ডেট লাইন, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬
"বাংলাদেশের ইতিহাসে রানা প্লাজা'র স্থান কোথায়, সেটা বাংলাদেশ সরকার উপলব্ধি করতে সক্ষম না হলেও, আমরা যারা বাইরে থাকি, তাদের প্রায় প্রতিনিয়তই উপলব্ধি করতে হয়। এখনো বাইরের দেশের কারও সাথে বাংলাদেশের গর্বের জায়গা গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে কথা উঠলে তারা রানা প্লাজার কথা বলে। লজ্জায় নত হয়ে আসে আমার মাথা। প্রায় ১৩০০ মানুষের মৃত্যু, তিন হাজারের অধিক আহত ও ঘটনার ব্যাপকতায় ট্রমায় আক্রান্ত এই লোকেদের এখন লড়াই করতে হচ্ছে ক্ষতিপূরণ নিয়ে। ওদের ভুলে গিয়ে সরকার, গার্মেন্টস মালিক সমিতি এখন সুখনিদ্রায় মগ্ন। কিছুতেই কিছু হবে না, রানা প্লাজায় হতাহত ও মৃতরা আজ কেবল একটা সংখ্যা মাত্র।"
আমার এখনো মনে পরে ঘটনার ব্যাপকতা ও বিপুল ধ্বংসাবশেষ দেখে, আমি এতোটাই ট্রমাটাইজ হয়ে পরি যে, তিনদিন ঘর থেকে বের হইনি, কারও সাথে কথাও বলিনি, নীরবে প্রার্থনা করেছি যেন জীবিত উদ্ধার হয়, বেশি সংখ্যক মানুষ। এরপরও আমরা সমস্থ ঘটনা লাইভ দেখেছি টিভিতে, দেখেছি মৃত্যুর নগ্ন উল্লাস। সেদিনের প্রতিক্রিয়ায় আমি যা লিখেছিলাম, শেয়ার করছি তা এখানে।

ডেটলাইন ২৬ এপ্রিল, ২০১৩
বিগত তিন দিন আমি একটি কথাও বলিনি, বলা ভালো বলতে পারিনি। আবারো এত এত মানুষের মৃত্যু আমাকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমি কাঁদতেও ভুলে গেছি ওদের শ্রমের প্রতি একশ্রেণির উন্নাসিকতায়, সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্মমতায়। তার পরেও আজ একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি সাধারন জনতা, ব্লগার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ, ডাক্তার এবং সেনাবাহিনীর সম্মিলিত ভূমিকায়। কেউ যেন মনে না করেন উদ্ধার অভিযানের প্রথম পর্ব বা সাবধানতার সাথে জীবিত ও মৃতদের উদ্ধারের কাজটি শেষ হয়েছে। এটি চলবে যতক্ষণ একজন লোক ও জীবিত থাকবেন। সবাই আগের মতই একাত্ব থাকুন। যত বেশি প্রাণ আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব, ততই পরাজিত হবে মৃত্যু।
রানা প্লাজার এই ঘটনাকে আমি ধরে রাখতে চেয়েছি। এর আগে একটি অনুগল্প উপলব্ধি লিখেছিলাম, যা এই ব্লগেও প্রকাশ হয়েছে। আজ শেয়ার করছি একটি কবিতা
মাংসল অন্ধকার
টেবিলে মাংসের স্তূপ, প্লেটে সালাদ
সাথে স্যান্ডুইচ; ডায়েট কন্ট্রোল
জরুরী দরকার। চোখ রাঙায় ব্লাড প্রেশার!
মাঝখানে অন্ধকারের বিষ...
হাজার হাজার কোটি টাকা লাভের অন্ধকার!
অদ্ভুত ব্যবধান তুলে বসে আছে
দেয়ালের দুই পাশে।
পাতে মাংস তুলবে বলে
শাহিনা, ঝর্ণারা আজ মালিকদের টেবিলে
স্যান্ডুইচের দোমড়ানো মাংসের কিমা!
দারুণ স্বাদ...
হতেই হবে, এ যে কচি নরমাংসের।
উৎসর্গঃ বলতে খুব লজ্জা হচ্ছে, এই কবিতা তোমাদের জন্য হে বস্ত্রবন্ধুরা। আমাদের ক্ষমা করো, কাপড় তুলে দিলে যারা আমাদের নগ্ন বিবেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


