somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি ও নারী

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- কি চাও কবি? বল তো কি চাও আমার কাছে?

- কিছুই চাই না নারী। কিচ্ছুটি নয়।

- তাহলে সারাটাক্ষণ আমার পেছন পেছন ঘুরঘুর কর কেন এত?

- পরিব্রাজক বলে।

- আরে!

- কি?

- কবি তুমি। নও?

- কবিতা তো তুমিই। তুমিই নির্মাণ কর কবি। আমি তো নিরেট গদ্য।

- তবে যে পরিব্রাজক হতে চাইলে? শিলংয়ের পাইন বন বুঝি আমি!?

- তা নও, নারী তুমি। তীর্থ তুমি।

- হাহা! সে আবার কি রকম!?

- জানো তো, তীর্থ মানে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র জয় করতে হয়। তখন ঘরদোর আর জাগতিক সকল সম্পদ ছেড়েছুঁড়ে পবিত্র জায়গায় চলে গিয়ে...

- হাহাহা... মানে কি! আমি পবিত্র তীর্থস্থান?

- হ্যাঁ।

- আরে!

- সত্যিই তাই। জানো তো, আত্মার সত্য প্রকৃতি অবগত হলে পরেই সর্বজ্ঞতা অর্জন করা যায়।

- কি যে বল কবি! কিছুই বুঝি না। সর্বজ্ঞ হতে চাও তবে?

- আমি সর্বজ্ঞতা চাই নি নারী। সর্বজ্ঞ নইও আমি। আমি কেবল আমাকে জানতে চেয়েছি।

- বেশ তো! জেনে নাও না নিজেকে। তাতে কবি থেকে পরিব্রাজক হয়ে উঠে আমাকে তীর্থ বানাতে হবে কেন! বল দেখি?

- তোমাকে দেখেই যে জেনেছি নিজেকে।

- আরে! এ আবার কি রকম!?

- সেই যে আকাশ বজ্রকে ছুঁড়ে মেরে সপ্তদশী মেঘকে যেদিন বলেছিল, ‘উঠ্ ছুড়ি তোর বিয়ে।’ খুব কান্নায় বুক ভাসিয়েছিলে সেদিন। আর আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম...

- হ্যাঁ, মনে আছে কবি। আকাশের আদেশ অমান্য করবার সাহস সেদিন ছিল না মেঘের।

- হুঁ, তোমার চোখ দিয়ে সেদিন নির্দয় পুরুষতন্ত্রর অমানবিকতা আর কঠিনতা উপলব্ধি করে খুব বিস্মিত হয়েছিলাম।

- তাতেই বুঝি আমাকে তীর্থ বানিয়ে তোমার পরিব্রাজক হতে ইচ্ছে করল?

- তা নয়। বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে যাবার পর মেঘ ভাবলো, যা হবার হয়েছে। এরপর বজ্রের বিদ্যুৎকে উপেক্ষা করে, মেঘ ঠিক করল বৃষ্টি হয়ে ঝরবে। ঝিরঝির করে একটু ঝরতেও শুরু করেছিল। আর তখুনি আচমকা ঝড়ো হাওয়া। প্রবল বেগে বজ্রপাতে সাইক্লোন। বৃষ্টি ঝরাতে প্রস্তুত গুছিয়ে থাকা মেঘকে লম্পট বজ্র লন্ডভন্ড করে দিল একেবারে। সেটা দেখে তোমার পাঁজরের হাড়গুলো কেমন সশব্দে ভেঙেছিল, মনে আছে? আমি নিজের পাঁজর ভাঙার শব্দে তোমার সে ব্যথা আর যন্ত্রণা অনুভব করেছিলাম নারী।

- হ্যাঁ কবি, আছে মনে। তাহলে তো জানোই, সেদিন মেঘের ঝরানো বৃষ্টিগুলো মুহূর্তেই কেমন অশ্রু হয়ে উঠেছিল।

- না, জানি নি। তুমি না থাকলে জানাও হোতো না। তুমি কি আশ্চর্য্য দক্ষতায় মুহূর্তেই হৃদয় দিয়ে শুষে নিয়েছিলে মেঘের সকল অশ্রু! কেউ বুঝতেই পারে নি! কেবল আমিই দেখেছিলাম, তোমার দু চোখ কি অদ্ভুত দক্ষতায় খিলখিল করে হাসতে হাসতে সে সকল অশ্রুদের বাষ্প বানিয়ে দিল! হায় নারী! কি করে পারো অমন! বল দেখি!?

- কি আশ্চর্য্য কবি! তুমি জানলে কি করে!?

- সকলে যখন তোমার বাইরের হাসি দেখছিল, আমি তখন তোমার বুকের ভেতরে হৃদপিন্ড কামড়ে থাকা যন্ত্রণার দিকে তাকিয়েছিলাম যে!

- জানো তবে! তাহলে তো এও জানো কবি, সে যন্ত্রণা হৃদপিন্ডেই বাসা বেঁধেছে। ছেড়ে যায় নি কোনও দিনও।

- জানি। এও জানি, নিঃসঙ্গতায় অসহ্য তোমার ভেতরটা খা খা করছিল। ভালোবাসা জানো নি তুমি। বুকের গহীণ গোপনে ভালোবাসা পুকুরটার গভীর আর স্বচ্ছ জল আজলা ভরে তোলে নি কখনও কেউ। উথাল পাথাল লাগে নি ঢেউ। খড়কুটো পেলেও পুকুরের জল জাপটে টেনে ধরে গভীরে নিয়ে প্রলেপ খুঁজতে চায়।

- তাও জানো দেখছি! কেন অন্তর্যামী হতে চাও কবি?

- চাই না। চাই নি আসলে। কিন্তু জেনে গেছি।

- কেউ তো জানতে পায় নি কখনও! তুমি কেমন করে জানলে! বল তো কবি?

- তোমার বুকের ভেতরটা আমার খুব যেন পরিচিত যেন! যেন অনেক অনেকদিন ধরে চেনাজানা। কেন বল তো?

- কেন কবি?

- তুমি নাকি সৌরজগতের রহস্যতর? তুমি মেলে না দিলে কি করে জানবো নারী?

- না কবি, মেলে দিই নি। কিন্তু... কিন্তু তুমি... তুমি এমনভাবে সামনে এসে দাঁড়ালে; যে মন বলল, তুমিও খুব চেনা... যেন অনেকদিনের...

- কি করব বল নারী! তুমি বলেই যে ওভাবেই দাঁড়াতে হয়। তোমার আকর্ষণ উপেক্ষা করবার শক্তি যে নেই কারও।

- আকর্ষণ না ছাই! কিছু নেই আমার। তুমি কবি বলেই...

- তাই বুঝি সত্যি সত্যিই খড়কুটোই ধরে পুকুর জলে স্নানে ভিজিয়েছ?

- আসতে অনেক দেরী করে ফেললে কবি! আরও আগে কেন এলে না, বল তো? বল কবি?

- না, দেরী করি নি। এই বিশ্বব্রহ্মান্ড বড় হিসেবি হে নারী! পৃথিবীর কক্ষ যদি সূর্যর আরেকটু কাছে হতো, সব জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যেত। যদি একটু দূরে হতো, সব জমে বরফ হতো। বড় চুলচেরা এর হিসেব। যেখানটাতে থাকলে প্রাণের প্রাণী বুকে ধারণ করে প্রদক্ষিণ করতে পারবে, ঠিক সেখানটাতেই রয়েছে সে। তেমনি আমার যখন তোমার কাছে আসবার ক্ষণ, তখনই নিয়ে এসেছে। এ তারই চুলচেরা হিসেব নারী।

- কিন্তু কবি! আমার যে উপায় রইল না! আমার যে তোমার তীর্থ হওয়া হবে না!

- হায় নারী! এই বুঝলে তবে! হও নি কি? হয়েছ তো! তোমার দৃষ্টি দিয়ে হৃদপিন্ড হয়ে ধমনীতে প্রবাহিত হতে হতে স্পন্দনে গিয়ে মিশেছি, টের পাও নি বুঝি?

- হায় কবি! কি নিষ্ঠুর আমি!

- না নারী, তুমি নিষ্ঠুর নও, তুমি অসহায় নও, উপায়হীনও নও তুমি। তুমি অনিন্দ্য অবয়বে শৈল্পিক খাঁজে মানবী নও কেবল। যন্ত্রণায় মোড়া কাব্যিক হৃদপিন্ড সর্বস্বও নও তুমি। পূর্ণাঙ্গ মানুষ তুমি। বাইরেটা গদ্য হলে ভেতরটা যার পদ্য। পদ্য দিয়েই রচিত হয় গদ্য। এই যেমন, আমাকে দিয়ে রচিত তুমি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×