রাহান তাপস
কথায় কথায় শুধু প্রশ্ন।এই হলো মোমের স্বভাব।মুখে যে দিন থেকে কথার খেই ফুটলো,সে দিন থেকেই এই প্রশ্ন যাত্রা।নতুন কিছু একটা দেখলেই এটা,ওটা,কত কি যে প্রশ্ন তার কোন সীমা নেই।অনর্গল রেলগাড়ির মতো প্রশ্ন করেই চলে।অনেকে এতে রাগ করে।পরণে আর কথাই বলে না।মোম তবুও প্রশ্ন করে যায়,পরিচিত কি অপরিচিত,সে যেই হোক।এর জন্য মোমের বাবা মোমকে প্রশ্ন কন্যা বলে ডাকে।এই নামটা আবার মোমের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি রাহান চাচারও খুব পছন্দ।তাই রাহান চাচাও প্রশ্ন কন্যা বলে ডাকে।আর মোমেরও এই নাম শুনতে ভালে লাগে।আসতে-আসতে বাসার সবাই মোমকে প্রশ্ন কন্যা বলে ডাকা শুরু করে।
রাহান চাচা প্রশ্ন কন্যার কোন প্রশ্নতেই রাগ তো করেই না বরং সে আর ও উৎসহ দেয় এবং সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজ ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়।এতে প্রশ্ন কন্যার মা বিরক্ত হয়ে বলে,"এতো পটর পটর কর কেন?''
তখন রাহান চাচা বলে,'এই পৃথিবীতে কোন কিছুই কারন ছাড়া ঘটে না।দেখো তোমার এই মেয়ে,'একদিন বড় হয়ে একজন নামকরা দার্শনিক হবে।তখনই বুঝবে এই মেয়ে ছোট বেলায় এতো প্রশ্ন কেন করতো।'
মায়ের বিরক্তকর মুখ দেখে প্রশ্ন কন্যা আর প্রশ্ন করার সাহস পেতো না।
রাহান চাচার কথার, সব টুকু বঝলো না ।শুধু এইটুকু মনে রাখলো 'পৃথিবীতে কোন কিছুই কারন ছাড়া ঘটে না।'
প্রশ্ন কন্যা এই তথ্যের অর্থ বুঝলো অনেক বছর পরে।তখন প্রশ্ন কন্যা কাস সেভেনে পড়ে।অর্ধবার্ষিক পরীা শেষ।স্কুল গরমের ছুটি দিয়েছে।তাই রাহান চাচা প্রশ্ন কন্যাকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে নিয়ে গেল।গ্রামে প্রশ্ন কন্যার মতো সম বয়সী এক চাচাতো বোন আছে। নাম তার মীম।তারা দু'বোন মিলে সারাটা গ্রাম ঘুরে বেরাতো।গ্রামে এক জ্বীনে ধরা ছেলে ছিল। সেই জ্বীনে ধরা ছেলেটি দিন দুপুরে তেতুল গাছের মগডালে বসে গান গাইতো আর তেতুল খেতো।একদিন দুপুরে প্রশ্ন কন্যা আর মীম সেই তেতুল তলায় গেল তেতুল খেতে।গাছের উপরে সেই জ্বীনে ধরা ছেলেটিকে দেখে দু'বোনই চমকে গেলো।পরণে মীম বলে,'এই ছেলেটিকে তেতুল গাছের ভূতে ধরেছে'।
প্রশ্ন কন্যা বলে,'ভূত,প্রেতাত্মা বলে কিছু নেই পৃথিবীতে।'
তখন মীম বলে,'তাহলে এই আবুল কেন গাছের মগডালে বসে গান করছে?ওকে কি তাহলে মগ্ন জ্বীন ধরেছে!'
এই প্রশ্নর উত্তরের জন্য প্রশ্ন কন্যা খুব চিনতিত হয়ে পড়লো। মনে-মনে প্রশ্নর উত্তর খুঁজতে থাকে আর ভাবে কারন তো অবশ্যই আছে।
বাড়ি এসে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করলো।এর কিছুণ পরই কারেন্ট চলে গেল।টিন সেটের ঘর।দুপুরের রোদ্রে ঘরের চাল গরমে টগবগ করে।কারেন্ট চলে যাওয়াতে পাখাও বন্ধ হয়ে গেল।আর তখনই অনুভাব করলো চৈত্রের কাঠ ফাটা গরম।আর সেই সঙ্গে আবুলের মগডালে উঠার কারন পেয়ে গেল।এই গরমে মধ্যে গাছের মগডালে খুব বাতাস লাগে।তাই আবুল গাছের ডালে বসে আরামে তেতুল খাছে আর গান করছে।আর এরই জন্য সবাই তাকে বলছে ভূতে ধরেছে। আসলে গ্রামের মানুষের অজ্ঞতাই এর প্রধান কারন।
ব্যাপারটা প্রশ্ন কন্যার বোধগম হওয়াতে নিজেকে খুব বুদ্বিমতী মনে করছে।সেই সাথে অনেক বছর আগে রাহান চাচার সেই কথা মনে পড়ছে। 'কোন কিছুই এমনি এমনি ঘটে না।এর পিছনে কারন থাকে।'
তারপর আর একদিন প্রখর রোদ্রে দু'বোন গেল খালের পাড়ে মাছ ধরতে।চারিদিকে দুপুরের নিসতব্দতা।কাছেই একটা গরু দাড়িয়ে।সন্ভাবত সকাল থেকেই এখানে বাঁধা অবস্থায় আছে।ঘাস খেতে -খেতে অরুচি এসে গেছে তাই দাড়িয়ে রোদ্রে মধ্যে মেয়ে দু'টোকে দেখছে।প্রশ্ন কন্যার এতো রোদ্রে থাকার অভাস নেই।সে প্রচুর ঘামাছে।
অসহ্য গরম।মীমকে বললো, 'চলো বাসায় যাই।'
মীম বললো, 'না আর একটু মাছ ধরি।তুমি গাছের ছায়ায় বসো।'
প্রশ্ন কন্যা বললো,'কিন্তু ধারে কাছে তো কোন বড় গাছ নেই।'
গাছ দেখানোর জন্য মীম যেই ঘার ঘুরালো ওমনি ঐ গরুটার দিকে চোখ পড়লো।আর সাথে সাথে মীম চিৎকার দিয়ে উঠলো।
প্রশ্ন কন্যা বলে,'কি হয়েছে?'
মীম বললো, 'চলো! এখানে ভূতের বাতাস এসেছে !ঐ দেখ গরুটা কেমন উল্টাপাল্টা করছে।মুহুতে গরুটা মাটিতে লুটুপুটু খাছে।
দু'জনেই দৌড় দিল বাড়ির দিকে। প্রশ্ন কন্যা একটু দূরে যেয়ে আবার ফিরে তাকালো গরুটার দিকে।গরুটা তখনো মাটিতে ছটফট করছে।আবার মীমের দিকে তাকাতেই দেখে মীম অনেক দূরে চলে গেছে।বাড়ির আঙ্গীনায় এসে মীম অজ্ঞান হয়ে গেল।মাথায় অনেক পানি দিল আর ঘটনা জানতে চাইলো।কি হয়েছে;কি দেখেছো?ইত্যাদি।এরই মধ্যে গ্রামের অনেক মানুষ কানাভূসা করছে যে,মীমকে ভূতে ধরেছে।
প্রশ্ন কন্যা এ সবের কিছূই বুঝতে পারছে না। শেষে রাহান চাচাকে ব্যাপারটা খুলে বললো।
রাহান চাচা প্রশ্ন কন্যাকে নিয়ে আবার গেল সেই গরুটার কাছে।কিন্তু কি আশ্চর্য! গরুটা আবার চুপচাপ আপন মনে ঘাস খাছে।তবে তার সমসত শরীর ভিজা।
প্রশ্ন কন্যা চাচাকে বললো, 'গরুটাকে কি মগ্নজ্বীনে ধরে ছিল?'
রাহান চাচা একটু হাসলো।পরণে বললো,'যখন কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না তখন আমরা বলি ভূত,পেতনী ইত্যাদিতে ধরেছে।
তারপার একটু থেমে আবার বললেন,'জ্বীন,ভূত,মগ্নজ্বীন বলে কিছু নেই।সবই মানুষের ভুল এবং ভয় পেলে বলে থাকে।আসলে জ্বীন,ভূত বলে পৃথিবীতে কিছুই ছিলো না এবং এখনও নেই।'
প্রশ্ন কন্যা আবার বললো, 'তাহলে এই গরুটার কি হয়েছিল?'
রাহান চাচা উত্তর দিল এই গরুটা সারা দিন এই প্রখর রোদ্রে মধ্যে থাকাতে ওর মাথা ঘুড়ে পড়েছিল।যখন গড়াগড়ি খেতে খেতে হঠাৎ খালের পানির মধ্যে পড়েছে তখনই গরুটা মাথা ঠান্ডা হয়েছে আর ঠিক তখন তার শরীর সুস্থ হয়ে গেল।'
ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে প্রশ্ন কন্যার খুব আনন্দ লাগছে।বাড়ি ফিরে মীমকেও সব বোঝালো।
তখন মীম বললো, 'আসলে ও আমাদের সবাইকে বেশী বেশী প্রশ্ন করা উচিত আর নিজে নিজে তার উত্তর ও খোঁজা উচিত তা না হলে আমার মতো সবাই কুসংস্কারেই থেকে যাবে।
* * *
রাহান তাপস
বাংলাদেশ
মোবাইল0178575818
সৎঃ@ৎধহশংরঃঃ.পড়স

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


