সাথে ছিলেন সঙ্গিণীর সঙ্গে। রাতের ঘুম, দিনের অফিস, ঘরে ফিরে অন্যের সাথে মোবাইলবাজি, এরপর বাকী থাকে কি? ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা? বিরক্ত হয়ে ওঠে যাওয়া। মাসে একদিন কেবলই যৌন মিলন, দ্রুত পতন আর গোসল।
নোরা এখন অনেক এগিয়ে গেছে। এখন হেলমার বলছে, ‘বসো, আমাদের কথা বলা উচিত। মুখ বুজে অনেকদিন সং-সার সয়েছি আমি। এবার কিছু কথা বলা দরকার। তোমার কি মনে হয় আমাদের এক সাথে থাকা উচিত?’
- এ সব কী বলছো!
- ঢং করে কথা বলো না। নাকে সুর দিয়ে আল্লাদ করলেই জীবন চলে না।
- এভাবে কথা বলছো কেন?
- আবার সিনেমা করে! ধুত্তর মাগী, তিন তালাক।
- অসভ্যতা করো না। কী সব গ্রাম্যতা হচ্ছে! টেল মি হোয়াট ইজ ইউর প্রবলেম?
Ñ গ্রামের মেয়ে ছিলে তুমি। পুরো মুখটার মধ্যে সরলতা ছিলো। রাঁধতেও পারতে, চুলও বাঁধতে পারতে। মনে হয়েছিলো, তোমাকেই খুঁজছিলাম। কিন্তু তুমি যে মারা গেছো তুমি তা জানো?
- আবার আঁতলামি! এসো তো খাবে?
- খাবো? কী খাবো, বিষ? তুমি কি জানো আলসার পেসেন্ট সময় মতো না-খেলে কী হয়? সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙে আমার, তারপর দশটা পর্যন্ত নাস্তার অপেক্ষা। বিকালের নাস্তার কথা বাদ দিলাম, দুপুরে বাইরে খাই বলে রক্ষা। বুয়ার শরীর ভাল থাকলে রাতের খাবার টাইমলি পাই। নইলে রাত দশটায় ঘরে ফিরে এগারটা নাগাদ রান্নাঘরে খুটখাট চলতে থাকে। ততোক্ষণে শুধু পেটে নয়, মগজেও এসিড জমে যায়।
- ও, তাহলে এই সমস্যা। তুমি আমাকে অভিযোগ করছো? আজকের যুগের পুরুষ হয়ে টিপিক্যাল স্ত্রী চাও?
- অন্তত, আধুনিক স্ত্রী চাই না, এটুকু জানি।
-তুমি কিচ্ছু জানো না। তুমি আসলে একটা কনফিউসড হিপোক্রেট...
- আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি, তুমি তা দেখতে পাও? আমাকে চারিদিক থেকে নৈরাশ্য গ্রাস করছে। আমার ছোট ভাইদের ফ্ল্যাট আছে, গাড়ি আছে...
- তুমি কখনো এ সব চাওনি...
- চেয়েছিলাম, লেখক হতে, কই তাও তো হতে পারিনি।
- তুমি অলস, কাজ করো না।
- কাজ, ঠিক বলেছো, আমি কাজ করি না। দুইটা চাকরী করতাম। একটা ছাড়লাম, কারণ তোমাকে সময় দিতে চেয়েছি। আর এদিকে তুমিই দুইটা চাকরী নিয়ে বসে রইলে।
- আমার সংসার চালাতে হবে, বাবা-মা-ভাই-বোন, তুমি তো এ সব জানতে...
- তথ্যগুলো জানতাম। কিন্তু বাস্তবতা যে এতোদূর গড়াবে জানতাম না।
- বাদ দিতে চাই। সব কিছু বাদ দিতে চাই। না ভাঙলে কিছু তৈরী হবে না।
- মানে?
- তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।
- বুঝেছি, এখন তো বলবেই, এখন আমার বয়স হয়ে গেছে, শরীর ঝুলে গেছে, এখন তোমার...
- ছিঃ, কী নোংরা আর কুৎসিত! তোমাকেই আমি ভালবেসে ছিলাম!
এরপর আর আলোচনা চলে না। উঠে চলে যাই। বারেক দুয়েক উঁকি দিয়ে দেখি, চোখ ঘষছে নোরা। নারীবাদীরাও কী কাঁদতে জানে? কাঁদুক। আজকের রাতটাই। কাল সকালেই সে চিটাগাং চলে যাবে। প্লেনে যাবে, প্লেনে আসবে। কী যেন ছাইপাশ সেমিনার আছে ওর। বড় অধ্যাপকদের সাথে উঠবে বসবে আরও কি কি কে জানে! কালই ভুলে যাবে সব। আবার আরেকদিন হয়তো কখনো ক্ষোভের প্রকাশ করবো।
কিন্তু তার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিরবতা জমবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×