পাগলু : কলকাতার এই সময়ের একটি ব্যবসাসফল ছবি
মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সারা দেশেই সিনেমা হল রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে বন্ধ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের কি হবে? বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প যখন অস্তিত্বের লড়াই করছে, তখন পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এই শিল্প আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও যেখানে কলকাতার চলচ্চিত্র শিল্পকে বলা হতো ‘মৃতপুরী’, ঠিক সেখানেই এখন আনন্দের বন্যা। প্রতি বছর কলকাতায় নির্মিত হচ্ছে অন্তত ১৫০-১৬০টি ছবি। কলকাতা শহর এবং এর আশপাশেই গড়ে উঠেছে ১০৮টা সিনেমা হল। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই নাকি আরও ৪০-৫০টি নতুন হল তৈরি হবে। অন্যদিকে, চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যাংকগুলো বাৎসরিক মাত্র ৫ ভাগ সুদে ঋণ দিচ্ছে। সিনেমা হল নির্মাণের জন্য ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায় মাত্র ৬ ভাগ সুদে। চলচ্চিত্র শিল্পের কাঁচামাল, যেমন নেগেটিভ আমদানি করতে এলসি মার্জিন দিতে হয় ৩ ভাগ। এই শিল্পের জন্য ৩৫ এমএম ক্যামেরা আমদানির ওপর কোন আমদানি শুল্ক নেই। এক কথায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতার টালিগঞ্জ চলচ্চিত্রপুরী ক্রমশ জেগে উঠছে। এখানে প্রশ্ন দেখা দিতেই পারে- ওরা পারলে আমরা কেন পারবো না? উত্তরটা খুব-ই সোজাসাপ্টা। আমাদের সরকার প্রতি বছর চলচ্চিত্র শিল্প থেকে কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও, এই শিল্পের প্রসারে কোন উদ্যোগ নিতে একেবারেই নারাজ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবেধন-নীলমনি এফডিসি বা চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন আসলে চলচ্চিত্রের উন্নতি না ধ্বংস চায়- সেটাই বোঝা মুশকিল। ক্যামেরাগুলো প্রায় অচল। শুটিং ফ্লোরগুলোর জীর্ণদশা। সাউন্ড ল্যাব ত্রুটিপূর্ণ। রিভার্স ট্রান্সফার যন্ত্র কবে আসবে তা কেউ জানে না। এখনও রিভার্স ট্রান্সফারের জন্য ছুটতে হয় মাদ্রাজ না হয় ব্যাংকক। কোটি কোটি বিদেশী মুদ্রা এভাবেই চলে যাচ্ছে। সরকারের কোনই মাথাব্যথা নেই। এফডিসি ল্যাবরেটরিতে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, এগুলো খুবই নিম্নমানের। একারণেই প্রিন্টগুলোর অবস্থাও যাচ্ছেতাই। আরও সমস্যা আছে। ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার, প্রতি বছর, অন্তত ১৫-২০ টা ছবিকে করমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে সিনেমাগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানো হচ্ছে। নতুন শিল্পীদের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে। যা আমাদের এখানে নেই। যে কয়েকটা ছবিকে করমুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর পেছনেও ছিল রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব। ‘মনপুরা’ অথবা ‘মনের মানুষ’- এর মতো ছবিগুলোকে কেন করমুক্ত করা হয়নি? একটা দেশে তখনি ভাল চলচ্চিত্র নির্মিত হবে, যখন সরকার উৎসাহ পৃষ্ঠপোষকতা দেবে। না হয় আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল, সুভাষ দত্তদের মতো গুণী নির্মাতারা বেকার বসে থাকবেন। কলকাতার স্টুডিওগুলোয় কাজ শুরু হয় সকাল ৯টার মধ্যেই। আর আমাদের এখানে? শিল্পীরাতো ঘুম থেকেই উঠেন দুপুর ১২টার পর। যারা আজকের চলচ্চিত্র শিল্পের ‘বড়’ নায়ক বা নায়িকা, উনাদের ভাবখানা এমন যেন, উনাদের ইচ্ছার ওপর চলতে হবে সবাইকে। দুঃখের সঙ্গেই বলছি, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যদি পরিচালকদের সম্মান করতে ভুলে যান, তখন কিন্তু সেই দেশের চলচ্চিত্র শিল্প যে ধ্বংসের মুখোমুখি তা বলেই দেয়া যায়। আমাদের এখানে দেখা যায়, পরিচালক সেট-এ আসেন সকাল ৮টায়। কয়েক ঘণ্টা পর অভিনেতা আসেন। প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কেউ একটু টুঁ শব্দও করতে সাহস পান না। প্রখ্যাত পরিচালক রোমান পোলানস্কি আমাকে ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন। উনার সঙ্গে হলিউড দেখার এবং ছবির শুটিং দেখার সুযোগ হয়েছে। হলিউডের বাঘা-বাঘা নায়ক নায়িকারাও সকাল ৭টার ভেতর শুটিং ফ্লোর-এ যান। আমাদের নায়ক-নায়িকারা কি তাদের চেয়েও বড় হয়ে গেছেন?
তথ্যসুত্রঃদৈনিক মানবজমিন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



