মেয়েটির মুখের একপাশ থেতলে গেছে...ছোট্ট একটি শিশুর পরিবারের কেউ বেঁচে নেই...এক বাবা তিনদিন পর মফস্বল থেকে ফিরে দেখলেন নিজের স্ত্রীর ওপর তেরছা হয়ে পড়ে আছে মা, বেরিয়ে আছে প্রিয় ছোট ছেলেটির কচি হাত, মেয়ের পাঁজর বেয়ে নামা রক্তের ধারাও শুকিয়ে গেছে... একেবারে নিথর সে স্তুপ। প্রথমে শত শত...তারপর হাজার হাজার...কত আর কান্না থাকে মানুষের দেহে ? কার জন্য কাঁদবে কে ? সেখানে খোদ আকাশ কাঁদছে। জমিন বিধ্বস্ত। রাজপথ বলে আমরা যেটিকে চিনি সেটি এখন ‘শববন্দর’। আমাদের মত গাদাগাদি বসতি ছিল না ওখানে। বেশ ফাঁকা ফাঁকা। শহরের সব মজবুত ভবনগুলো এখন বলছে ‘আমরা নিতান্তই ঠুনকো ছিলাম’। স্তুপে জমা হাজারো নিথর মানুষ বলছে ‘আমরা ছিলাম একেবারেই শক্তিহীন’।
সুরা যিলযালের আয়াতগুলো বড় বেশি মনে পড়ছে, ‘পৃথিবী যখন কম্ম্পিত হবে আপন কম্পনে/আর পৃথিবী বের করে দেবে তার বোঝাগুলো/আর মানুষ বলবে এর কি হল?...’
হাইতি ! তুমি আমাদেরকে খুব বেশি দুশ্চিন্তায় ফেললে..আমরা কোথায় যাবো এখন ? তোমাদের চেয়ে খারাপ অবস্থা আমাদের। একভাবে পার হলো তোমার ওপর প্রকৃতির খড়গ...আর আমাদেরটা সামনে। আমার মূল্যহীন ক্ষুদ্রত্ব নিয়ে আমি একেবারেই চিন্তিত নই..বরং চিন্তা আমাদের প্রিয় স্বজনদের নিয়ে। আভিজাত্যে ডুব দেয়া বাংলার বহু স্বজনেরা আমার বুড়ো আঙুল দিয়েও গোণেনা পৃথিবীর শাসন...শুধু ভোগ করে পৃথিবীর ভালোবাসাগুলো। আমাদের সবুজ প্রান্তর যুদ্ধে যুদ্ধে রক্তলাল হবার ইতিহাসগুলো শুধু আওড়াই মুখ দিয়ে...কিন্তু আমরা কিভাবে ঠেকিয়ে রাখবো আমাদের ব্যাঙের ছাতার মত একটির সঙ্গে লাগা আরেকটি ভবন? সাড়ে তিন হাজার বছর পর উয়ারি বটেশ্বর নতুন কিছু খবর দেয় আমাদের...আমর পুলকিত হই শিহরিত হই। কিন্তু আমাদের এই এখন...এই সময়.. আগামী পাঁচ বছর কিংবা দশ বছর পর কোথায় যাবে? কার হাতে ধরা দেবে এই সভ্যতা ? প্রশ্নগুলো সহজ...তার উত্তর না জানা...।
খুব দেরি হয়ে গেছে। এখন কারো দোহাই মানবে না এই প্রকৃতি। পৃথিবী তার কক্ষপথে ডানে কিংবা বামে..উত্তরে কিংবা দক্ষিণে সামান্য সরলেই বরফে ঢেকে যাবো আমরা কিংবা খরায় মরুভূমি হবে এই সবুজ জমিন...পৃথিবী তুমি একটু আড়মোড়া ছাড়লেই কুপোকাত আমাদের পনের কোটিসহ ঝুঁকিপূর্ণ শত কোটি মানুষ...কোথায় যাবো আমরা ?
আজ আর শুধু প্রার্থনা নয়...আসুন প্রস্তুতি নিই...হাইতির শববন্দরের মত আরেকটি বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার এই রুগ্ন জনপদে আঁকবার....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



