somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিভাবে করোনা কালে ওমরাহ্‌ পালন করলাম।

০৩ রা জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত দুই বছর যাবত আমার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নানাহ কারনে ওমরাহ পালনে যেতে পারছিলামনা। এছাড়া করোনার কারনেও ওমরাহ্‌ বন্ধ ছিল। বর্তমানে যারা টিকা নিয়েছে তারা Etmarna app থেকে পূর্ব অনুমতি নিয়ে মক্কায় যেতে পারছেন। আর বিনানুমতিতে গেলে দশহাজার রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে।
আমাদের এলাকা থেকে পবিত্র মক্কার দুরত্ব প্রায় চৌদ্দশো কিমি। প্লেনে গেলে জেদ্দা নেমে টেক্সি বা বাসে মক্কা পৌছতে সময় নেবে ৩/৪ ঘণ্টা, আর বাসে প্রায় ১৫/১৬ ঘণ্টা। এখানে ওমরাহ্‌ সার্ভিসগুলি অত্যান্ত কম মুল্যে মার্সিডিস বাস যোগে সার্ভিস দিয়ে থাকে।আমি একটি ওমরাহ্‌ সার্ভিসেরই সাহায্য নিলাম। তারাই আমার এপ্স খুলে বুকিং দিল।

ওমরাহ পারমিট
এপ্সে আমার ওমরাহ্‌র সময় নির্ধারিত করলো সকাল ৯-০০টা থেকে দুপুর ১২-০০ টা এবং একইদিনে পরবর্তি চার ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারবো।
আল্লাহ্‌র রহমতে গড় পড়তায় দুই/তিন বছর অন্তর মক্কায় যাই। কিন্তু এমন সিডিউল করে আর কখনো যাইনি। করোনা পুর্ব এবং পরবর্তী ওমরাতে অনেক কিছুই পরিবর্তন এসেছে।পাঠকরের জ্ঞাতার্থে আজ সেটাই বলবো।


বুধবার বিকেলে যথারীতি গিয়ে দেখি আমাদের জন্য মার্সিডিস বাস দাড়িয়ে আছে, করোনার কারনে দুটোসিটে একজন বসে যাওয়ার ব্যবস্থা। গাড়ী ছুটে চললো মক্কার উদ্দ্যেশে। রাস্তায় নামাজের জন্য ২/৩ বার পেট্রোল পাম্পে দাঁড়ায়,এবারো থামলো। তবে এবার দেখলাম মসজিদ-টয়লেট অন্যান্যবারের চেয়ে বেশী পরিচ্ছন্ন, খাবার হোটেলও নিয়মতান্ত্রিক।
সাড়ারাত চলার পর ভোরে আমরা মিকাত তাইফে পৌছলাম। সেখানে আর আগের মতো জমজমাট মার্কেট নেই ৮/১০টা দোকানে ওমরাহ্‌র জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকেই ইহরাম বাধে নিলাম।

মিকাতে তাইফ এসে ওমরার নিয়ত করলাম
ইহরাম হল হজ্জ বা উমরার জন্য নির্ধারিত একটি ব্যবস্থা। মক্কার চতুর্দিক থেকে আগত হজ্জ্ব ও ওমরাহ্‌ পালনকারীদের জন্য মিকাত নামক নির্ধারিত আটটি স্থান(একটি প্লেনে) অতিক্রম করার পূর্বেই ইহরাম বাধতে হয়। আমরা মিকাত তাইফে এসে করোনার কারনে সারি সারি গোসলখানার একটি খোলা একটি বন্ধ দেখতে পেলাম। হাজ্জ্বির সংখ্যা কম তাই আমাদের তেমন সময় লাগেনি। গোছল সেরে দুই রাকাত নামাজের সহিত ওমরার নিয়ত করে ফেললাম।
এরপর ৯৪কিমিঃ দূর মক্কার উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলাম, মুখে আল্লাহহুম্মা লাব্বাইকা ওমরাতান তালবিয়াটি বলিতে হয়।অর্থ হচ্ছে,হে আল্লাহ! আমি ওমরার জন্য আপনার দরবারে হাজির হয়েছি।
বাস আমাদেরকে কাবা শরিফের নিকট গাজ্জ্বা এলাকায় নামিয়ে চলে গেল। এখানেই সেই জ্বিনের মসজিদ। করোনার কারনে এলাকাটা একদম ম্রিয়মাণ হয়ে গিয়েছে।প্রায় সব হোটেলই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।থাকার জন্য মাত্র তিনটি হোটেল খোলা আছে।একটা হোটেলে লাগেজ রেখে ওমরাহ্‌র জন্য যাবো কিন্তু খাবারের রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ। হোটেলের কর্মচারি আমাদের বললো তাদের নিকট গরুর মাংস আর রুটি আছে তবে নিজেদের রান্না করা। খিদের জন্য তাতেই রাজি হয়ে গেলাম।
সকাল ৯টার মধ্যেই আমরা কাবা শরীফের নিকট চলে এলাম। দুই দফায় লাইন ধরে মোবাইল এপ্স চালু করে নিরাপত্তাকর্মীদের গ্রিন পারমিট দেখাতে হলো।
১৫/১৬ বারের ওমরাহর অভিজ্ঞতায় এতো অল্প হাজ্জ্বিকে তাওয়াফ করতে দেখিনি, যা এবার নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। আমাদের গ্রুপ ৩ ঘন্টা সময়ে শেষ করার পর ২য় গ্রুপ তারা ভেতরে ঢুকতে দেবে এভাবে ৩য়, ৪র্থ। যাইহোক ধাক্কাধাক্কি ছাড়াই নিয়ন্ত্রিত দুরত্বে থেকে তাওয়াফ শুরু করলাম। হাজরে আসওয়াদের ধারে কাউকেই যেতে দেয়া হচ্ছেনা,তাওয়াফ শেষ করার পর মাকামে ইব্রাহিম বরাবর নামাজ পড়তেও দেয়া হচ্ছেনা, অনেকে নামাজ শুরু করলেও ভেঙে দিচ্ছে,তবে ছবি তুলতে দেয়া হচ্ছে। অনেকে ছবি তোলার সময় মুখের মাস্ক খুলে ছবি তুলতে গিয়ে ১০০০রিয়াল করে জরিমানাও গুনেছে।

তাওয়াফের শেষে মকানে ইব্রাহিমের নিকট

তাওয়াফের পর সেই স্থানে নামাজ পড়তে পুলিশ মানা করতেছে
আমরা ভেতরে চলে এসে পবিত্র কাবাকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করলাম।
একসময় কাবা থেকে ২০/২৫ মিটার দূরে জমজমের কুপ খোলা ছিল।সেখান থেকে সরাসরি পানি পান করতাম,পরবর্তিতে কুপের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং চলার পথে ঠান্ডা জমজমের পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার করোনার কারনে সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এবার জমজমের পানি নিয়ে মানুষ ও রোবট হাজ্জ্বিদের নিকটে এসে বিতরণ করছে। কিন্তু একটি বোতলে পানি ভর্তি করতে চাইলে তারা দিচ্ছেনা।

সাফা-মারয়ার সাঈ
যাইহোক জমজমের পানি পেটভরে খেয়ে আমরা সাফা মারওয়াতে সাঈ করতে যাই। সেখানে এখন একটিমাত্র ফ্লোরে সাঈ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে,তবুও ভিড় নেই। সাঈ শেষে আবারো কিছুক্ষণ নামাজ ও দোয়া দরূদ পড়তে পড়তেই যোহরের আযান শোনা গেল।
আমাদের ওমরাহ্‌ এভাবেই শেষ করলাম। আরেকটা কথা আগে যতোবার খুশী তওয়াফ করার সুযোগ ছিল, এবার কাবা এলাকায় ২য় বার যাওয়ার কোন রাস্তা বা সুযোগ পেলামনা। ইচ্ছে ছিল যোহরের নামাজের পর আরেকবার তাওয়াফ করবো, ইউটার্ন করার রাস্তাই খুঁজে পেলামনা।

বন্ধ রয়েছে জমজমের পানির স্থল

জমজমের পানি বিতরনকারী

পাদটিকা, যা অনেকেই জানেন আবার নাও জানতে পারেন।
তাওয়াফ শব্দের অর্থ হলো প্রদক্ষিণ করা বা চক্কর দেয়া। বাইতুল্লাহ শরীফের চর্তুদিকে তাওয়াফ করা হলো হজ এবং ওমরার জন্য ফরজ রুকন যা পালন করতে হয়।
হজ্জ ও উমরার সময় মুসলিমরা কাবার চারপাশে ঘড়ির কাটার বিপরীতদিকে সাতবার প্রদক্ষিন করে যা তাওয়াফ নামে পরিচিত। তাওয়াফ শুরুর পূর্বে হজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া নিয়ম। তবে ভিড়ের কারণে এর কাছে যাওয়া সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর হলো প্রাচীন পাথর যা কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার উঁচুতে অবস্থিত।এই পাথর আদম ও হাওয়ার সময় বেহেশত থেকে পৃথিবীতে এসে পড়ে, সেই সময় থেকে পৃথিবীতে রয়েছে।
মাকামে ইব্রাহিম হচ্ছে একটি পাথর যেখানে হযর‍ত ইব্রাহিম (আ) দাঁড়িয়ে কাবা শরিফ নির্মাণ করেছিলেন। এটি কাবা শরিফের পাশে একটি ক্রিস্টালের বাক্সে রাখা আছে। পাথরটিতে হযরত ইব্রাহিম (আ) এর পদচিহ্ন এখনো রয়েছে যাহা চার হাজারেরও বেশি সময় ধরে অপরিবর্তিত এবং কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত অপরিবর্তিতই থাকবে, ছুবাহানাআল্লাহ।
জমজম কুপ ও সাফা মারওয়া সাঈঃ জমজম কুয়া মক্কায় মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে অবস্থিত।এটি কাবা থেকে ২০ মি পূর্বে অবস্থিত। নবী ইবরাহিম (আ) এর স্ত্রী হাজেরা (আ) ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আ) কে আল্লাহর আদেশে মক্কার মরুভূমিতে রেখে আসেন। তার রেখে যাওয়া খাদ্য পানীয় শেষ হয়ে গেলে হাজেরা (আ) পানির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করেছিলেন। এসময় জিবরাঈল (আ) এর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বেরিয়ে আসে। ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখে হাজেরা (আ) পাথর দিয়ে পানির ধারা আবদ্ধ করলে তা কুপের রূপ নেয়। এসময় হাজেরা (আ) উদগত পানির ধারাকে জমজম (বাংলায় থামো) বলায় এর নাম জমজম হয়েছে।

ওমরাহ্‌ শেষে হোটেলের পথে
( চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:০০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×