গত কয়েক দিন আগে সংবাদ পত্রের মাধ্যমে জানতে পারলাম ড. আনিসুজ্জামান স্যারকে ক্রমাগত শারিরিক অবস্থার অবনতির জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবরটা শুনেই মনের ভেতর কেমন যেন করে উঠল। সত্যি বলতে বর্তমান সময়ে আমরা এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, চারিদিকে এত খারাপ সংবাদ তাতে কেন যেন মনের শক্তি কমে যাচ্ছে। তাই সেদিনই কোন অজানা আশংকায় বুকটা দুরুদুরু করে উঠেছিলো। পরে কোন একটা সংবাদ মাধ্যমে শুনেছিলাম স্যারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল, কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কারন বর্তমানে আমরা ক্রমাগত অনুকরন বা অনুসরন করার মত মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেলছি, আমাদের মাথার উপর বটবৃক্ষ হয়ে থাকা ছায়াগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
আজ বিকেলে (১৪ই মে) আমি কি যেন একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ জানা আপুর ফোন পেলাম। ফোনের ওপাশে জানা আপুর কন্ঠস্বর শুনেই বুঝলাম কোন খারাপ সংবাদ অপেক্ষা করছে। যারা জানা আপাকে কিছুটা কাছ থেকে চেনেন তাঁরা জানেন, আপু কত শক্ত একজন মানুষ, কত হাজারো ঝড় তিনি একাই হাসিমুখে সামলেছেন, কেউ হয়ত কিছু বুঝতেও পারে নি। কিন্তু সেই মানুষটা যখন ফোনে বাচ্চাদের মত কাঁদেন এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, তখন সেটা ভীষন কঠিন একটি পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায়। আপু কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, জাদিদ, আমরা আমাদের একজন বড় অভিভাবককে হারিয়েছি।
সাথে সাথে বুঝলাম, স্যার আনিসুজ্জামান স্যার আর আমাদের মাঝে নেই। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন চমৎকার একজন মানুষ। তিনি ছিলেন এই সামহোয়্যারইন ব্লগের একজন অকৃত্তিম বন্ধু ও অভিভাবক। স্যারের সাথে জানা আপার ভীষন আন্তরিক একটি সম্পর্ক ছিলো। যে কোন সমস্যায় তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণাও দিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের, লড়াইয়ের। একটা সময় যখন কোন নিরাপত্তা জনিত সমস্যা না থাকার কারনে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লগ দিবস উদযাপিত হতে বাঁধা ছিলো না, সেই সময় তিনি সময়ে তিনি সবগুলো ব্লগ দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতেন।
ব্লগ ডে উদ্বোধন করছেন স্যার। এই দিন স্যার ব্লগার হিসেবে নিবন্ধনও করেছিলেন। আমি আইডিটি খুঁজে পেলে সংযুক্ত করে দিবো।।
ব্লগকে কেন্দ্র করে যত অপপ্রচার হয়েছে, ব্লগারদের হয়রানী, নিরাপত্তার অভাব এবং সর্বপরি সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগ বন্ধ করে দেয়ার বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। স্যার ভীষন ভালোবাসতেন জানা আপাকে। সময় পেলেই তাঁর খোঁজ খবর নিতেন, বাসায় বেড়াতে যেতেন। খুব পছন্দ করতেন জানা আপুর হাতের রান্না। এমন একজন প্রিয় মানুষের মৃত্যূর খবরে ভেঙ্গে পড়াই স্বাভাবিক। তাঁর এই বিদায় সত্যি এমন এক শূন্যস্থান তৈরী করল, যা হয়ত কখনই আর পুরণ হবে না।
স্যার ব্যক্তিজীবনে কি ছিলেন, এটা আর এই পোষ্টে নতুন করে উল্লেখ করে বলার কিছু নেই। তিনি ছিলেন একজন চমৎকার শিক্ষক, সমাজ-মনস্ক মানুষ, প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। সাহিত্য- গবেষণা, লেখালেখি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য তাঁর ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার আত্মজীবনীতে তিনি যে সমস্ত বিষয়গুলো রেখে গেছেন, সেগুলোকে বাঙালি জাতি চিরকাল স্মরণে রাখতে হবে।
এই জাতির প্রয়োজনেই তাঁর আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিলো। আমরা এই মহান মানুষটির আত্মার শান্তি কামনা করি। তিনি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৩:০৪