আমার স্ত্রী সচিবাচায়ুগ্রস্থ। ঠিক তা না বলা গেলেও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি এক ধরণের শৃংখলা ও বিশৃংখলা তার পছন্দ। র্যাকের পুরোনো বই কখনো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেন না তিনি। বইয়ের বয়স এক মাস পেরিয়ে গেলেই তা তার কাছে হয়ে ওঠে বিপদজনক। ধূলাঘটিত এলার্জিও তার নেই। তবে খুঁৎখুঁতে ব্যাপারটি আছে। পড়তে ভালবাসেন বিছানায় শুয়ে, চারদিকে বইপত্র ছড়িয়ে। যে বই পড়ছেন তা একটানা সতিদিনও তার বালিশের পাশে, বিছানার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকে। হঠাৎ খেয়াল হলে গৃহরক্ষকদের ওপর চিল্লাচিল্লি করেন। অপরিচ্ছন্নতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে দণ্ড খেতে হয় যাকে তাকে। এমনকি আমাকেও। আমার অভ্যেস, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাইরের দরজার পাশ থেকে দিনের পত্রিকাটি কুড়িয়ে নিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে যাওয়া। তারপর ঝাড়া আধাঘন্টা। যখন ফিরি তখন স্ত্রীর চোখ কটমট। তিনি অপেক্ষমাণ মিনিট পনের ধরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সকালটি শুরু হয় 'সরি' দিয়ে। কিন্তু উদ্ভট এক অভিযোগ প্রতিদিনই বিস্মিত করে আমাকে। আমার পর পর বাথরুমে গিয়ে তিনি গন্ধ পান কেরোসিনের। মাঝে মাঝে নাক ধরে ফিরে আসেন। এমন সুপরিচ্ছন্ন বাথরুম, নানান রকমের এয়ার ফ্রেশনার, এর ভেতর দিয়ে অন্যকিছুর গন্ধ পাওয়া গেলেও, কেরোসিনের গন্ধ আসার ব্যাপারটি অবাক করার মত। বাসায় আসা দু'তিনজন আত্মীয়কে আমি সময়মত বাথরুমে ঢুকিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি। কেউ কেউ ম্যাডামের পক্ষ অবলম্বন করার জন্যই বোধ হয় বলেছেন, একটু একটু কেরোসিন কেরোসিন গন্ধ পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন, ডাহা পাগলামি। কেউ বাথরুমের সব কসমেটিকসসের কর্ক খুলে আলাদা আলাদা ভাবে শুকে দেখেছেন। কিন্তু পান নি। কোথায় কেরাসিন ? তাহলে কি 'কেরোসিনোফোবিয়া' ? নতুন জন্ম নেয়া কোন রোগ ? জলাতঙ্কের মতো ? কিন্তু এই কথা তাকে কিভাবে বলি। শুনলে তো আমাকেই কেরোসিন বানিয়ে ছাড়বেন। আমি বললাম, সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম নাকের ব্যবহারটি হওয়া উচিৎ মুক্ত বাতাসে। জানালার গ্রীলে অথবা বারান্দায়। বাথরুমে গেলে আজগুবি গন্ধ পেতেও পার। রাতের ঘুম, স্বপ্ন সব মিলিয়ে কেরোসিন টাইপের কোন গন্ধের জন্য বোধ হয় তোমার নাক প্রস্তুত হয়ে থাকে। এসব শুনিয়ে কোন ফল হল না, বরং পরাজয় হল আমারই। শেষমেষ সিদ্ধান্ত হল, সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাথরুমে দৌড়নো যাবে না। পানিপুনি খেয়ে, একটু হাঁটাহাঁটি করে অতঃপর...।
দারুণ ঝামেলায় পড়া গেল। এ যেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ব্যাপার। বিষয়গুলো নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথাও বলেছি সংযত হয়ে। কি করা যাবে ? একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পুরনো অভ্যেস বাথরুমে দৌড়তে গিয়েও থমকে গেলাম। বারান্দার গ্রীল ধরে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার বিছানায় পৌঁছলাম উপঘুমে। টের পেলাম ডাকাডাকি ধাক্কাধাক্কি চলছে। ধুড়মুড় করে উঠলাম। না, তেমন কিছু ঘটেনি।
-শোনো, তোমার কেরোসিন রহস্যের কুলকিনারা মিলেছে।
-কি হয়েছে, বলতো ব্যাপারটি কি ? কেউ পিঁপড়া তাড়াতে কেরোসিন দিয়েছে দরজার কোনায় ?
-আরে না। প্রথম আলো। পত্রিকা নাকে ধরে দেখ..তো সুক্ষè কেরোসিনের গন্ধ পাও কি-না ?
জীবনের বহুদিন কেটেছে প্রেসে প্রেসে, কাগজ আর তেল কালির কোন গন্ধই অজানা নয়। তারপরও সামান্য এই রহস্য আমি উন্মোচিত করতে পারিনি। ঠিক ঠিক ধরেছে ও।
যাক বাঁচা গেল। ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। পেটের গোলমাল থেকে গ্যাস, গ্যাস থেকে জ্বালানী তেলের উৎপত্তি হয়ে গেল কি-না ?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



