somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বয়োসন্ধিকাল

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বয়োসন্ধিকাল
ইদানীং মাঝে মাঝেই কান্তা'র মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। কারণ পরিবারের সবাই বিশেষত মা তার চলাফেরা, হাঁটাচলাসহ অনেক বিষয়েই একটু বেশি বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। কিশোরী কান্তা কিছুতেই এর কারণ খুঁজে পায় না। কোনো বিষয় নিয়ে বেশি উচ্ছলতাতেও মায়ের আপত্তি। অথচ তার চেয়ে তিন বছরের ছোট বোন শান্তার বিষয়ে তেমন কঠোর নন মা। আসলেই তাই, শান্তার বয়সে তাকেও এত বিধিনিষেধ শুনতে হতো না। তাহলে কি সে অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে, যার খেসারত হিসেবে তার মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে হবে? এদেশে কান্তার মতো কিশোরীদের অনেককেই এ ধরনের পরিস্থিতির সামনাসামনি হতে হয়। যা তার স্বাভাবিক বিকাশকে ব্যাহত করে। তাই অভিভাবকদের এ বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন ও সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনা প্রয়োগ করা দরকার।
সন্তান যত বড় হতে থাকে ততই বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও চিন্তা বাড়তে থাকে। বিশেষত কন্যাসন্তান নিয়ে আমরা অনেকেই পুরনো ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে অযথাই উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ি, যা সন্তানের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় বাধা দেয়। সন্তান বড় হতে থাকলে অবশ্যই তার মধ্যে নানা বিষয়ে সচেতনতাবোধ গড়ে তোলার দায়িত্ব বাবা-মায়েরই, কিন্তু হুট করে তার ওপর অতিমাত্রায় শাসন আর নিষেধ তার মনে স্বচ্ছ আলোর প্রতিফলন ঘটতে দেবে না।
সন্তানের বয়োসন্ধিক্ষণে তাকে সার্বক্ষণিক সাহচর্য দিন। কারণ এ সময়টায় 'না ছোট না বড়' এই দ্বন্দ্বে আক্রান্ত হয় মন। এই দ্বন্দ্ব মেটাতে সাহায্য করতে পারেন আপনি। ও যদি ছোট বোনটির সঙ্গে খেলতে চায়, হুট করে বলে বসলেন­এত বড় হয়েছ! এখনো এসব খেলা! আবার চুপচাপ থাকতে দেখে বললেন­এখনই এত বড় বড় ভাব! ঠিক তখনই আপনার কিশোরী কন্যা মানসিক দ্বন্দ্বে পড়বে। তাই ওকে ওর স্বাভাবিক গতিতে আচরণ করতে দিন।
ওর ভালো লাগার কাজগুলোর দিকে মনোনিবেশ করতে ওকে সাহায্য করুন।
শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তনকে সহজভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করুন, যাতে ও নিজেকে নিয়ে বিব্রত না হয় এ বয়সে।
একটু বাড়তি সচেতনতা সন্তানের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই দরকার। তাই বলে বেশি নিয়ন্ত্রণ বা বিপরীতে খুব লাগামছাড়া হবেন না।
ওর মতামতের মূল্য দিন। মতামত যদি সঠিক মনে না হয় তাহলে তাকে হেয় করবেন না বা সমালোচনা করবেন না; বরং আদর করে বুঝিয়ে বলুন।
সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা করে ওকে হেয় করবেন না।
ওর প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করবেন না। কখনো কখনো ও হয়তো একা থাকতে চাইবে। ওকে স্বাধীনতা দিন, আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
সন্তানের সামনেই তাকে নিয়ে সন্দেহভাব পোষণ করবেন না। বন্ধু-বান্ধবের টেলিফোন এলে অতিরিক্ত জেরা করতে যাবেন না। তবে কৌশলে খোঁজ রাখুন সে কাদের সঙ্গে মিশছে। অতিরিক্ত জেরা করলে সে আপনার ওপর আস্তা হারাবে এবং বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
আপনার এ বয়সী সন্তানটি যদি ছেলে হয় তাহলে তাকে মেয়েদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেবেন না আর মেয়ে হলে ছেলেদের সম্পর্কে ভীতিকর ধারণা দেবেন না। এমনভাবে তার মানসিক ভিতকে তৈরি করুন, যাতে ছেলেমেয়ে উভয়ের সঙ্গেই সে সাবলীলভাবে মিশতে পারে।
আপনার কিশোরী মেয়েটিকে অবশ্যই তার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করে তুলবেন, তবে তা ভয় দেখিয়ে নয়। এমনভাবে তাকে গাইড করুন যাতে নিজস্ব সচেতনতাই তাকে এসব থেকে রক্ষা করে।
সন্তানের শরীরের কোনো পরিবর্তন বা লক্ষণ ঘিরে নিজে লজ্জিত বা সংকুচিত হবেন না।
এ সময়টাতে অনেক সময়ই লোকজনের সামনে ও অপ্রস্তুত আচরণ করতে পারে­এসব নিয়ে কখনোই হাসাহাসি করবেন না, বরং বিষয়টি সহজ করে দিন।
খোলামনে সন্তানের মানবিক গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করুন।
বয়োসন্ধিক্ষণে শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনকে সে যেন সহজভাবে নেয়, সে জন্য তাকে এমন ধারণা দিন যাতে সে ভাবে এটা প্রকৃতির একটা স্বাভাবিক ঘটনা। ওর কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর দিন বুদ্ধি খাটিয়ে।
ছোট ভাই বা বোনের সামনে ওর সমালোচনা করবেন না বা এমন ভাব করবেন না যাতে তার মনে হতে পারে সে বড় হয়ে যাওয়ার কারণে বাবা-মার আদরযত্ন ছোট ভাই বা বোনটিই বেশি পাচ্ছে। এক সময় সে নিজেকে উপেক্ষিত ভাবতে পারে, যা তাকে জেদি করে তুলতে পারে বরং ওকে আরো বেশি আদর আর স্নেহ দিন।
ওর প্রতি আপনার আচরণ ওকে ছোট ভাই-বোনের প্রতি স্নেহশীল হয়ে উঠতে সহায়তা করবে আবার, ছোটদেরও ওর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অন্তরঙ্গ হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারেন বাবা-মা। এভাবেই আপনার সন্তানরা পারস্পরিক নির্ভরতা, একে অপরের প্রতি মমত্ববোধ ও শেয়ার করার প্রবণতা গড়ে তুলতে পারবে। সন্তানদের পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহযোগিতা বেড়ে উঠতে সাহায্য করুন। শৈশব-কৈশোর, যৌবন মানব জীবনের এসব নানা ধাপে মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন নতুন রূপে। জীবনের নানা বাঁকে পথের সঠিক নির্দেশনা সন্তানকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচায় ও স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলতে সাহায্য করে। তাই মা-বাবার উচিত সন্তানের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সময়টায় তার পাশে বন্ধুর মতো ছায়া দেয়া।


১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×