লেখাটির শিরোনাম দেখেই যে কেউ আমাকে রাজাকার বলে দিতে পারেন। অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার আমাকে যুদ্ধাপরাধীও বলে দিতে পারেন। এসব বলে ব্যবস্থা নিতে এসে স্বাধীনতার বছর পনের পরে জন্মগ্রহন করেছি বলে হয়ত হতাশ হতে পারেন। এসব নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নাই।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যখন উদগ্রিব ঠিক তখনি মাওলানা ভাসানী নির্বাচন বয়কটের ডাক দিলেন। দুরদর্শী ভাসানী ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে এই নির্বাচন কোনো সমাধান দেবে না। ফলে তার দলের শ্লোগান ছিল , নির্বাচনকে লাথি মার, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন কর ।
যাই হোক বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের পক্ষে অনড় ই রইলেন। জিতেও গেলেন। কিন্তু পাকিস্তানিরা তার হাতে ক্ষমতা দিল না। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষনে স্বাধীনতার স্পষ্ট ঘোষনা করেননি। তিনি মুলত চার দফা দাবি পাকিস্তান সরকারের কাছে পেশ করেছিলেন। ১। সামরিক আইন মার্শাল ল তুলে নিতে হবে। ২। সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে ৩। ইতিপূর্বে যত হত্যাকান্ড হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে ৪। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হয়ে জনগনের সেবা করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বোধহয় পূর্ব পাকিস্তানের সবথেকে শক্ত নেতা যিনি স্পষ্টত পাকিস্তানের অখন্ডতায় বিশ্বাস করতেন। তবে স্বাধীনতা ছিল প্রানের দাবি। আর সেই ঘোষনা টা তার কাছ থেকেই আসার কথা ছিল। সেই দায়িত্বও জনগন তাকেই দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। করলে হয়ত এত লোককে আমাদের হারাতে হত না।
তিনি যদি ৭ মার্চের ভাষনে স্পষ্ট স্বাধীনতার ঘোষনা দিতেন , তাহলে ইতিহাসবিদরা বলেন , যে অনেক কম রক্তপাতে , এমনকি কোন ধরনের রক্তপাত ছাড়াই পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে যেত। কারন তখন পাকিস্তানি সৈন্য ছিল আনুপাতিক হারে বাঙালী সৈন্যদের তুলনায় খুবই নগন্য । ফলে তারা খুব একটা প্রতিরোধই হয়ত করত না। কিন্তু সেটা তিনি করেন নি। ফলে পাকিস্তানিরা তাদের সৈন্য সমাগম ঘটানোর সুযোগ পেল। তিনি তার ৭ মার্চের ভাষনে পাকিস্তানীরা আর সৈন্য এদেশে আনতে পারবে না এমন কথাও বলেন নি। এগুলো বলা সম্ভব ছিল্। কারন তখন অলরেডি তার কথায়ই দেশ চলত। এবং তিনিই ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সবথেকে জনপ্রিয় নেতা।
২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে কেউ পাকিস্তানী পতাকা না তুলে পূর্ব পাকিস্তানের লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে স্পষ্টতই বিদ্রোহের ও স্বাধীনতার জানান দিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তার পরেও কালবিলম্বের কারন কি ছিল?
২৫ মার্চ গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু নাকি টেলিগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার সাত কোটি বাঙালীর মধ্যে আজ পর্যন্ত কেউ সেই টেলিগ্রাম পেয়েছিল বলে দাবি করেনি ।
এবং অনেকটা স্বেচ্ছায় পাকিস্তান সরকারের হাতে ধরা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এবং ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরাই বাধ্য করে এদেশের জনগনকে যুদ্ধে নামতে। অবশ্য শত চাপ ও লোভ দেখানো সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বিপক্ষে ও কোনো কথা বলেননি। সেটা বললে আমাদের স্বাধীনতা অনেক বিলম্বে হত।
২৭ মার্চ মেজর জিয়া প্রথমে নিজেকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, এবং সর্ব স্তরের বাঙালীকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে আহ্বান করেন। পরে অবশ্য তার এ ঘোষনা বাদ দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা করেন। সেই ঘোষনা দেশবাসীকে অনুপ্রানিত করেছিল যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে। অবশ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তার ও আগে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতেই। ইপিআর এর বাঙালী সৈন্যরা তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রানপনে যুদ্ধ করে যান। অনেক সচেতন যুবক ২৬ মার্চে নিজেরাই সংগঠিত হওয়া শুরু করে। এভাবেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বর্তমান সরকার যাই বলুক , মূল ঘটনা সংক্ষেপে এমনই ছিল। এখন আপনারাই বিবেচনা করবেন কার কি ভূমিকা ছিল সেই যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান কতটুকু............
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।