সম্প্রতি বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা কিংবা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া চোখের সামনে পড়লেই একটা বিষয় খুব বড় ভাবে দৃষ্টিগোচর হয়; আর তা হলো যুদ্ধাপরাধীর বিচার অবিলম্বে করতে হবে। এই বিচারের দাবী প্রথমত বাম বা সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ও চেতনায় বিশ্বাসী একটি শ্রেণীর। তার সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা কতিপয় ব্যক্তিবর্গ যাদের পরিচয় সুশীল সমাজ হিসেবে। ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়নি। নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন নয় বছরের ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান লে.জে.(অব.) হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ, ৪দলীয় জোট মনোনীত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে বিএলডিপি নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধের কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ আরও অনেকে। যাদের নাম এখানে উল্লেখ করা হলো তারা সবাই কোন না কোনভাবে জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একসাথে একই মঞ্চে অংশ নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে এদের বর্তমান অবস্থান এবং রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে আমার কিছু বিক্ষিপ্ত বক্তব্য দেশের চিন্তাশীল মানুষের কাছে পেশ করলাম-
ক.
১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারী মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করে যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে পূনঃনির্মাণের জন্য সকল ভেদাভেদ ভুলে কাজ করার যে সুযোগ করে দিয়ে জাতিকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তা বিশ্ব ইতিহাসে সত্যিই বিরল। জাতীয় নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান কতৃêক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দেশের কোন রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তিবর্গ তখন এ ব্যাপারে কোন প্রকার আপত্তি তোলেনি। তাছাড়া ১৯৭২ এর সংবিধানে যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে কোন প্রকার বক্তব্য সংযোজিত করেনি সেই সময়ের আওয়ামী সরকার। আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ততকালীন আওয়ামীলীগ নেতা দেশের স্বনামধন্য আইনজীবী ড. কামাল হোসেন এই সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরব ভূমিকা পালন করেছেন। আজ যখন তাঁর মুখে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর বিচারের ব্যাপারে বক্তব্য দিতে দেখি তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তখন কেন তিনি এব্যাপারে বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা হিসেবে কোন প্রকার ভুমিকা রাখেননি। এতেই প্রমাণ হয় যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়েই নিষ্পত্তি হয়েছিল। আজ আওয়ামীলীগসহ অন্যান্য দল বা ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে বক্তব্য দিয়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান কতৃêক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাকে কলংকিত করছেন। আজ যারা এতো বছর পর যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিচ্ছেন; তাদের উচিত স্বাধীনতা উত্তর মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। তা নাহলে মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
খ.
আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক স্বার্থে জামায়াতের সাথে বিএনপি বিরোধী আন্দোলন করেছে, ’৯০ এর গণ আন্দোলনের পর আওয়ামীলীগ এর রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী ভোট চাওয়ার জন্য জামায়াতের সাবেক আমীর আওয়ামীলীগ এর ভাষায় সবচেয়ে বড় যুদ্ধাপরাধী অধ্যাপক গোলাম আযমের বাসায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন, আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা জামায়াতের বর্তমান আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সাথে এক টেবিলে বসে বৈঠক করেছেন, শেখ হাসিনা সরকার আওয়ামীলীগের দাবী অনুযায়ী মাওলানা নুরুল ইসলামের মতো যুদ্ধাপরাধীকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করেছে, আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তার একমাত্র কন্যা পুতুলকে রাজাকার পরিবারের কাছে বিয়ে দিয়েছেন, তখন আওয়ামীলীগ কিংবা তাদের সতীর্থরা জামায়াতকে রাজাকার কিংবা যুদ্ধাপরাধী মনে করেননি। ১৯৭৫ এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২৩ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যেয়ে মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এর হত্যার বিচার কার্যক্রম চালু করে হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন। আজ প্রশ্ন দাঁড়ায় সেই সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠ আওয়ামীলীগ কেন জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করলেন না। যুদ্ধাপরাধীর ধুয়া তূলে মূলত জাতিকে বিভক্ত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় সাধারণ ক্ষমার মধ্য দিয়ে প্রায় ৩ যুগ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে একসাথে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সর্বশেষ বৃহতদলের সাথে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি যখন একতাবদ্ধ তখনই একটি কুচক্রী মহল বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে বিভক্ত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রে বাম রাজনীতি চালু রেখে ইসলামী রাজনীতি বন্ধের দাবী শুধু হাস্যকরই নয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং বিশ্বাসঘাতকতার শামীল।
গ.
বিএনপির এক সময়ের ক্ষমতাধর নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইদানিং যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে বেশ সরব বলে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পাচ্ছে। ইতিহাস বলে তার মুখেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবী শোভা পায় না। কারণ, ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী যখন ৪দলীয় জোট সরকারের মনোনীত রাষ্ট্রপতি হন তখন জামায়াত এর ভোটেই তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাছাড়া তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একবারও জামায়াত কিংবা যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে কোন বক্তব্য রাখেননি। শুধু তাই না যখন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দল গঠন করেন তখন তার দলে শাহ আজিজের মতো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী লোকের স্থান হয়েছিল। তখন ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে কোন প্রকার অবস্থান নেননি। শাহ আজিজ শুধুমাত্র জিয়ার দল করেনি; তিনি এদলের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন এবং পরবর্তীতে জিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। তখন কোথায় ছিল ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আজকের ভূমিকা। আর এ কারণে হঠাত তার এ বক্তব্যে রাজনৈতিক মহল বিস্মিত হয়েছে। আর একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি কোথায় ছিলেন; কিইবা তার ভূমিকা? মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে। নতুন প্রজন্ম আজ তা জানতে চায়।
ঘ.
নয় বছরের ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান লে.জে.(অব.) হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে অনেকটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। দেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে এই সামরিক শাসক ইচ্ছে করলেই তার আজকের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে ভাবনার বাস্তবায়ন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি কিংবা করার কোন চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন কিনা তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই রাষ্ট্র নায়ক সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার ভূমিকা কি ছিল তা দেশের সচেতন পাঠক সমাজ জানেন। সে সময় তার ভূমিকা কি ছিল তা উল্লেখ না করলে ইতিহাসকে অপমান করা হবে। লে.জে.(অব.) হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া পাকিস্তানী সৈনিকদের বিচার ট্রাইব্যুনালের প্রধান ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই আমরা বলতে পারি তার মুখেও যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে কোন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, শুধু তাই না ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যাবার পর জামায়াত সমন্বয়ে চারদলীয় জোটে তার দল জাতীয় পার্টি অংশ নিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সেই সময় এ সেনা শাসকের মনে ছিলনা যে, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ একটি যুদ্ধাপরাধী সংগঠন।
ঙ.
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে গৌরবের বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে বিএলডিপি নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর ভূমিকাও আজ জাতির কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। কারণ, তিনি বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। জামায়াত কিংবা যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে তিনি কখনো কোন দিন এভাবে ভূমিকা পালন করেননি বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। আজ তার বক্তব্য শুনে মনে হয় এ দেশের মূল সমস্যা জামায়াত কিংবা যুদ্ধাপরাধ। অথচ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কাদের সমন্বয়ে দল গঠন করেছিলেন তা নিশ্চয়ই তার জানা ছিল।
চ.
১/১১ এর কারণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাবেক সেনা সদস্যদের সরব উপস্থিতি খুব বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতিতে সাবেক সেনা সদস্যদের অংশ গ্রহণের বিরোধী নই। যদিও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আগা-গোড়াই সেনাবাহিনীকে ভিন্ন চোখে দেখে আসছে। এই সেনা সদস্যরা সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশী আলোচিত বিষয় যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে বেশ সোচ্চার। এদের মধ্যে অন্যতম মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক; যিনি সম্প্রতি হোটেল ইম্পেরিয়ালে আয়োজিত মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্মরণে একটি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনিও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বেশ জোরালো ভূমিকা রাখছেন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ ব্যাপারে জনমত গড়ার চেষ্টা করছেন বলে পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে। সাবেক এ সেনা কর্মকর্তার প্রতি আমার সবিনয় জানতে ইচ্ছে করে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সর্বোপরি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ইতিহাস কী জানেন না? যদি জেনে থাকেন তবে কেন এই অযৌক্তিক ততপরতা একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে।
ছ.
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সমন্বয়ে গঠিত সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের ভূমিকাও আমাদের অনেকটা বিস্মিত করেছে। আজ মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৩৬ বছর পরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের দাবীদার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার; যার সৃষ্টি হয়েছিল যুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে। আজ যারা এই বিষয়ে নানা দাবী তুলে কথা বলছেন, এখনই সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার; তারা সবাই সেই সময় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের দাবীদার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ-এর সাথে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের দাবীদার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর নেতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের প্রধান হিসেবে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন তার সাথে আজকের দাবীদাররা একমত ছিলেন কিনা? কিংবা একমত না থাকলে ততকালীন সময়ে এ ব্যাপারে কোন প্রকার বিরোধিতা করে কোন ভূমিকা রেখেছেন কিনা? জাতির কাছে তা স্পষ্ট হওয়া উচিত বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। তাহলেই ব্যাপারটা জাতির সামনে পরিষ্কার হবে নতুন করে বিচার দাবীর পিছনে আসল উদ্যেশ্যটা কি?
জ.
আমরা যদিও অনেকটা স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে আক্রান্ত। তারপরেও তথ্যপ্রযুক্তির কারণে এখন অনেক কিছুই আমাদের টিভি চ্যানেলসহ অন্যান্য মিডিয়াগুলো প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেয় ঘটে যাওয়া অনেক কিছু। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে দেশের সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে প্রচলিত আইন উপেক্ষার মধ্যদিয়ে গণ আদালতের নামে প্রহসন করা হয়েছিল এবং সে সময়ে এই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা কর্মীকে হত্যা করেছিল বলে জানা যায়। শুধু তাই না দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক মিল্লাতসহ কিছু জাতীয় দৈনিকের অফিসে হামলা করা হয়েছিল। এই সংগঠনটি দাড়ী-টুপি ও পায়জামা-পাঞ্জাবী পরিহিত লোকজনকে জামায়াত কিংবা শিবিরের সদস্য বলে চিহিßত করত। যার ফলে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন এমন সাধারণ মানুষও এ কারণে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে, যা ততকালীন পত্র-পত্রিকা পাঠ করলে তা প্রমাণ করে। আমরা আরও জানি ২০০১ সালে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ৪দলীয় জোটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ১৪দলীয় একটি মহাজোট গঠন করা হয় এবং রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে ৪দলীয় জোটের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে। পরবর্তী পর্যায় তারা গত ২৮ অক্টোবর ২০০৬ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে ঢাকার পল্টনে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আজ তারাই কি কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে রাজনৈতিক মাঠ উত্তাপের পাঁয়তারা করছে তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। জাতি বিনির্মাণে তাদের হাতে কোন এজেন্ডা নেই বলে একটি নন-ইস্যুকে ইস্যু হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
ঝ.
১/১১ এর পর দেশ যখন দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে তখন এর ধারাবাহিকতাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর অবতারণা করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ ঢাকার রাজপথে মানুষ হত্যার উতসব কিংবা টিআইবি’র মতে পরপর পাচঁবার দুর্নীতিতে ১ম অবস্থান, এরকম কোনটাই আমরা দেশের জনগণ আর চাই না বলে ১/১১ এর পূর্বে ফিরে যাবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, ১/১১ এর চেতনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই মূলত একটি নন-ইস্যুকে ইস্যু করে গোটা জাতিকে বিভক্ত করে ১/১১ এর চেতনার ধারক বাহকদের প্রশ্নের মুখোমুখি করার পাঁয়তারা করছে কুচক্রি মহল।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ২:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



