কোটি টাকার হ্যারিয়ার জীপসহ ১০ গাড়ি উদ্ধার, গ্রেফতার ৫
সাবধান! ‘সেল বাজার’য়েও (ইন্টারনেটের সহায়তায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান) বিক্রি হচ্ছে চোরাই গাড়ি। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে সেল বাজার’য়ে গাড়ি বেচাকেনায় জড়িত অপরাধী চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। উদ্ধার করেছে ১০টি চোরাই গাড়ি। জানা গেছে, ‘সেল বাজার’-এ শুধু বৈধ গাড়ির মালিকরাই বিক্রির জন্য আবেদন করতে পারেন। এরপর সেখান থেকে দেখে গাড়ি কেনেন ক্রেতারা। সব কাগজপত্র নিশ্চিত দেখে নেয়ার পরও গাড়িটি যে চোরাই তা অনেক সময় বোঝার কোন উপায় থাকে না। এমনকি কোটি টাকা মূল্যের হ্যারিয়ার জীপও চোরদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না । ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের প্রধান সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ১০টি চোরাই গাড়ি উদ্ধার করেছে, তার মধ্যে ৫টিই ‘সেল বাজার’-এর মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে। উদ্ধার করা গাড়ির মধ্যে হ্যারিয়ার জীপ ছাড়াও এফ-প্রিমিও, এক্স-করোলা, ফিলডার গাড়ি রয়েছে। রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে গাড়িগুলো উদ্ধার করা হয়।
ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোখলেছুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, বিশেষ অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে মো. ইকবাল হোসেন (২৩), নাদিম (২৭) ও যুবরাজ ওরফে রনি ওরফে রাব্বিকে (২৮) এবং সূত্রাপুর থানা এলাকা থেকে মো. খোকন মিয়া (৪০) ও গাজীপুর থেকে মো. মোস্তফাকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এদের মধ্যে ইকবাল সিএনজি স্টেশনে বা অন্যান্য পার্কিংয়ে অপেক্ষমাণ ড্রাইভারদের সাথে পরিচিত হয়ে টাকার বিনিময়ে তাকে ড্রাইভিং শেখানোর প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে কোন ড্রাইভার রাজি হয়ে গেলে ড্রাইভিং শেখার সময় প্রকৃত ড্রাইভার গাড়ি থেকে নামার পর চালকের আসনে বসে ইকবাল দ্রুত গাড়ি চালিয়ে নাদিমের কাছে চলে যায়। নাদিম গাড়ির গেটআপ পরিবর্তন ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি করার জন্য যুবরাজ ওরফে রনি ওরফে রাব্বি’র সাথে যোগাযোগ করে। যুবরাজ তখন ‘সেল বাজার’-এ বিজ্ঞাপন দেয়। তারপর আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে নাদিম ও খোকন মালিক ও ম্যানেজার সেজে গাড়ি বিক্রি করে থাকে। প্রসঙ্গত, গ্রেফতারকৃত ইকবাল, নাদিম, মোস্তফা ও যুবরাজ দু’টি চোরাই গাড়িসহ গ্রেফতার হয়ে সাড়ে পাঁচ মাস আগে জামিনে বের হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা পুলিশের তিনটি পৃথক টিম চোরাই গাড়ি উদ্ধারে এ অভিযান চালায়। এসি মোখলেছুর রহমানের তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল আলম, আব্দুন নূর ও মো. সাইফুল ইসলাম খান অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে তুরাগ থানার শুক্রভাঙ্গা এলাকা থেকে একটি সিলভার রঙের এফ-প্রিমিও প্রাইভেট কার, তেজগাঁও থানার মনিপুরীপাড়া থেকে একটি এক্স-ফিলডার প্রাইভেট কার, গোল্ডেন রঙের একটি জি-করোলা প্রাইভেট কার, উত্তরা থানার ৬ নম্বর সেক্টর থেকে একটি সাদা রঙের এফ-প্রিমিও প্রাইভেট কার, কাফরুল থানা এলাকার মিরপুর-১৪ নম্বর দিগন্ত ফিলিং স্টেশন থেকে একটি এফ-প্রিমিও প্রাইভেট কার, নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে একটি হ্যারিয়ার জীপ, উত্তরা থানার ৪ নম্বর সেক্টর থেকে একটি সোনালী রঙের এক্স-করোলা প্রাইভেট কার, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার লক্ষ্মীপাড়া ও সাভার এলাকা থেকে দু’টি সিলভার রঙের এক্স-ফিলডার প্রাইভেট কার ও একটি এক্স-করোলা প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধার করা ১০টি গাড়ির আনুমানিক মূল্য আড়াই কোটি টাকার কম হবে না।
এসি মোখলেছুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, এর আগে এক কোটি টাকা দামের কোন গাড়ি চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এটাই প্রথম। চোরেরা সাধারণত প্রিমিও, টয়োটা করোলা, ফিলডার গাড়ি বেশী চুরি করে। কারণ এগুলো রাস্তায় বেশী চলে। বিক্রিও করা যায় সহজে। তিনি বলেন, সেলবাজারের মাধ্যমে এর আগে চোরাই গাড়ি বিক্রি করার ঘটনাও ঘটেনি। তাছাড়া ১৮/২০ লাখ টাকা দামের চোরাই গাড়ি আগে ২/৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার সেসব গাড়িই ১৫/১৬ লাখ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, না বুঝে কেউ চোরাই গাড়ি কিনলে তাকেও গ্রেফতার হতে হবে। তাই কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হয়ে গাড়ি কেনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
চারটি অস্ত্রসহ ব্যবসায়ী গ্রেফতার
র্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে সায়েদাবাদ ব্রাহ্মণচিরণ রোডের প্রাইডস্টার বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের সামনে থেকে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে নিজাম উদ্দীনকে চারটি অস্ত্রসহ আটক করে। তার কাছ থেকে দু’টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ওয়ান শুটার গান, তিনটি ম্যাগাজিন, ৭টি গুলি ও ব্যবহূত মোটর সাইকেল (মাগুরা হ ১১-০০২২) উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত নিজাম সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে এক ব্যক্তির চাহিদার প্রেক্ষিতে তিনি এগুলো সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসছিলেন। তিনি কুমিল্লার জনি নামের এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে ২টি বিদেশী পিস্তল ও মহেশখালীর নূরু মিয়ার কাছ থেকে অপর দু’টি ওয়ান শুটার গান ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনেন। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র ও গাড়ি ছিনতাই মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অস্ত্র মামলায় সাড়ে চার বছর সাজা ভোগের পর গত কোরবানীর ঈদে তিনি ছাড়া পান। তার বাড়ি কুমিল্লার কোতোয়ালী থানার রংপুর গ্রামে। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।
এদিকে কেরানীগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহআলমকে গতকাল বুধবার একটি বিদেশী রিভলবারসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১০ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আরেফ।
সোর্স

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



