somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরাও দেবদূত

১৭ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পোষ্টটি দেয়ার ইচ্ছা ছিল দেবদূত নিয়া যখন একটা পোষ্ট ষ্টিকি ছিল তখন কিন্তু শিশু দিবসে দেয়ার জন্য দেইনি ।

ঘটনা - ১

প্রয় বছখানেক আগে কম্পিউটার আপডেট করতে আইডিবি গিয়েছি পরিচিত একটা দোকানে ।

দোকানের মালিক নিজে বসেন, আছে তিন চারজন হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার আর আছে একটা ১০/১১ বছরের ছেলে যাকে দিয়ে ছোটখাট কাজগুলা করানো হয় । আমার পিসিটা দিয়ে একটা চেয়ারে বসে তাদের কাজ দেখছিলাম । ছোট ছেলেটা তার বয়সের মতই চঞ্চল । কোন কাজের কথা বললে দৌড়ে দৌড়ে করছে । কিছু আনতে বললে দৌড় দিয়ে নিয়ে আসছে , কোথাও কিছু দিয়ে আসতে বললে দৌড়ে গিয়ে দিয়ে আসছে । আমি বসে বসে দেখছি, দেখতে ভালই লাগছে । একজন ইঞ্জিনিয়ার কিছু একটা করতে বলেছিল হয়ত কাজটা ঠিকমত হয়নি । দেখলাম টাস করে ছেলেটার গালে একটা চড় লাগিয়ে দিল । চড় খেয়েও ছেলেটা কাদেনি হয়ত এভাবে সে অব্যস্ত হয়ে গেছে, তবে যতক্ষন ওখানে ছিলাম ছেলেটার মধ্যে আর কোন চঞ্চলতা দেখিনি । কাজ শেষ হওয়ার পর ট্রলি দিয়ে আমার মেসিনটা বাইরে দিয়ে আসার জন্য তাকে ডেকে নিলাম । বাইরে এসে রিক্সা ডেকে চলে আসার সময় তার হাতে কিছু বকশিস দিলাম । ওদেরকে সবসময় বকশিস দেই কিন্তু ওইদিন কিছু বেশি দিলাম । মাথায় হাত দিয়ে বললাম ভাল থাকিস, অনেক্ষন পর তার মুখে একটু হাসি দেখলাম ।


ঘটনা - ২

কিছুদিন আগে আমার এক সিনিয়র কলিগের সাথে টেক্সি কেবে করে যাছ্চি, বনানীর লম্বা জ্যামে অপেক্ষা করছি এমন সময় ১০/১২ বছরের একটা অন্ধ ছেলে গাড়ীর জানালায় এসে ভিক্ষা চাইল, বলল স্যার আমি অন্ধ কোন কাজ করতে পারিনা আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য করুন । আমি যখন পকেট থেকে মানিব্যগ বের করছি তখন সে থেমে গেল এবং আমার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকল । পকেট থেকে ২ টাকা বের করে তার সামনে ধরতেই টাকাটা নিয়ে চলে গেল । বুঝতে পারলাম সে পূরোটা অন্ধ নয় অথবা একেবারেই অন্ধ নয় । আমার কলিগ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন মুজাহিদ আপনাদের মত কিছু লোকের কারনে ওরা প্রশ্রয় পায় । পক্ষান্তরে আপনি কিন্তু তার ক্ষতি করলেন । আপনি তাঁকে ভিক্ষাবৃত্তিতে উৎসাহিত করলেন । সিনিয়র লোক তাই কিছু বললামনা । কিন্তু এই টাকা দেয়ার পিছনে আমার নিজস্ব একটা যুক্তি আছে ।


আমার বাড়ীর কাহিনী

আমার বড় ভাইয়ের বড় ছেলেটার ১০ বছর হবে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে । তার দুষ্টামিতে সারা বাড়ির লোক অতিষ্ট । সবাই তাকে শয়তানের ওস্তাদ বলে ডাকে, কারন সে যেখানে যায় সেখানে আর শয়তানের যাওয়ার প্রয়োজন হয়না । শয়তান জানে ওখানে তার যোগ্য প্রতিনিধি আছে তাই তার আর প্রয়োজন নেই । শয়তানিতে কোন অনিহা না থাকলেও খাবার বেলায় তার যত অনিহা । খাবার সময় হলে তার দাদা তাকে খুজে এনে খেতে বসান এবং খাওয়ার বিনিময়ে পুরুষ্কার ঘোষনা করেন । যেহেতু ভাত খেতে চায়না তাই ভাত ছাড়া আর কি ব্যবস্তা করা যায় সেই চিন্তা তার বাবা - মা র ।

আমার ভাতিজা, আই ডি বি র ছেলেটা এবং বনানী অন্ধ ছেলেটা একই বয়সের, কিন্তু জীবন যাপনে কত পার্থক্য । আমার ভাতিজাকে খাবারের চিন্তা করতে হয়না, কারন তার খবারের জন্য চিন্তা করার লোকের অভাব নেই । একই বয়সের একটি ছেলে আইডিবিতে সারাদিন খেটে যচ্ছ দু মোটো খাবার জোগাড় করতে, আরেকটা ছেলে অন্ধ সেজে ভিক্ষা করছে ।
যে বয়সে তাদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে তারা অন্যের চাকরী করছে । স্বাভাবিক চঞ্চলতাটা দেখাতে পারছে না, কোন ভুল নয় কোন দোষ নয় শুধু চঞ্চলতার কারনে তাকে চড় খেয়ে শান্ত হয়ে যেতে হয় ।
বনানীর সেই ছেলেটি হয়ত অন্ধ নয় । কিন্তু কেন সে অন্ধ সাজল ? দুটা টাকা পাওয়ার জন্যইত, এই টাকা দিয়ে সে দুমোটো খাবারের ব্যবস্তা করবে । হয়ত এই বয়সে আরো দুই একজনের দায়ীত্ব তার কাদে আছে ।

কিছুদিন আগে কাওরান বাজার কিউকেস থেকে টাকা উটানোর উদ্দেশ্য যাচ্ছি । এটিএনের সামন দিয়ে বাজারের ভিতরের রাস্তায় গিয়ে উটলাম । ব্যাংকে যাওয়ার পথে দেখি একটা বিল্ডিংয়ের বারান্দায় রসি দিয়ে বেড়া দিয়ে কয়েকজন লোক কয়েকটা শিশুকে নিয়ে বসে আছে । সাইনবোর্ড লাগানো পথশিশুদের উন্নয়নে কাজ চলতেছে ভিড় করবেননা । আমি দুর থেকে কিছুক্ষন দাড়িয়ে দেখে চলে গেলাম । পরদিন একই সময়ে ঐদিকে গেলাম কিন্তু ঐ লোকগুলোকে আর দেখলাম না । বুঝতে পারলাম ওরা কোন এনজিওর লোক । পথশিশুদের জন্য কোন অনুদান পেয়েছিল, আর সেটা আত্মসাত করার জন্য এই নাটক ।

আসলে ঐ শিশুদের জন্য ভাবার কেউ নেই । শিশুর উন্নয়নে কাজ হয় কিন্তু ওদের উন্নয়নে কাজ হয়না । শিশু অধিকার আদায়ে কাজ হয় কিন্তু ওদের অধিকার আদায়ের জন্য কোন কাজ হয়না ।

কেউ ভাবার নেই বলে ওরাতো নিঃশ্বেস হয়ে যেতে পারেনা ? অন্ধ সেজে ভিক্ষা করলইবা, অমরা যদি তাদেরকে দুই একটাকা না দেই তাহলে ওরা না খেয়ে মরবেযে ।

শেষ করার আগে বলছি, ওরাও কিন্তু দেবদূত । লোক দেখানো কোন নাটক না করে ওদের উন্নয়নে সামাজিক ভাবে কিছু একটা করা উচিত । ওদের জন্য আন্তরিক ভাবে ভাবা উচিত । কারন ওদের খুব কাছের এমন কেউ নেই যে তাদের জন্য ভাল কিছু ভাবতে পারবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৩৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×