somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের গল্পো .....

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাড়ার ছোট্ট পার্ক প্রথম থেকে

ট্রেন চলছে শ্রীমঙ্গলের পথে । জয়ন্তিকা । এ কামরার বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে নিয়েছে এ দলটি । ছেলেরা ভরা গলায় গান ধরেছে । পাড়ার ছোট্ট পার্ক , ঘাস নেই আছে ধুলো..... ঘাসের অভাব পরোয়া করেনা ...সবুজ বাচ্চা গুলো । মেয়েরা গল্পে মুখর । শুনছে আমার মায়ের মুখে এই শহরের গল্পো । আর আমি ট্রেনের দরজায় । এক পশলা ভোরের রোদ এসে পড়েছে আমার মুখে ।মনে উড়ু উড়ু ভাব । রুপি আড্ডা ছেড়ে এসে আমার নিরবতা ভাঙলো ।
কিতা করো , পরিস্কার সিলেটি উচ্চারনে বলে ও । হুঁ, কিছু না । দেরী করলে কেন ?
'ঘুম থেকে উঠছি দেরি করে । তারপর আবার রিকসা পেলাম না । অনেকদুর হেঁটে ধরেছি রিকসা ।'
একটু চুপ থেকে আমি বললাম , হুঁ, এটা এই শহরের একটা সমস্যা । রিকসা পাওয়া কঠিন ।
'এটাই সমস্যা তোমাদের রিকসা ওয়ালাদের । ঘুরে ঘুরে হাওয়া খাবে । কিন্তু প্যাসিন্জার নেবে না ।'
' আমাদের রিকসা ওয়ালা মানে কি । এখানে কজন সিলেটি রিকসা ড্রাইবার দেখছো '
' তুমি আবার ইজম টানো কেন । আমি কইছি এখানে যারা রিকসা চালায় তাদের কথা । '
'ইজম কই দেখলা । হুঁ '
' আসলেই ওরা পিকুইলিয়ার । সারাদিন সিনেমা আর খাওয়ার টাকাটা হলেই চুপ । মনের সুখে শহরে ঘুরবে । নো প্যাসিন্জার । এটা অন্যকোন শহরে তুমি পাবা না '
আমি বললাম , অন্য শহরের কথা আমি কম জানি । তারপর কও প্রথম আমরা কই যাইরাম ।
' তোর মুখে সিলেটি তো আমার ভালোই লাগে । চেন্জ না করলেই হয় ।' ওর এ এক সমস্যা এই তুই এই তুমি । বয়সে অবশ্য আমি ছোট ওর । এভাবেই সময় কাটতে কাটতে আমরা শ্রীমঙ্গল এসে পোঁছলাম । স্টেশনের যাত্রীরা অবাক চোখে দেখছে । ওদের সাথে খুব মজা করছে তুহিন ভাই । ' আমরা আইছি নাটক অর সুটিং অ '

লোকজন ব্যস্ত চোখে খুজছে নায়ক নায়িকাদের । সকাল দশটায় এই বড় গ্রুফ দেখে মজা পাচ্ছে স্থানীয় লোকজন । বিটিআর আই , চা বাগান ঘুরতে ঘুরতে দুপুরে খেয়ে নিলাম । তারপর রওনা শ্যামলির পথে । ভাড়া নেয়া হয়েছে জিপগাড়ি । কেউ ছাদে, কেউ বা ঝুলে জিপের বাম্পারে । বেচারা কন্ট্রাকটটের অবস্থা বেগতিক । ও বোধহয় তার জীবনে এমন পাগল দের পাল্লায় খুব কমই পরেছে । সবার জোরাজুরিতে বেচারা কন্ট্রাকটরের জায়গা হয়েছে ড্রাইভারে পাশে ।
...হাওয়ার সাথে চলছি আমরা । রুপি গান ধরেছে , আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছিলো চাঁদ । সবাই গাইছে ওর সাথে সাথে । আমি ও অবাক চোখে দেখছি লেবু বাগান , পানপুন্জি । ফেলে যাওয়া মানুষ । কখনোবা কমলালেবুর বাগান,সারি সারি আনারস গাছ । আমরা এসে নেমেছি শ্যামলিতে । বিকেলের নাস্তা সেরে সবাই বসলো আড্ডায় । ম্যারথন আড্ডা । বিষয় প্রিয় কথা ।
রাশেদ ভাই বলে , বাড়ির ম্যানিগ্রাম ।
মিতু আপু, এ্যাই তোর জন্য একটা ছেলে এসেছে ।
'আইরিন , খা...লা (লেডিস হলের বুয়া ) তোমার গেস্ট আ...ই...ছে । '
মামুন ভাই বলে, আমার প্রিয় কথা ....এ্যাইডা হইলো ....।
রুপি বলে, আমার প্রিয় উক্তি সিলেটি মেয়েদের মুখে ....ও ড্রাইভার যাইবা নি ??? এভাবে চলে ।
শেষ বিকেলের আলো এসে বাধ সাধে আড্ডায় । বাড়ি ফেরা পালা । ....সবার হৈ হোল্লায় মুখরিত শমসর নগরের রাস্তা ।আমরা একসময় এসে পৌছায় স্টেশনে । ট্রেন লেট । কম করে হলেও দুই ঘন্টা । রাতের আঁধার সবে ফুটছে । ছেলের খুশি । মেয়েরা চিন্তিত লেডিস হলে ডুকার চিন্তায় । আর আমি? আমার বেশ ভালোই লাগছে । ট্রেন না এলেও আপত্তি নেই । হঠাৎ করে কারেন্ট ও চলে গেলো । মানুষ এ গিজগিজ করছে শ্রীমঙ্গল স্টেশন । আমরা একটু দুরে জায়গা নিলাম । ছেলেরা অনেকে গেছে শহরে শেষ চক্কর দেবে বলে ।
কই যাস, মা আমাকে জিগ্গেস করে ।
' ব্রিজের উপরে....সবাই আচে । চিন্ত্য কইরোনা ।'
আসলে ওখানে কেউ নেই । ভাবছি ওটা দখল করা যায় । ভালোই হলো ওকে পেলাম ।
'চলো'
' কই যাবি '
' আসমানে '
ও সুবোধ ছেলের মতো আমাকে অনুসরন করে । পুরো স্টেশনে গুমোট অন্ধকার । আমরা গিয়ে জায়গা নিলাম ওভার ব্রিজে । চাঁদের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবে । নিচ থেকে মানুষের কথপকথন কিছু এসে বাজছে কানে ।
' ক্যামুন কাটলো সারাদিন'
' বললাম, ভালা । তোমার ?
'হুঁ
' আমার না এখানে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে । '
'হুঁ '
'কিতা অইলো '
'না, বলো'
'সেই কবিতাটা শুনতে চাই '
...........একমুঠো জ্যোছনা হাতে...। সেই টা ।
ইচ্ছে করছে না এখন, ট্রেনটা যে কখন আসে ?
(ডাইরি থেকে )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৩৬
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×