নারী ও পুরুষকে নিয়ে লেখাগুলোয় বিভিন্ন সময় তাদের মাঝের মৌলিক পার্থক্যগুলো সহজভাবে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। আসলে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সম্পর্কের জটিলতার অন্যতম বড় কারণ হলো নারী-পুরুষের মৌলিক অসামঞ্জস্যগুলোকে সচেতনভাবে অস্বীকার করতে চাওয়া। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পলিটিকালি কারেক্ট দর্শন এবং মনোভাবের কারণে তৈরি হওয়া কনফিউশনের কারণে আমার মতে পুরুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবথেকে বেশি। আধুনিক নারী ধীরে ধীরে তার অধিকার এবং ব্যক্তিগত সীমারেখা সম্পর্কে সচেতন হওয়া শুরু করলেও পুরুষ নিজের অধিকার ও সীমারেখা সম্পর্কে ঠিক ততটাই ধাঁধাগ্রস্ত হয়ে উঠেছে, অনেক সময়ই যার ফলাফল স্বরুপ সে নিজের এবং তার জীবনসঙ্গীর বড় ধরণের ক্ষতিও করে বসেছে, এই জটিলতা বেড়েই চলেছে। অথচ নারী-পুরুষের সম্পর্কের ব্যপারে উদাসীনতা যে সমাজের সবথেকে বড় বড় অপরাধ ও অন্যায় অসামাজিক কাজের প্রধাণ কারণ হতে পারে সেটা বোঝবার মত পরিপক্কতা খুব সম্ভবত জাতি হিসাবে আমরা এখনও অর্জন করেতে পারিনি। ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা একটা ট্রানজিশন অধ্যায়ের মাঝে প্রবেশ করেছে মাত্র আর এই রূপান্তর প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ হবার জন্য যে নারী-পুরুষ উভয়ের সচেতনতা কতটা জরুরী তা যতবার বলা হোক কম বলা হবে, নয়ত হটাত করে সমাজ ব্যবস্থায় বিরাট বড় একটা দুর্যোগ অবশ্যম্ভাবী।
পুরুষ এবং নারীর ব্যক্তিত্বের এই মৌলিক পার্থক্যগুলোর ব্যপারে সচেতনতা এবং এ ব্যপারে করণীয় নিয়েই আজকের এই লেখার প্রয়াস। অনেকের কাছেই হয়ত অদ্ভুত শোনাবে কিন্তু পুরুষের কাছে তার সম্পর্ক জীবনের প্রায়োরিটি খুব কম হয়, যেখানে নারীর কাছে বেশিরভাগ সময়ই অগ্রাধিকার পায় তার সম্পর্ক। পুরুষালী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষের কাছে স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার পায় তার জীবনের মিশন, আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা অথবা ব্যক্তিগত মুক্তির দিকে তার যাত্রা। অন্যদিকে নারী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন নারীর ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার থাকে তার জীবনে পরিপূর্ণভাবে ভালবাসার উপস্থিতির মাঝে, এবং সেইসাথে জীবনে এমন একজন পুরুষের উপস্থিতি যার ওপর সে তার শরীর, মন, আবেগ ও আত্মা দিয়ে আস্থা রাখতে সক্ষম। একে অপরের অগ্রাধিকারগুলো বুঝতে পেরে যখন নারী-পুরুষ একে অপরকে সহায়তা করতে শিখবে তখনই সম্পর্কের তীব্র জলস্রোত আর উত্তাল সাগরের মাঝেও একে অন্যের প্রতি আস্থা না হারিয়ে গন্তব্যে পৌছানোর দিকে এগিয়ে যেতে পারে তারা।
পুরুষ ও নারী উভয়ে মানুষ হিসাবে সমান হলেও তারা প্রাণী হিসাবে ভিন্ন। একজন নারীর হৃদয়ের কেন্দ্রস্থল তখনই পরিপূর্ণতা পায় যখন তার জীবনে ভালোবাসা কোন প্রকার জটিলতা ছাড়া বর্তমান। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে একজন নারী হয়তবা তার কর্মস্থলের পরিবেশ নিয়ে খুশি নয়, তবে তার ব্যক্তিগত জীবনে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রেমিকের সাথে তার ভালোবাসায় কোন জটিলতা না থাকলেও ওই সময়টায় সে পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট থাকতে সক্ষম। অন্যদিকে পুরুষ হিসাবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী এবং পরিবারের সাথে চরম ভালোবাসার মুহুর্তেও যদি আমাদের পেশা অথবা মিশনের সাথে আমাদের সম্পর্ক না থাকে তবেই নিজেদের আমরা যন্ত্রণা দিতে শুরু করে দেই। আর নিজের মিশনকে সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আপনি তাই প্রেমিকার সাথে সত্যিকার অর্থে অন্তরঙ্গ বা উপস্থিত হতে পারবেন না।
নারীর ব্যক্তিত্বের কেন্দ্র পরিপূর্নতা পায় ভালোবাসার মাধ্যমে। আর স্ট্রেস থেকে আপনার প্রাথমিক মুক্তি সম্ভব একমাত্র জীবনের সাথে মিশন অথবা গন্তব্যের সামঞ্জস্যতার মাধ্যমে। জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য ঠিক রেখে তবেই পুরুষ নারীর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উপভোগ করতে সক্ষম। আর সম্পর্কে ভালোবাসা একজন নারীর জীবনের বাকি সকল ক্ষেত্রকে রঙিন করে তুলতে সক্ষম। আর ভালোবাসায় জটিলতা থাকলে সে জটিলতা তার জীবনের বাকি সবগুলো ক্ষেত্রে ভোগান্তি ছড়িয়ে দেবে সেটা বলাই বাহুল্য।
তবে পুরুষ হিসাবে আপনার জন্য এ ব্যপারগুলো ভিন্ন। সম্পর্ক যখন আপনার জন্য জটিল তখন আপনি শুধু সেই মুহূর্তটির অপেক্ষায় থাকেন যে কখন আপনি বাসার বাইরে অথবা কর্মক্ষেত্রে যাবেন। কারণ সেখানেই আমরা পুরুষেরা আমাদের মৌলিকতার সাথে কানেক্ট করতে সক্ষম, মিশনকে অনুভব করতে সক্ষম এবং সেটা পরিপূর্ণ না হলেও যে সেই মুহূর্তে আপনাকে সুখের অনুভূতি দেয় এতে কোন সন্দেহ নেই। একজন পুরুষ যখন তার মিশনে পূর্ণভাবে নিমজ্জিত তখন সে তার সম্পর্কের ব্যপারে ভুলে যেতে সক্ষম।
সত্যি কথা বলতে গেলে, পুরুষের এ ব্যপারটা আরো অনেকদূর গড়াতে পারে। বেশিরভাগ পুরুষের জন্য অবচেতনভাবে হলেও তার প্রেমিকা পরিবর্তনযোগ্য। স্বীকারোক্তিটা অত্যন্ত কঠোর কিন্তু এটা সত্য। বেশিরভাগ পুরুষই মনের গভীরে অনুভব করে যে তার বর্তমান প্রেমিকা/স্ত্রী যদিও বা তার জীবন থেকে চলে যায় সে হয়ত খুব তীব্রভাবে শোক পালন করবে, তবে শেষ পর্যন্ত ঠিকই তার জীবনে অন্য কোন নারী বা প্রেমিকা আসবে। এমনকি অনেক সময়ই আমরা পুরুষেরা একজন প্রেমিকা থাকা অবস্থায়ও অন্য কোন প্রেমিকাকে খুঁজে পাওয়ার ফ্যান্টাসি বা কল্পনায় অংশগ্রহণ করে থাকি। যেহেতু একজন পুরুষের জীবনের অগ্রাধিকার তার মিশন, সে তাই এমন কোন নারীর দিকে ঝুঁকে পড়বে যে তার মিশনকে সবচাইতে বেশি সহায়তা করতে সক্ষম। আর সম্পর্কের যে কোন পর্যায়ে যদি তার মনে হয় যে অন্য কোন নারী তার মিশনে তাকে সবথেকে বেশি সহযোগিতা করতে সক্ষম তবে তার দিকেই সে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হতে শুরু করবে এতেও কোন সন্দেহ নেই, এবং অদ্ভুত শোনালেও এই পুরো প্রক্রিয়াটি অনেকটাই অবচেতন ভাবে হয়ে থাকে। চোখ কান খোলা রাখলেও হয়তবা এই কথার সত্যিটাও অনুভব করতে পারবেন যে কেউ।
বেশিরভাগ নারীর জন্য ব্যপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনি যদি এমন প্রেমিক হন যে তার নারীর হৃদয়ের গভীরে আস্থা অর্জন করেছে, যখন আপনার প্রেমিকা আপনাকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম আর আপনার অবস্থান সম্পর্কে সুনিশ্চিত, আপনাদের দুজনের আবেগ-উপলব্ধি যখন দিন-রাত এক সুতোয় গাঁথা- তার দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনি মোটেই পরিবর্তনযোগ্য নন। আপনার মত সে এত ঘনঘন অন্য কোন বিকল্প নিয়ে চিন্তা করে না, যা আপনি খুব সম্ভবত করে থাকেন। আমরা পুরুষেরা যেখানে সম্ভাবনার কল্পনার মাঝে বাঁচি, সেখানে নারী অধিকাংশ সময় তার বর্তমান নিয়ে জীবনধারণ করে। আপনার সাথে তার সম্পর্ক শুধু তার ব্যক্তিত্বের কেন্দ্রই নয়, বরং তার সামগ্রিক মেজাজ এবং আবেগের নিয়ন্ত্রণকারী।
তবে আপনার সাথে সম্পর্কের অতিরিক্ত টানাপোড়নের কারণ প্রেমিকা তার ব্যক্তিত্বের কেন্দ্রস্থলের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেললে সে আপনার সাথে তার মানসিক এবং সার্বিক কানেকশন নিয়ে বিভ্রান্ত হতে শুরু করবে। এ পর্যায়ে সে তার পুরুষালী গুনাগুণ সক্রিয় করবার চেষ্টা করবে এবং সম্পর্ককে তার প্রায়োরিটি লিস্টের নিম্নে নেবার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সে চিন্তা করতে শুরু করবে যে তাকে তার নিজের জীবন এবং ক্যারিয়ারে আরো ফোকাস করতে হবে। যদিও নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাবলম্বী হতে চাওয়াটা অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান, তবে সম্পর্কের ক্ষত যখন একজন নারী তার জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সক্রিয় ভাবে স্থানান্তর করতে শুরু করে তখন সেটা তার নিজের জন্য এবং পরবর্তী সম্পর্কগুলোর জন্য তা ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ নারীর ব্যক্তিত্বের কেন্দ্রস্থলের জন্য ভালোবাসার আদান-প্রদানের উপস্থিতিটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, তার ক্যারিয়ার অথবা অন্য যে কোন কার্যকলাপ নিয়ে সে যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন।
একটা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছাড়া- সে প্রতিটা মুহূর্ত কষ্ট পাবে। আর নিজেকে ক্যারিয়ার বা অন্য কোন শখের মাঝে ব্যস্ত রেখে এই কষ্ট থেকে দূরে রাখতে চাওয়াটাও কোন কাজে আসবে না। বরং নিজের জীবনে ভালোবাসার প্রবাহের চাহিদাকে সচেতনভাবে স্বীকার করে নিলেই নিজেকে সম্মানপূর্বক সামনে এগিয়ে যাওয়াটা তার জন্য সহজ হবে। অন্যদিকে পুরুষালী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি যখন একইভাবে নিজের গন্তব্য অথবা মিশনের চাহিদাকে সচেতনতার সাথে স্বীকার করে নেবে তখনই সে নিজেকে পূর্ণমাত্রায় সম্মান করতে সক্ষম হবে। বিভিন্ন কারণে আমাদের আধুনিক সমাজ এতটাই অ্যান্টি-ফেমিনিন হয়ে পড়েছে যে অনেক নারীই তার নিজের মৌলিক ব্যক্তিত্বকে অস্বীকার করে পুরুষালী লাইফস্টাইল অনুসরণ করবার চেষ্টা করছে। আর নারীর নিজের এই মৌলিক ব্যক্তিত্ব প্রত্যাখ্যান অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু তার হৃদয়ে শূন্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হচ্ছে, ভুল বুঝবেন না, আমি কোনভাবেই নারীর ক্যারিয়ারের বিরুদ্ধে নই, শুধু তার মৌলিক চাহিদার প্রায়োরিটির ব্যপারে সে সচেতন কিনা সেটা জানতে চাওয়াই আমার লক্ষ্য। একই কথা পুরুষের ক্ষেত্রেও খাটে, নিজের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ মিশনের থেকে যদি সে তার প্রেমিকাকে অগ্রাধিকার দেয় তবে পরবর্তীতে এই প্রেমিকাকেই তার দোষারোপ করবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় যে পুরুষের ভূমিকা কত বড় সেটাও বুঝতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষরা প্রায়ই তার ধৈর্য হারিয়ে এ কথাগুলো তার প্রেমিকাকে বলে থাকে, “তোমার জীবনে কি আমাদের এই সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই নেই? এটা কেমন কথা। অবশ্যই তোমার নিজের জীবনের উদ্দেশ্য এবং মিশন থাকা উচিৎ, ক্যারিয়ার থাকা উচিৎ। সারাক্ষণ আমাদের সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করো এবং প্লিজ গেট অ্যা লাইফ।”
যদিও এটা কমন সেন্স যে সম্পর্কের বাইরেও একজন নারীর অবশ্যই একটা আকর্ষক জীবন থাকা দরকার, তবে বিজ্ঞ একজন পুরুষ এটা বুঝতে সক্ষম যে, নারীর জন্য সম্পর্ক ও ভালোবাসা তার ব্যক্তিত্বের একদম গভীরের প্রধাণ চাহিদা। দ্যাট ইস দ্য ফ্যাক্ট।
শেষ পর্যন্ত এটুকু বুঝতে পারা অত্যন্ত জরুরী যে, পুরুষ হিসাবে আপনার কাছে অর্থনৈতিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক মুক্তি যতটা গুরুত্বপুর্ণ নারীর কাছে তার জীবনে ভালোবাসার উপস্থিতি ঠিক সমান গুরুত্ব রাখে। শুধু ভেবে দেখুন যে প্রতিদিন কতটা সময় আপনি আপনার মিশনের পিছে ব্যয় করছেন আর কতটা সময় প্রেমিকার জীবনে ভালবাসার চাহিদা পূরণের জন্য দিচ্ছেন। আপনি যদি চান আপনার জীবনের সত্যকে খুঁজে পাবার ক্ষেত্রে আপনার প্রেমিকা আপনাকে সম্মান এবং সহায়তা করুক, তবে একইভাবে তার জীবনে ভালোবাসার গুরুত্বকেও আপনার সম্মান এবং সহায়তা করে যেতে হবে। আর তার ভালবাসার প্রতি যেই নিষ্টা তা যে সত্যের প্রতি আপনার নিষ্টাকে কতটা বাড়িয়ে তুলবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সত্যের প্রতি আপনার এই নিষ্টাই তো নারীর কাছে আপনাকে করে তোলে আকর্ষণীয়।
পুরুষেরা মাঝে মাঝে সম্পর্কগুলোকে তার প্রেমিকার মত প্রাধান্য দিতে পারে না বলে অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে এটা স্বাভাবিক একটা ব্যপার। পুরুষ এবং নারীর মাঝের এই পার্থক্যকে অস্বীকার করলে বরং তা তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়িয়ে তোলে। সমস্যা আরো বেড়ে যাবে যদি নিজের প্রেমিকাকে খুশি করবার জন্য আপনি ভালবাসার অভিনয় করতে শুরু করেন। বরং নিজস্ব মিশন এবং প্রতিটি চাহিদা নিয়ে আপনার খাঁটি হতে হবে এবং জীবনকে আপনার সর্বোচ্চ উদ্দেশ্যের পথে পূর্ণ আন্তরিকতা এবং সত্যের সাথে সমর্পণ করাটাই আপনার কাজ।
মনস্তাত্বিক অথবা আধ্যাত্মিক মুক্তি যদি আপনার ব্যক্তিত্বের এক নম্বর প্রায়োরিটি হয় তবে সম্পর্ক থেকে আপনার শেখার কোন শেষ থাকবে না। আপনার ব্যক্তিত্বের মাঝের দুর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো প্রেমিকার থেকে বেশি আর কেউ আপনাকে দেখাতে পারবেনা। আর সত্যের পথে নিয়োজিত সৈনিক এজন্য তার প্রেমিকার কাছ থেকে যতটা শিখবে ততটা তার ড্রিল সার্জেন্ট অথবা মার্শাল আর্ট ডোজোর শিক্ষকের কাছেও শিখতে পারবেনা। আপনার ব্যক্তিত্বের অস্পষ্টতা অথবা স্বচ্ছতা দুটোই আপনাকে দেখিয়ে দিতে পারবে আপনার প্রেমিকা। দুর্বল পুরুষ হয়ত “আর পারলাম না” বলে হার মেনে নিবে অথবা প্রেমিকার দোষ দিয়ে মুক্ত হতে চাইবে, আর আপনি যদি এই আত্মজ্ঞানের জন্য প্রেমিকাকে সম্মান প্রদর্শন করতে পারেন তবেই বুঝবেন আপনি সত্যের পথে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন। আর আপনার প্রেমিকার মাঝে যদি তার নারীসুলভ ব্যক্তিত্ব সঠিক পরিমাণে থাকে তবে আপনার আপনার মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষত তার থেকে ভাল আর কেউ সাড়িয়ে তুলতে পারবেনা।
একইভাবে প্রেমিকা যখন নিজেকে তার হৃদয়ের গভির চাহিদার কাছে সঁপে দিবে সেটা একজন পুরুষ অনুভব করতে সক্ষম। তার দীপ্তি, বিজ্ঞতা আর পৃথিবীতে স্বর্গ গড়ে তোলার ক্ষমতা আপনাকে প্রচন্ড শক্তি দিবে- এমনকি সেটা আপনাকে ঘিরে না হলেও। প্রেমিকার ভালবাসার ইন্দ্রজাল আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে, আপনাকে রুপান্তরিত করবে। আর নিজের নারীসুলভ চাহিদাগুলোকে যদি সে এড়িয়ে যেতে শুরু করে তবে আপনাদের মাঝে দূরত্ব যেমন বাড়বে তেমনি অন্তরঙ্গতার ক্ষেত্রেও নিজেদের মাঝের সেই কানেকশন আপনারা আর অনুভব করতে পারবেন না। দুজনের মধ্যেই ব্যক্তিত্বের চারপাশে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হবে, দুজনের হৃদয়ই অনুভব করবে সবকিছু কেন যেন ঠিক নেই। বেশিরভাগ প্রেমিক প্রেমিকা এটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়ে খুব মাঝারি মানের জীবন যাপন করতে শুরু করবে।
সব কিছুর মূলে রয়েছে পুরুষ ও নারীর নিজেকে এবং একে অপরকে বুঝতে পারা, নিজের ব্যক্তিত্বের প্রায়োরিটি এবং অপরের ব্যক্তিত্বের প্রায়োরিটি দুটোর ব্যপারেই সচেতনতা। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা হলো যে এমনও হতে পারে যে আপনার প্রেমিকা/স্ত্রী একজন কর্পোরেট অফিসার এবং আপনি একজন হাউস হাসব্যান্ড। এটা কোন ঝামেলা নয় ততক্ষণ যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আপনার জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন এবং আপনার প্রেমিকার জীবনের ভালোবাসা উপস্থিত। আপনার ব্যক্তিগত মিশন যখন আপনার জীবনের সাথে এক সুতোয় গেঁথে যাবে তখনই আপনি প্রতিটা মুহুর্ত উপস্থিত থেকে ভালবাসা এবং হিউমার রক্ষা করে চলতে পারবেন। আর আপনার এই উপস্থিতির প্রধাণ প্রাপক যে আপনার প্রেমিকা হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর নারী-পুরুষ যখন একে অপরের চাহিদাগুলো বুঝতে পেরে আরো গভীরভাবে নিজেকে এবং অপরকে সম্মান ও ভালবাসতে শেখে তখনই কিন্তু তাদের মাঝের সম্পর্ক হয়ে ওঠে ঐশ্বরিক।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৯