মুফতি আইনুল ইসলাম কান্ধলবী
পবিত্র কোরআন শরিফে মহান আল্লাহপাক তওবাকারীর জন্য ইরশাদ করেছেন যে, 'তারাই সেইসব লোক যাদের তওবা আমি কবুল করি' আর এই আয়াতে সুসংবাদ রয়েছে তাদের জন্য যারা অন্যায় থেকে তওবা করে, আত্ম-সংশোধন করে এবং যা কিছু গোপন করেছে তা প্রকাশ করে দেয়, আল্লাহপাক তাদের তওবা কবুল করেন। হাদিস শরিফে আছে বান্দা কোনো গুনাহ থেকে তওবা করার পরও যদি পুনরায় সেই গুনাহ করে পরে আবার তওবা করে আল্লাহপাক প্রত্যেকবার তার তওবা কবুল করেন। বান্দা তওবা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় কিন্তু আল্লাহ পাক ক্ষমা করে ক্লান্ত হন না। এখানে অবশ্যই ব্যাখ্যা আছে যে, মানুষের প্রতি দুইটি হক রয়েছে (১) হক্কুল্লাহ (২) হক্কুলইবাদ। আল্লাহপাকের সঙ্গে শিরক না করলে অন্যান্য গুনাহ তিনি হয়তো ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু হক্কুলইবাদ বা বান্দার হক তিনি ক্ষমতা করবেন না বলে ঘোষণা করেছেন, বান্দার হক হকদারকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। অথবা তার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করতে হবে। আর আল্লাহর হকের ব্যাপারে তার মহান দরবারে এলাহীতে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থী থাকতে হবে। কৃত অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি থেকে আত্মরক্ষা করতে হবে আর এমন লোকদের সম্পর্কেই আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনুল হাকিমে ইরশাদ করেছেন যে, তারাই সেই সব লোক যাদের তওবা আমি কবুল করি অর্থাৎ মাফ করে দেই। অন্য একটি হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন কোনো লোক যখন পাপ কার্যে লিপ্ত হওয়ার পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহপাকের দরবারে এলাহীতে হাজির হয় এবং ব্যথিত হৃদয় নিয়ে দরবারে এলাহীতে ক্ষমা প্রার্থী হয়, তখন আল্লাহ পাক এমন খুশি হন যেমন কোনো মা তার হারানো সন্তান পেয়ে খুশি হয়। তাই আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন যে, 'আর আমি তওবা অত্যধিক কবুল করে থাকি, আমি অতিশয় দয়ালু'। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হজরত রাসূলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন বান্দা যখন নিজের গুনাহর কথা স্মরণ করত তওবা করে থাকে তখন আল্লাহপাক তার তওবা কবুল করে থাকেন। হজরত আনাছ (রা.) বর্ণনা করেন যে, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন বান্দা তওবা করার দরুন আল্লাহপাক সেই ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হয়ে থাকেন যে ব্যক্তির এমন যানবাহন এমন অরণ্যে হারিয়ে যায়, যার উপর তার খাদ্য এবং পানি ছিল। অতঃপর সেই হারানো বাহন ফিরে পাওয়া সম্পর্কে নিরাশ হয়ে একটি বৃক্ষতলে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং ব্যথিত, মর্মাহত, চিন্তিত এবং ব্যাকুল হয়ে পড়ে ঠিক এমন সময় হঠাৎ বাহনটি প্রত্যাবর্তন করে তার কাছে দণ্ডায়মান হয়। সে তখন তার লাগাম ধরে খুশির আধিক্যে জ্ঞানশূন্য হয়ে আবোল-তাবোল বলতে থাকে। এই আনন্দিত ব্যক্তির চেয়েও অনেক বেশি আনন্দিত হন মহান আল্লাহপাক যখন তার বান্দা তার দরবারে এলাহীতে তওবা করে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে খাঁটি অন্তরে তওবা করার শক্তি ও সাহস দান করুন। আমীন।
লেখক : খতিব, বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



