যাপিত জীবনের গল্প কিংবা ভ্রমন ব্লগ পোস্ট পড়তে আমার বরাবরই খুব ভালো লাগে, ছবি সহ হলে তো মনে হয় ভালোলাগায় ভিন্নমাত্রা যোগ হয়। অন্যের পোস্ট পড়তে ভালো লাগলেও নিজে লেখার বেলায় বিগত কয়েক বছরে একদম লবডংকা! এর পেছনের অনেক কারনের মাঝে অন্যতম হল ব্লগে লগিন সংক্রান্ত এবং ছবি আপলোড সংক্রন্ত ঝামেলা। সকল কিছু ছাপিয়ে ভেবেছি এবার কক্সবাজার ভ্রমনের টুকটাক কিছু গল্প বলি।
পূজোর ছুটিতে যাওয়া হবে কী হবে না এসব ভাবতে ভাবতে ঠিক হল যাবো। ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে প্রথমে বাড়ী এরপর ৩০-৩৫ কিমি দক্ষিনে কক্সবাজার হলেও ঠিক হল আগে কক্সবাজার কন্যাদের ঘুরিয়ে আনবো। ঠিক হল আগে দুইবার ওঠা হোটেলে না গিয়ে অন্য হোটেলে উঠবো, সেইভাবেই কন্যাদের বাবা পরিচিত একজনকে ফোন দিয়ে ঠিক করলেন।
রুমে ঢুকে টুকটাক এদিক সেদিক পছন্দ না হলেও একদিনের ব্যপার বিধায় মেনে নিলাম। সকালে নাস্তা করে বেড়িয়ে পড়লাম সাগর পাড়ে ঘুরতে।
সাগর পাড়ে এলেই মন চনমন করে ওঠে

সংসার পেতে ব্যস্ত সময় খুব ভালো যায়।

(দূরে একটা হোটেল দেখা যায়, এর কথা একটু পরেই বলবো)।
বিকেলে রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ডে ঘুরেফিরে হাতী ঘোড়ায় চড়ে ফেরার পথে ঘটল বিপত্তি!

কন্যাদ্বয় অযৌক্তিক দাবিদাওয়া পেশ করলে কিছু পূরণ করে কিছু ভুজুং ভাজুং দিয়ে নিয়ে আসলাম। একজন মেনে নিলেও অন্যজন একের পর এক ইস্যু তৈরি শুরু করল। এক পর্যায়ে ঠিক হল আগে দুইবার যেই হোটেলে উঠেছিলাম সেখানের ফ্রায়েড রাইস ভালো লেগেছিল সেটাই নিয়ে হোটেলে রুমে ফিরবো, রাতের খাবার হবে। প্ল্যান মাফিক হোটেলের সামনে রিক্সা থেকে নামতেই এতক্ষণ কান্নাকাটি করা কন্যা কান্না থামিয়ে বলছে "মা আমরা কক্স বাজার এসেছি?" প্রথমে ওর কথার অর্থ না বুঝলেও চকিতে মনে পড়ল গত বছর পূজোর ছুটিতে এবং তার আগেও এক ঈদের ছুটিতে এসে এই হোটেলেই উঠেছিলাম সেই স্মৃতি নাড়া দিয়েছে ওকে। ওদের বাবা যখন বলে ৪বছরের সময়ে তাঁর বাবার সাথের স্মৃতি মনে আছে হেসে উড়িয়ে দিয়েছি এই বলে যে ঐসময় আরো বয়স্ক ছিলেন। কিন্তু আমার ৪বছর বয়সী কন্যার ৩বছরের সময়ের স্মৃতিচারণ করতে দেখে কিছু সময় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম! যাক সমস্যা বাঁধল খাবার পার্সেল নিয়ে ফেরার সময়। কন্যা আবার কান্না জুড়ে দিল "আমি ঐ কক্স বাজার যাবো না, আমি শুদু এই কক্স বাজার থাকবো" বলে। বুঝলাম বর্তমান হোটেলে যেতে চাইছে না। বললাম এই কক্সবাজার কীভাবে থাকবো আমরা? আমাকে আরেকবার বাকরুদ্ধ করে দিয়ে কন্যা লিফট দেখিয়ে বলল "একান দিয়ে রুমে যাবো চলো" । ওর আগ্রহ দেখে রিসেপশনে জিজ্ঞেস করলাম কোন রুম ফাঁকা আছে কিনা, কিন্তু তারা জানালো ফাঁকা নেই। আগের দুইবার যেই রিলেটিভ এর মাধ্যমে বুকিং দেওয়া হয়েছিল হয়ত তাকে বললে ব্যবস্থা হতো কিন্তু আরো মন টানছিল কেবল বাড়ীতে গিয়ে রিল্যাক্স করতে এবং পরদিন সকালে উঠেই কন্যারা ব্যস্ত হয়ে ওঠে বাড়ীতে যাবার জন্যে।
এই হচ্ছে আমার কন্যার কক্সবাজার!

পরদিন সকালে একপ্রকার জোর করেই সাগর পাড়ে নিলেও পানি এবং দেখে তারা আর স্থির থাকতে পারে না

ইচ্ছে মত দাপাদাপি করে, লবন পানি খেয়ে পরে এক প্রকার জোর করে তুলে আনতে হয়

বললাম দেখো ঘোড়া ঘুমাচ্ছে। আমার কথার উপর ভরসা না করে নিজেরাই পরিবীক্ষণ করে ঘোষণা দিল "উই যে চোক খোলা, গুমাচ্চে না"!

এবারের মত সাগরকে বিদায় জানিয়ে বাড়ী ফেরার পথ ধরলাম। হাইওয়ে দিয়ে না গিয়ে খুরুশখুল এর ভেতর দিয়ে গেলে বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র দেখা যায়,প্রতিবার এই পথ আমার কাছে অসাধারন সুন্দর লাগে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঐ পাখাগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম 'আমি একটা পাখা ধরে ঝুলছি আর পাখাটা আমাকে নিয়েই ঘুরছে, কেমন হবে!' দৃশ্যটা কল্পনা করে নিজেই একচোট হেসে নিলাম।

পথে চলতে চলতে মামাশ্বশুর, খালা শ্বাশুড়ীর সাথে দেখা করে তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বাড়ী এসে পৌছালাম।
কন্যাদের বায়নায় নৌকায় চড়তে শাপলা বিলে গিয়েও মজা হল অনেক, সাথে সাজা স্বরুপ নতুন জামা শাপলায় নষ্ট হল এক কন্যার! তাও কিছু দারুন স্মৃতি যোগ হল।
এই পোস্টটি উৎসর্গ করলাম ব্লগার বন্ধু বিজন রয়কে, যার উতসাহ মূলক মন্তব্যে অনেকদিন পর এরকম ছবি সহ কিছু গল্প বলার আগ্রহ পেয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


