ট্রেন চলছে শ্রীমঙ্গলের পথে । জয়ন্তিকা । এ কামরার বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে নিয়েছে এ দলটি । ছেলেরা ভরা গলায় গান ধরেছে । পাড়ার ছোট্ট পার্ক , ঘাস নেই আছে ধুলো..... ঘাসের অভাব পরোয়া করেনা ...সবুজ বাচ্চা গুলো । মেয়েরা গল্পে মুখর । শুনছে আমার মায়ের মুখে এই শহরের গল্পো । আর আমি ট্রেনের দরজায় । এক পশলা ভোরের রোদ এসে পড়েছে আমার মুখে ।মনে উড়ু উড়ু ভাব । রুপি আড্ডা ছেড়ে এসে আমার নিরবতা ভাঙলো ।
কিতা করো , পরিস্কার সিলেটি উচ্চারনে বলে ও । হুঁ, কিছু না । দেরী করলে কেন ?
'ঘুম থেকে উঠছি দেরি করে । তারপর আবার রিকসা পেলাম না । অনেকদুর হেঁটে ধরেছি রিকসা ।'
একটু চুপ থেকে আমি বললাম , হুঁ, এটা এই শহরের একটা সমস্যা । রিকসা পাওয়া কঠিন ।
'এটাই সমস্যা তোমাদের রিকসা ওয়ালাদের । ঘুরে ঘুরে হাওয়া খাবে । কিন্তু প্যাসিন্জার নেবে না ।'
' আমাদের রিকসা ওয়ালা মানে কি । এখানে কজন সিলেটি রিকসা ড্রাইবার দেখছো '
' তুমি আবার ইজম টানো কেন । আমি কইছি এখানে যারা রিকসা চালায় তাদের কথা । '
'ইজম কই দেখলা । হুঁ '
' আসলেই ওরা পিকুইলিয়ার । সারাদিন সিনেমা আর খাওয়ার টাকাটা হলেই চুপ । মনের সুখে শহরে ঘুরবে । নো প্যাসিন্জার । এটা অন্যকোন শহরে তুমি পাবা না '
আমি বললাম , অন্য শহরের কথা আমি কম জানি । তারপর কও প্রথম আমরা কই যাইরাম ।
' তোর মুখে সিলেটি তো আমার ভালোই লাগে । চেন্জ না করলেই হয় ।' ওর এ এক সমস্যা এই তুই এই তুমি । বয়সে অবশ্য আমি ছোট ওর । এভাবেই সময় কাটতে কাটতে আমরা শ্রীমঙ্গল এসে পোঁছলাম । স্টেশনের যাত্রীরা অবাক চোখে দেখছে । ওদের সাথে খুব মজা করছে তুহিন ভাই । ' আমরা আইছি নাটক অর সুটিং অ '
লোকজন ব্যস্ত চোখে খুজছে নায়ক নায়িকাদের । সকাল দশটায় এই বড় গ্রুফ দেখে মজা পাচ্ছে স্থানীয় লোকজন । বিটিআর আই , চা বাগান ঘুরতে ঘুরতে দুপুরে খেয়ে নিলাম । তারপর রওনা শ্যামলির পথে । ভাড়া নেয়া হয়েছে জিপগাড়ি । কেউ ছাদে, কেউ বা ঝুলে জিপের বাম্পারে । বেচারা কন্ট্রাকটটের অবস্থা বেগতিক । ও বোধহয় তার জীবনে এমন পাগল দের পাল্লায় খুব কমই পরেছে । সবার জোরাজুরিতে বেচারা কন্ট্রাকটরের জায়গা হয়েছে ড্রাইভারে পাশে ।
...হাওয়ার সাথে চলছি আমরা । রুপি গান ধরেছে , আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছিলো চাঁদ । সবাই গাইছে ওর সাথে সাথে । আমি ও অবাক চোখে দেখছি লেবু বাগান , পানপুন্জি । ফেলে যাওয়া মানুষ । কখনোবা কমলালেবুর বাগান,সারি সারি আনারস গাছ । আমরা এসে নেমেছি শ্যামলিতে । বিকেলের নাস্তা সেরে সবাই বসলো আড্ডায় । ম্যারথন আড্ডা । বিষয় প্রিয় কথা ।
রাশেদ ভাই বলে , বাড়ির ম্যানিগ্রাম ।
মিতু আপু, এ্যাই তোর জন্য একটা ছেলে এসেছে ।
'আইরিন , খা...লা (লেডিস হলের বুয়া ) তোমার গেস্ট আ...ই...ছে । '
মামুন ভাই বলে, আমার প্রিয় কথা ....এ্যাইডা হইলো ....।
রুপি বলে, আমার প্রিয় উক্তি সিলেটি মেয়েদের মুখে ....ও ড্রাইভার যাইবা নি ??? এভাবে চলে ।
শেষ বিকেলের আলো এসে বাধ সাধে আড্ডায় । বাড়ি ফেরা পালা । ....সবার হৈ হোল্লায় মুখরিত শমসর নগরের রাস্তা ।আমরা একসময় এসে পৌছায় স্টেশনে । ট্রেন লেট । কম করে হলেও দুই ঘন্টা । রাতের আঁধার সবে ফুটছে । ছেলের খুশি । মেয়েরা চিন্তিত লেডিস হলে ডুকার চিন্তায় । আর আমি? আমার বেশ ভালোই লাগছে । ট্রেন না এলেও আপত্তি নেই । হঠাৎ করে কারেন্ট ও চলে গেলো । মানুষ এ গিজগিজ করছে শ্রীমঙ্গল স্টেশন । আমরা একটু দুরে জায়গা নিলাম । ছেলেরা অনেকে গেছে শহরে শেষ চক্কর দেবে বলে ।
কই যাস, মা আমাকে জিগ্গেস করে ।
' ব্রিজের উপরে....সবাই আচে । চিন্ত্য কইরোনা ।'
আসলে ওখানে কেউ নেই । ভাবছি ওটা দখল করা যায় । ভালোই হলো ওকে পেলাম ।
'চলো'
' কই যাবি '
' আসমানে '
ও সুবোধ ছেলের মতো আমাকে অনুসরন করে । পুরো স্টেশনে গুমোট অন্ধকার । আমরা গিয়ে জায়গা নিলাম ওভার ব্রিজে । চাঁদের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবে । নিচ থেকে মানুষের কথপকথন কিছু এসে বাজছে কানে ।
' ক্যামুন কাটলো সারাদিন'
' বললাম, ভালা । তোমার ?
'হুঁ
' আমার না এখানে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে । '
'হুঁ '
'কিতা অইলো '
'না, বলো'
'সেই কবিতাটা শুনতে চাই '
...........একমুঠো জ্যোছনা হাতে...। সেই টা ।
ইচ্ছে করছে না এখন, ট্রেনটা যে কখন আসে ?
(ডাইরি থেকে )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





