somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিবাচক চিন্তা ও কর্মে সমৃদ্ধ সুখী সমাজের স্বপ্ন

১২ ই এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি কান্তিকর, বিুব্ধ এবং খুবই অসহিষ্ণু সময় আমরা যাপন করছি। এই সময়ে সহজাত মানবিক মনোবৃত্তির বহি:প্রকাশ ভয়ংকর ও দু:সহ হবে, এটাই স্বাভাবিক। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্থিরতা নেই, নিত্য সংকট ভয়বাহভাবে মানুষকে আঁকড়ে আছে, প্রতিনিয়ত তাকে, এই সময়ের মানুষকে, একটি দুর্লঙ্ঘ প্রাচীরের সামনে বিমূঢ় দাঁড়িয়ে আগামী করণীয় সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে দিশেহারা হয়ে থাকতে হচ্ছে। বলা বাহুল্য, এই অস্থির ও বিদঘুটে সময়ের সহযাত্রী সকলে_ নাগরিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং গ্রামীণ কোমলতার ছোঁয়া মেখে, নাগরিক কোলাহল থেকে অনেক অনেক দূরে ধীরলয় জীবনের অধিকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কেউই এই তিক্ত সময়ের থাবা থেকে নিজেকে আত্মরা করতে সম হচ্ছে না।

আমরা জানি না, কীভাবে, কী উপায়ে আমরা এই সময় অতিক্রম করব। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের বিক্ষুব্ধ একটি দেশ, এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটায়, পাজেরো গাড়ীর হেডলাইটের চোখ ধাধানো আলোয় ফুটপাতে ঘুমানো অসহায় হত দরিদ্রদের ঘুম আচমকা ভেঙ্গে যায়। সামাজিক বৈষম্য দ্রুত আক্রান্ত করছে আমাদেরকে। 'উম্মাহ'র মহান ঐক্য নেই অনেকাংশে নাম সর্বস্ব এই মুসলিম দেশটির। একটি শক্তিশালী প্রসাশনের আশায় দেশের আপামর জনসাধারণ যদিও ব্যাকুল, কিন্তু, সেই 'সোনার হরিণ' প্রশাসনের দেখা নেই এখনো। পিলখানায় যেদিন নাগরিক কোলাহল ছাপিয়ে বুলেট আর বোমার তী্ন আওয়াজ মানুষকে বিহ্বল করে দিয়েছিল, সেদিন একটি সম্পূর্ণ নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যারা ইতিমধ্যে যুদ্ধের ভয়াবহতা কেবল মুদ্রারে দেখবার সাহস দেখিয়েছে, দেখেছিল যুদ্ধ কেমন ও কীরূপ ভয়ানক রূপ ধারণ করতে সম। জাতি সেদিন স্তব্ধ হয়ে অনেক কষ্টে ও যত্নে গড়া তার সেরা সন্তানদের মৃতু্যর কাতরতা অনুভব করেছে। ঢাকার সেই পিলখানা ও তার আশপাশের অধিবাসী ছোট্ট শিশুরা এখনো সেই ভয়ে ও আর্তনাদে চিৎকার করে উঠে।
বিভক্তির নানা রূপ ও রেখা আমাদেরকে প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত করছে। সমাজ, অর্থনীতি, কালচার ও জীবন যাপন পদ্ধতি_ ইত্যাদিতে নানা রঙ থাকবে সত্য ; থাকবে বৈচিত্র্য, থাকবে বহুমাত্রিকতার বর্ণিল ছটা। কিন্তু সেই রঙ, বৈচিত্র্য ও বহুমাত্রিকতা যদি হয়ে উঠে বৈষম্য, বিভেদ আর পারস্পরিক হিংসা-দ্বেষের উদ্ভাবক, তবে সন্দেহ নেই, এই বৈচিত্র্য নিয়ে সমাজ কখনো সুখী হবে না, সেই সমাজের ফুটপাতের অসহায় পথ শিশু মাতাল অভিনেত্রীর গাড়ীর চাকার তলে পিষ্ট হবে। টাকা ও বিত্তের লোভে মায়ের আদরের সন্তান বখাটে দলের ভিড়ে হারিয়ে যাবে, উদরের যন্ত্রণার কাছে অসহায় হয়ে পড়বে সদ্য সন্তান ভূমিষ্টকারিনী মা, এবং ৬০০ টাকায় বিকে যাবে নবজাত শিশু, পৃথিবীর আলোতে ভালো করে চোখ যে দেখবে, মায়ের কোল থেকে সে বেহাত হয়ে গিয়েছে।

পচিশ লাখ কিশোর, উঠতি যুবক নিয়ে যে কওমী শিা ব্যবস্থা চালু আছে আমাদের দেশে, তা নিয়ে আপত্তি আছে অনেকের। নাগরিক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাঝে এদেরকে নিতান্ত খাপছাড়া মনে করা হয়। আন্তর্জাতিক নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে এরা নিত্য নতুন উপাধী পেয়ে যান, কখনো হয়ে পড়েন 'পশ্চাতবর্তী' চিন্তার অধিকারী, কখনো 'সন্ত্রাসী' কখনো আবার চরম বিরক্তির উদ্রেককারী। যারা এই শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের নিজেদেরকে নিয়ে নিজেদের কোনো আপত্তি নেই, এমন দাবী তারাও করেন না সত্য, কিন্তু তাদের দাবী আত্মবিশ্লেষণ মূলক, বাইর থেকে যে তীর তাদের দিকে ধেয়ে আসে, সুতরাং, সেগুলো তাদের কাছে নিপীড়নমূলক। সমাজের বড় একটি শ্রেণীর প থেকে দাবী উঠেছে_ এই শ্রেণীর শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। সংস্কার মানে কি ? সংস্কার মানে কি কিছু দিন পর পর আমরা আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্য সূচীতে যে পরিবর্তন আনি, তেমন কিছু ? নাকি এদেরকে আমূল পাল্টে নিয়ে অন্য কোনো সমাজের অংশ করে ফেলা ? এদের বিশ্বাস, জীবন যাপন ব্যবস্থা, জীবন-জগত-পরকাল সম্পর্কিত মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারনা হস্তপে করা ? যাদের প থেকে এই দাবী উঠেছে, তাদের কাছ থেকে সচেতন সমাজ কোনো ব্যাখ্যা পায়নি। তাই, ব্যাখ্যাতিত এই সংস্কার নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। আমরা মনে করি, এই ব্যাখ্যাতীত সংস্কারের বোঝা সমাজের উপরে চাপিয়ে আমাদের কালচারাল, সামাজিক বিভেদকে আরো প্রকট করে তোলা হচ্ছে।
এইগুলো হচ্ছে সমাজের আপতকালিন বৈষম্যের নানা বিস্রস্ত চিত্র। এই চিত্রের কোন অন্ত নেই। অন্তহীন এই অস্থিরতা, দরোজাহীন কুঠরীতে ঘুরপাক খাবার কান্তিকর যাত্রা, আমরা মনে করি, আধুনিক সময়ের অবশ্যম্ভাবী খন্ডচিত্র। এই চিত্রকল্পের অসহায় চরিত্র হয়ে এই সময়ের মানুষ ক্রমাগত নেতিবাচক একটি প্রবণতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই প্রবণতা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য খুবই ভয়ানক হয়ে দেখা দেবে, সন্দেহ নেই। একবার এই প্রবণতার শিকার হলে তাকে আর সুস্থ চেতনায় ধাবিত করা যাবে না। এক অবশ্যম্ভাবী হিংস্রতায় তাকে আমূল পেয়ে বসবে। বিশ্ব মিডিয়ার কল্যাণে যে ধর্মীয় সন্ত্রাসের সাথে আমরা পরিচয় লাভ করেছি, সমাজকে খন্ড-বিখন্ড করে সেই সন্ত্রাসের সাথে লড়াই করে মৌলিক সন্ত্রাস কি আমরা দমিয়ে ফেলতে পারব ? অঙ্কের হিসেবে এর উত্তর যদি দাঁড় করিয়ে ফেলা সম্ভব হত, তাহলে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো নত মুখে তার দলের ছাত্র সংঘটনের পদ ছাড়তে হত না। শিতি সমাজ হয়তো বার বার লজ্জায় মুখ ঢাকতে বাধ্য হত না।

যে কোন সমাজই নানা শ্রেণীতে বিভক্ত থাকে, নানা বিশ্বাসে ও জীবনবোধে তার যাপন পদ্ধতি লালন করে। সেই পার্থক্যগুলো হচ্ছে সমাজের জন্য অলঙ্কার, যদি তাকে সঠিকরূপে সাজিয়ে তোলা সম্ভব হয়। আধুনিক জীবন ব্যবস্থার স্বর্ণ চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি এখনো আবিস্কার করতে সম হইনি, তিক্ত মনে হলেও বাংলাদেশ ও তার সামাজিক কাঠামোর জন্য এটি আরিক একটি সত্য। যে কোন বিপদ ও সমস্যাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, বোধ ও মানসিকতা দিয়ে বিচার করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অভ্যাস ও চর্চা আমাদের নেই বললেই চলে। একটি বিপুল সম্ভাবনাময় পৃথিবী আমাদের জন্য অপো করছে, আধুনিক তথ্য প্রবাহের সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারি, যে কোন সময়ের তুলনায় এখন মানুষকে দ্রুত সচেতন করে তোলা যায়। এর জন্য আমাদের যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে, একটি জীয়নকাঠির স্পর্শ। ইতিবাচক মনোবৃত্তির লালন ও চর্চাই হতে পারে আমাদের মনোগঠনের প্রোপটে সেই জীয়নকাঠি। সমাজের প্রতি বৈষম্যহীন দৃষ্টিতে আমরা যেদিন থেকে তাকাতে শিখব, সমাদর করতে শিখব অন্যের মনোভাবনাকে, ভ্রাতৃত্বের সেই অমোঘ শৃঙ্খল আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেদিন তার বর্ণিল ছটা ছড়িয়ে দিবে_ সন্দেহ নেই, আমরা সেদিন থেকে সভ্যতার এক নতুন দুয়ারে উপনীত হব। আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এমন এক পৃথিবী রেখে যেতে সম হব, যা হবে সুন্দর, মনুষ্যত্বে পরিপূর্ণ শোভাময় এক অনাবিল প্রশান্তির উন্মোচক।
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×