somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মানুভূতিতে ক্রমাগত আঘাত বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর নীল-নকশার অংশ কিনা................. সময় হয়েছে খানিক ভেবে দেখার

১২ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রধান দেশে হিজাব পরিধান শরীয়তের অলঙ্ঘনীয় বিধান। অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে ছাত্রীদের হিজাব পরিধান ও তাদের নামাজ আদায়ে বাধাদানের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাবকে কলেজে নিষিদ্ধ করে এবং নামাজঘরে তালা দিয়ে দেয়, যা মারাত্বক উদ্বেকজনক ঘটনা। এখানে সবচেয়ে মারাত্বক আশাঙ্কার বিষয় হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো অবাধ নিরপেক্ষ প্রতিষ্টানে, মন ও মননের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, আত্মিক পরিশুদ্ধতা লাভের অনুকূল পরিবেশে এইরকম জঘন্য এবং চরম অমানবিক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে চলছে নিয়মিত বিরতিতে। এই সব হীন কর্মকান্ডগুলো ঘটে চলছে অনবরত কিছু জ্ঞানপাপী অসহিষ্ণু শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা- কর্মচারীদের আপত্তিকর কথাবার্তায় কিংবা অ-শিক্ষকসুলভ আচরন ও কর্মকাণ্ডে। ক্রমাগতই ইসলামবিদ্বেষী অসুস্থতায় সংক্রমিত হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম প্রধান নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে।

এই কাজটি আমরা দেখে এসেছি বিগত দিনগুলোতে অপরাপর অমুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে, যা বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘটেছে এবং তা ঘটতেই পারে। যেমন ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন করে হিজাব নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানকার ধ্যান-ধারণায় হিজাব তথা ইসলাম আধুনিকতার পথে বাধা। আধুনিকতা! ও নারীমুক্তি!র তথাকথিত ফেরিওয়ালাদের বা সুশীলদের দৃষ্টিতে ইসলাম নির্দেশিত পরিধেয় ব্যবস্থা বিশ্বের উন্নতি আর অগ্রযাত্রার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় কিন্তু আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে তা খুবই বেমনান ও অশুভনীয় এবং তা অমার্জনীয় বটে। এখানে খুবই উদ্বেগজনক ও রহস্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ঐ সব অনৈতিক, অমানবিক ও অমার্জনীয় কাজগুলো বর্তমানে সংগঠিত হচ্ছে ব্যাপক হারে এই সরকারের আমলে। এই সাড়ে তিন বছরে এর প্রবণতা বাড়তে বাড়তে সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলছে অনেক আগেই। গণমাধ্যমের বদৌলতে এই সব অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বেশ কিছু আমরা নিয়মিত জানতে পারছি এবং তা জেনে বিচলিত ও মর্মাহত হচ্ছি ক্রমশ। প্রায়ই শোনা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলাম ও রাসুল (স.) কে নিয়ে ব্যঙ্গ ও কটূক্তি করা হচ্ছে।

আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম চর্চার সুতিকাগার হিসাবে ইসলামী ফাউন্ডেশনকেই ধরা হয়। বর্তমানে মনে হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইসলাম চর্চা না করে ইসলামের অবমাননাতেই বেশী মনোনিবেশ করে আছে। ইদানিং কালে বর্তমান ইফার ডিজির প্রতক্ষ্য মদদে প্রায় প্রতিটি ইমাম প্রশিক্ষনে বিনোদনের নামে অশ্লিল নৃত্যের আয়োজন করে, বেপর্দান নারী দ্বারা ইমামদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্হা করে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম জনগনের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে। এর শান্তিপুর্ন প্রতিবাদ সত্বেও এই সব ধৃষ্টতা ও হীন তত্পরতা অব্যাহতই রয়েছে, যা রীতিমত উদ্ভেকজনকই বটে।
পাশ্চাত্য ও ইউরোপে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ইচ্ছে করেই হেয় করা হয়, হচ্ছে বারংবার। সেই ৯/১১ এর পর থেকে এই কাজটি তারা রাষ্ট্রীয় ভাবেও করে আসছে জোরেশোরে। প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে তারা হত্যা করছে অসংখ্য মুসলিমকে, মুহুর্তেই তছনছ করে দিচ্ছে রাষ্ট্রকে। আর এই সব কাজে তারা অন্যান্য রাষ্ট্র বা সরকারকে কাজে লাগাতেও বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিশেষ করে চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের ঘটনায় তার পরোক্ষ যোগসূত্র একবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

হাতে তসবি, মাথায় হিজাব দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এর আগে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছিলেন। কিন্তু এবার ক্ষমতায় আরোহণ করেই তার সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে একের পর এক যেসব ইসলাম বিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাতে সেই সব ইসলাম ও মুসলিম বিদ্ধেষী সাম্রাজ্যবাদী আর চাণক্যবাদীদের সেবাদাস হিসেবে তাদের স্বরূপ ক্রমশই উন্মোচিত হয়ে পড়ছে। সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা মুছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র স্থাপন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, কোরআনবিরোধী নারীনীতি অনুমোদন, কন্যাসন্তানকে সম্পূর্ণ সম্পত্তি দেয়ার ঔদ্ধত্য প্রদর্শন সর্বশেষ কোরআন পরিবর্তনের অপচেষ্টাসহ আন্তঃধর্ম বিয়ে আইন ঘোষণায় ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন তত্পরতায় দেশকে ধর্মহীন করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এই সরকার। বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা আমদানি করতে গিয়ে এদেশের জাতিসত্তায় ধর্ম হিসেবে ইসলামের ভূমিকাকে খাটো ও খেলো করে ফেলতে চাইছে। নামাজঘরে জুতা পায়ে প্রবেশ, শ্রেণীকক্ষে ইসলাম ও রাসুল (সাঃ) এর অবমাননা, তারই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ হীন বহিঃপ্রকাশ।

কিছু দিন আগে একজন হিন্দু ভদ্রলোক মুসলমানের পবিত্র ধর্মগ্রন্হ কোরআন শরীফ এর আয়াত নিয়ে হাইকোর্টে রীট করে যা ৯০% মুসলিম অসহায় ভাবে শুধু চেয়েই দেখেছে। মুসলিম প্রধান দেশে এই ঘটনা ঘটা এর চেয়ে লজ্জা আর অপমান আর কিইবা হতে পারে!! তারপরও এদেশের অসাম্প্রদায়িক, বন্ধুভাবাপন্ন মুসলিম জনগন কোন অপ্রীতিকর কাজ করেনি যা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রথম সারির দেশগুলোতেও আশা করা যায় না। এরকম ঘটনা আমাদের পার্শ্ববতী দেশে তাদের ধর্ম নিয়ে ঘটলে লন্কাকান্ড বেধে যেত। কেননা বহু ভাষাভাষি আর বহু ধর্মের মানুষের বাসস্হান হওয়া সত্বেও কেবল মাত্র হিন্দুরাই বিভিন্ন অজুহাতে অসংখ্যবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিঁয়েছে। এমন কি শান্তির ধ্বজ্বাধারী আমেরিকায়ও ৯/১১ এর ঘটনার জন্য অন্যায় ভাবে মুসলিম সমাজকে দায়ী করে এর প্রতিশোধ ও মুসলিমদেরকে অপমান করার জন্য প্রকাশ্যে জনসম্মুখে তাদের ধর্ম যাজকরা পবিত্র ধর্মগ্রন্হ 'কোরআন' পুড়িয়েছে। এই রকম অসংখ্য জঘন্য ঘটনা সত্বেও যা আমাদের দেশে এর বিস্তার কখনও ঘটেনি। তার জন্য সমস্ত কৃতিত্ব অবশ্যই এদেশের সমস্ত অসাম্প্রদায়িক শান্তিপুর্ন মুসলিমদেরই এবং তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবীদার। কিন্তু সবচেয়ে বড় আশান্কার বিষয় হচ্ছে, কখনও যদি কোন অবস্থায় কোন মুসলিম শিক্ষার্থী বা কোন অসহিঞ্চু মুসলিম জনগন চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে কোনরুপ জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং এর প্রতিবাদ ও প্রতিশোধ নিতে রাজপথে নেমে আসে তাহলে এর দায়দায়িত্ব কে নিবে?

এর জন্য যেকোন অপ্রীতিকর বিশৃঙ্খল কাজ যদি ঘটে তবে তার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারই দায়ী হবেন। শুধু ইসলামই নয়, যে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধেই বিষোদগারের মাধ্যমে গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সব ধার্মিক মানুষকেই খাটো ও অপমান করা হয়। এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্য সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেক্টরে সহাবস্হান ও শান্তিপুর্ন পরিবেশ বজায় থাকে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্হা সরকারকেই নিতে হবে এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরো অধিকতর দূরদর্শিতা দেখাতে হবে।



সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:৫৫
২১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×