somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দাসত্বের জন্য লড়াই করো না! স্বাধীনতার জন্য লড়াই করো!" - চার্লি চ্যাপলিন এর জনপ্রিয় "দ্য গ্রেট ডিক্টেটর" (১৯৪০) ছবির সেই বিখ্যাত ভাষণ!

১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুঃখিত, আমি কোন সম্রাট হতে চাই না। সেটা আমার জন্য নয়। আমি কাউকে শাসন অথবা জয় করতে চাই না। আমি অবশ্যই ইহুদী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, পারতপক্ষে সবাইকে সাহায্য করতে চাইবো। মানবজাতির বিশিষ্ট হল আমরা সকলেই একে অন্যকে সাহায্য করতে চাই। আমরা সবাই একে অন্যের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়ে পাশে থাকতে চাই। আমরা একে অপরকে ঘৃণা আর অশ্রদ্ধা করতে চাই না। পৃথিবী অনেক সমৃদ্ধ এবং এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে, এবং পৃথিবী সবাইকে সমান সুবিধা দিয়েছে। এখানে জীবনের চলার পথ সুন্দর বাধাহীন। কিন্তু আমরা সে পথ থেকে দূরে সরে এসেছি।

লোভ আমাদের পবিত্র আত্মাকে বিষাক্ত করে তোলেছে, পৃথিবী ঘৃণার শৃঙ্খলে হয়েছে অবরুদ্ধ, আমাদের ধাবিত করেছে নির্বোধ দুর্বিপাক এবং রক্তক্ষয়ের মাঝে। জীবনমান উন্নয়নে এসেছে গতিশীলতা, কিন্তু নিজেদের মানবতাবোধ ও মুক্ত ধারার চিন্তা চেতনাকে করেছি রুদ্ধ; প্রযুক্তির প্রাচুর্য আমাদের আরও লোভী করে রেখেছে। আমাদের অর্জিত জ্ঞান আমাদের করেছে শুধু পরের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধানে অভ্যস্ত ছিদ্রান্বেষী, এবং আমাদের চাতুরটা নির্মম ও নিষ্ঠুর। আমরা অনেক বেশী চিন্তাশীল কিন্তু আমাদের অনুভূতি অতি নগণ্য। প্রযুক্তি আর যন্ত্রপাতির চাইতে আজ আমাদের মানবতার, চাতুরটার চাইতে উদারতা ও নম্রতার অত্যন্ত প্রয়োজন। এসব গুণহীন জীবন হয়ে ওঠে হিংসাত্মক এবং সবকিছু হবে নিঃশেষ। প্রযুক্তি বিশ্বকে তথা মানবজাতিকে আজ কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। সে উদ্ভাবনই আজ হাহাকার করছে মানবতার জন্য, চিৎকার করছে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের জন্য; আমাদের সকলের ঐক্যের জন্য।

আজও আমার কণ্ঠস্বর বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, লাখো হতাশ নারী, পুরুষ আর শিশু আজ প্রচলিত এক সমাজ ব্যবস্থার বলি, যা তাদের পীড়িত করে এবং রুদ্ধ করে নিরপরাধ জনগণকে। সেইসকল মানুষ যারা আমাকে শুনতে পারছেন তাদের বলছি - নিরাশ হবেন না। যে দুর্গতি আজ আমাদেরকে ঘিরে ধরেছে তা আর কিছু নয়, আমাদের লোভেরই প্রতিফলন; সেইসব কটু মানুষের তিক্ততা যারা মানুষের প্রগতি নিয়ে ভিত। মানুষের ঘৃণা লোপ পাবে আর স্বৈরাচার নিপাত যাবে, এবং যে ক্ষমতা তারা মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল, তা পুনঃস্থাপিত হবে, এবং আমৃত্যু মানুষের স্বাধীনতা কখনোই লোপ পাবে না।

বীর যোদ্ধারা! নিজেদেরকে জানোয়ারদের কাছে সপে দিও না, যারা তোমাদের তাচ্ছিল্য করে, ক্রীতদাস করে রাখে; তারা তোমাদের জীবনযাত্রা করে নিয়ন্ত্রিত, হুকুম করে কি করতে হবে, কি ভাবতে হবে আর কি অনুভব করতে হবে! তারা তোমাদের অত্যাচার করে, শোষণ করে, পশুর ন্যায় আচরণ করে, ব্যবহার করে যুদ্ধে অপচয়যোগ্য মূল্যহীন সৈনিকের মত! নিজেদেরকে ঐসব ভয়ঙ্কর ব্যক্তিদের কাছে সপে দিও না - ঐসব যান্ত্রিক মানুষগুলো, যন্ত্রের ন্যায় তাদের মন এবং যন্ত্রের মতন তাদের হৃদয়! তোমরা যন্ত্র নও! তোমরা গবাদিপশু নও! তোমরা মানুষ! তোমাদের অন্তরে মানবজাতির প্রতি রয়েছে ভালবাসা! তোমরা ঘৃণা করতে শেখনি! তোমাদের অপ্রিয় ঘৃণা; শুধুমাত্র সেসব অপ্রিয় এবং ভয়ঙ্কর ব্যক্তিদের জন্য।

বীর সেনারা! দাসত্বের জন্য লড়াই করো না! স্বাধীনতার জন্য লড়াই করো! সেন্ট লিউক এর সপ্তদশ অধ্যায় এ উল্লেখ্য আছে “ঈশ্বরের রাজত্ব মানুষের মাঝে”, একজন বা একটি দলের মধ্যে নয়, সকল মানুষের মাঝে! তোমাদের মাঝে! তোমরা, তোমাদের সেই ক্ষমতার আছে, যে ক্ষমতা বিপ্লব ঘটাতে পারে, এনে দিতে পারে অপার আনন্দ, সুখ আর শান্তি! তোমরা, তোমাদের মাঝে জীবনকে মুক্ত এবং সুন্দর করার সে শক্তি আছে, আছে জীবনকে চমৎকার ও রোমাঞ্চকর করে তোলার সে ক্ষমতা। তাহলে চলুন, গণতন্ত্রের প্রয়োজনে সে শক্তিকে ব্যবহার করি।

চলুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। সবাই যুদ্ধ করি একটি নতুন পৃথিবীর জন্য, একটি সুন্দর পৃথিবী যা সবাইকে সমান কাজ করার সুযোগ দেবে, তরুণদের দেবে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা আর প্রবীণদের নিরাপত্তা। মনে রাখবেন, এ সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েই কিন্তু জানোয়ারেরা ক্ষমতায় আরোহণ করেছেন। কিন্ত তারা মিথ্যা বলেছেন! তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন নি। কোনদিন করবেন ও না! স্বৈরশাসকেরা নিজেরা পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে জনগণকে দাসত্বে নিয়োজিত করে! আসুন আমাদের ঐসকল প্রতিশ্রুতি পূরণে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরি! আসুন পৃথিবীকে মুক্ত করার এ সংগ্রামে যোগ দিন! জাতীয় সকল প্রতিবন্ধকতাকে ধংস করতে হবে! সকল লোভ-লালসার সাথে ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতাকে ধংস করতে হবে! আসুন লড়াই করি একটি সত্য পৃথিবীর জন্য, যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রগতি মানুষকে সুখ-সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করবে।

যোদ্ধারা, গণতন্ত্রের জন্য, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই!

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

Click This Link

http://luis.impa.br/chaplin.html

মুখবদ্ধঃ দেশের আজ যে অবস্থা, হাল ধরার জন্য আমাদের এরকমই একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের আজ ভীষণ প্রয়োজন।

অনুবাদে অনেক কাঁচা, ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ

২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×