somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়ের কেটলির কাছে খোলা চিঠি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রিয় চায়ের কেটলি,
ভালো আছ নিশ্চয়ই। চাই তো থাক। আমিও ভালোই আছি। থাকতে হয় যে!
জানো, সেদিন একজন পেয়ালায় চা ঢালতে গিয়ে অনেকটা চা ছলকে তার সাদা শার্টে ফেলে দিয়েছিল। ফেলে দিয়ে সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েছিল। তারপর মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলেছিল, 'দেখেন, শার্টটাতে কেমন দাগ হয়ে গেছে। তাহলে আমাদের বুকের ভেতর কেমন দাগ হয়েছে বলেন তো!' জবাবে আমিও হেসেছি। কিছু বলি নি।

ঠিক ওই কথাটাই অনেকদিন আগে সাদা চায়ের কাপের ভেতরে লালচে হয়ে যাওয়া দাগ দেখিয়ে আরও একজন বলেছিল। আমি সেদিনও স্মিত হেসেছিলাম। হাসিতে চায়ের জন্যে প্রশ্রয় ছিল।
চা খাওয়াটা আমার জন্যে বিলাসিতা নাকি প্রয়োজন এটা একটা কঠিন প্রশ্ন হতে পারে। আমি তাই একে অভ্যাস বলে চালিয়ে দিই আর সবার মত।

চা খাওয়ার জন্যে কাপের চাইতে মগ পছন্দ আমার। আর সেটা কাঁচের হওয়া চাই। কিন্তু তারপর মগের প্রতি কেমন একটা মায়া জন্মে যায়। কাঁচ তো ভঙ্গুর, তাই অনেক মগই কোনও না কোনভাবে ভেঙেছে। তখন নতুন আরেকটা মগ আসত। কিন্তু ভেঙে যাওয়া মগটার জন্যে বুকের কোন্ কোণে যেন কষ্ট লুকিয়ে থাকত। ধীরে ধীরে সে মগের রঙ, আকৃতি, ডিজাইন ইত্যাদি ভুলে যেতাম।

কিন্তু জানো, এই এবার যে মগটি ভাঙল সেটির কথা ভুলতে পারছি না কিছুতেই। প্রথমত, ধবধবে সাদা আর খুব দামী ওই মগটা আমার বড় পছন্দর ছিল। আমাকে বুঝত ও। জানতো চায়ে কতটা উষ্ণতা আমার পছন্দ। দ্বিতীয়ত, আমার অপরূপ ওই চায়ের মগটি তুমি তোমার ধাতব নল দিয়ে ভেঙেছ।

অতটা উঁচু থেকে চা ঢালতে নেই জেনেও তুমি ঢেলেছ। আর মগ পূর্ণ হতেই শেকল ছেঁড়া লিফটের মত মগের ঠোঁটে ঝাঁপিয়ে পড়ার তোমার কেন দরকার হল সে আমি এখনও বুঝে উঠতে পারি না। মগের ঠোঁটে তো ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেতে হয়, এই নিয়ম। এই নিয়ম মানলে তবেই হয় চা খাওয়া। তুমি কেন নিয়ম ভাঙলে কেটলি? চা তোমার বুকের ভেতরে থাকে বলে?

অথচ চা তৈরিতে তোমার যে প্রচণ্ড পরিশ্রম তাতো আমি কখনও অস্বীকার করি নি। বুকের ভেতরে পানি নিয়ে চুলোর ওপর তুমি বসে তারপর সে পানি গরম কর। পানি যখন টগবগ করে ওঠে তখন চায়ের পাতার নির্যাস তুমিই মেলাও চায়ে। চুলোর আগুনের যে উত্তাপ তুমি ধারণ কর তাতেই চিনি গলে গিয়ে মিশ্রিত হয় সদ্য চা হয়ে ওঠে পানি। তোমার পুরো প্রক্রিয়াটিই জানি আমি।

কিন্তু তুমি আমার বহু পরিশ্রম করে চা পাতা, বিশুদ্ধ পানি, দুধ, চিনি সংগ্রহ করাটাকে মনেই রাখ নি। রাখ নি বলেই আমার অমন মহামূল্যবান অপরূপ চায়ের মগটি তুমি নির্দয়ের মত ভেঙে ফেলতে পেরেছ।

আমি কিছুই বলব না। আমি বুঝতে পেরে গেছি তোমার মত চমৎকার চায়ের কেটলিতে নির্মিত চা আমার ঠোঁট দাবি করে না হয়ত। আমাকে তরকারির হাড়িতেই চা করে খেতে হবে। তাই হোক তবে। সে কারণেই ভাবছি এখন টি ব্যাগের চা আনব। সাতকাহন করে আর বানানোর ঝামেলায় যাব না। তাতে কেবল পানি গরম করলেই চলবে। তুমি থাক আমার শেলফে। নিয়মিত তোমাকে মেজে ঝকঝকে করে রাখব। যেমন সব সময় রাখতাম। আমি এখন ছিপছিপে সুশ্রী আর টাটকা টি ব্যাগ খুঁজছি।
যাই এখন। শুভ কামনা। ভালো থাকবে।

ইতি
আমি
তোমার চা-খোর প্রেমিক।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×