somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী তুমি বিয়ের পাত্রী, যৌনসঙ্গী, প্রজননযন্ত্র- মানুষ নও!

২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাল্যবিবাহ টিকে আছে আজ অবধিঃ আমার একসময় ধারণা ছিলো বাল্যবিবাহ ব্যাপারটি আমাদের দেশ থেকে মোটামুটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, ধারণা ছিলো প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বাল্যবিবাহ রোধে খুব সজাগ, দেশের মানুষ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন এবং অনেক বেশি শিক্ষিত।
ধারণাটা আসলে পুরোপুরি ভুল। বাল্যবিবাহ যে শুধু টিকেই আছে, তা নয়- বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে। না, এই শহরের বহুতল ভবনে থেকে প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে পড়ে থাকলেই বাল্যবিবাহের প্রমাণ পাওয়া যাবে না। প্রমাণ পেতে হলে যেতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে!সেসব স্থানে 'স্বাক্ষরতা'র হার বেড়েছে বটে, তবে 'শিক্ষা' কিংবা 'সুশিক্ষার হার' বাড়ে নি! বাড়ার কথা নয়!
গ্রামাঞ্চলে এখনও অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। এ ব্যাপারে প্রশাসন কখনো কোন ব্যবস্থা নেয় না। কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক বন্ধু আমাকে একজনের প্রোফাইলের লিংক দিয়েছিলেন। আমি সেই লিংকটি ভিজিট করে একটি ছবি দেখতে পেলাম। ছবিটি ছিলো ছবি আপলোডকারীর এক আত্মীয়ের বিয়ের ছবি যেখানে পাত্রের বয়স ত্রিশের ওপরে, অন্যদিকে পাত্রীর বয়স ১৩-১৪ বছর! আপলোডকারী খুব সুন্দর করে বর্ণনা দিয়েছেন- "Harun mama and his wife." আমি ছবিটি দেখে বিস্মিত হয়েছি! খুব দ্রুত ওই আপলোডকারীর টাইমলাইন ঘেঁটে জানতে পারলাম, তিনি নোয়াখালির বাসিন্দা। যার অর্থ হচ্ছে- এই বাল্যবিবাহটি সংঘটিত হয়েছে নোয়াখালীর কোন একটি অঞ্চলে। আমি সংযুক্তি হিসেবে সেই ছবিটি এখানে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। ছবিটি রিট্রিভ করতে গিয়ে দেখি সেটা মুছে ফেলা হয়েছে।
"একটু বড় হলেই (কিশোর বয়সে উপনীত হলেই) মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে হয়" গ্রামাঞ্চলে এখনো খুব শক্তিশালীভাবেই এই ধারণাটি রয়ে গেছে। তাদের কাছে এটাই পুন্য, এটাই ন্যায়, এটাই সমীচীন। এবং এসবের জন্য তারা কখনো দেশের আইন-কানুনের তোয়াক্কা করে না! একটি গ্রামে বাল্যবিবাহ হচ্ছে, এ কথাটি হয়তো প্রশাসনের কান পর্যন্তই যায় না! যাবে কি করে? গ্রামের সব মানুষই যেখানে বিয়ের পক্ষে, সেখানে কেউ পুলিশকে অবহিত করতে যাবেই বা কেন! বিয়ের দাওয়াত খাবার সুযোগ কি আর হাতছাড়া করা যায়? যেই কাজী বিয়েটি পড়িয়ে থাকেন, তিনিও হয়তো রেজিস্ট্রি বইতে পাত্রীর একটা ভুয়া বয়স (১৮) উল্লেখ করে থাকেন, সত্যিকারের বয়সটা কখনো লেখেন না। সেই কাজীও ওই গ্রামেরই মানুষ, গ্রামের আচার-প্রথায় বিশ্বাসী একজন মানুষ। তাই তিনি নীরবে সেই বিয়েটি পড়িয়ে যান। অল্পবয়সী একটি মেয়ের মুক্ত জীবনটি মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায়, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিবারের দায়-দায়িত্ব তাকে কাঁধে নিতে হয়।

নারীদের বিয়ের নূন্যতম বয়স এবং বিচিত্র কিছু যুক্তিঃ আইন অনুসারে একজন নারীর বিয়ের নূন্যতম বয়স হচ্ছে ১৮ বছর। প্রথমতঃ এই বয়সটা আসলে নির্ধারিত হয়েছে 'বায়োলজিক্যাল' ব্যাপার মাথায় রেখে! একজন নারীর সন্তান ধারণের সক্ষমতা আসে ১৮ বছর বয়সে! এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে।
একজন মানুষ কি শুধুই বাচ্চা পয়দা করার যন্ত্র?
একজন মানুষ কি শুধুই ভোগ করতে পারার বস্তু?
তাকে কি সেই বয়সেই বিয়ে দিতে হবে যে বয়সে তার সঙ্গে ঝুঁকিবিহীন উপায়ে দৈহিক মিলন ঘটানো যাবে এবং বাচ্চা উৎপাদন করানো যাবে?
অবশ্যই নয়! একজন পুরুষের জন্য তো বিয়ের বয়সের সীমা আরো ওপরে। কারণটি খুব স্পষ্ট! একজন পুরুষের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবার অধিকার সমাজ স্বীকৃত, পেশা অর্জনের এবং আত্মনির্ভরশীল হবার অধিকার সমাজবিদীত। তাহলে নারীর বেলায় কেন ব্যতীক্রম? নারীর কি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবার অধিকার সমাজ দ্বারা স্বীকৃত নয়? পেশা অর্জন কিংবা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অধিকার কি তার নেই? যদি উত্তরটি 'হ্যা' হয়ে থাকে- তাহলে কেন তার জন্য ভদ্র এবং শিক্ষিত সমাজে ঠিক ১৮ পেরুনোর পরপরই বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিতে হবে? এসব প্রশ্ন করলে খুব বিচিত্র কিছু উত্তর পাওয়া যায়!
"মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে না দিলে যেনা-ব্যাভিচার বেড়ে যাবে। অসামাজিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে!"

বিশ্বাস করুন, তারা আপনাকে এরকম একটি উত্তর নিশ্চই দেবে। সেক্ষেত্রে আমার যুক্তিটি হলো- তাহলে তো ছেলেদেরও তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া উচিত। ছেলেদেরও ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া উচিত! তাহলেই তো দেশের যেনা-ব্যাভিচার শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। না না, তারা কিন্তু এটা মানবেন না। কেন মানবেন না?
এ প্রশ্ন করলে আরো বিচিত্র কিছু উত্তর আপনি পাবেন। আমি পেয়েছি বলেই বলছি। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো- "মেয়েদের যৌনক্ষুধা বেশি (ছেলেদের চাইতেও বেশি)। নারীত্বের আবির্ভাব ঘটার পরপরই তারা প্রচণ্ড তৃষ্ণা অনুভব করে এবং যেনা-ব্যাভীচারে লিপ্ত হবার আশংকা থাকে।"
আসুন, এই বিচিত্র যুক্তিটি একটু খণ্ডন করি।
ধর্ষন কে করে?
- পুরুষ
রাস্তায় মেয়েদের দেখলে অশ্লীল শব্দ ছুঁড়ে দেয় কে? ইভটিজিং করে কে? সিটি বাজায় কে?
-পুরুষ
পর্নো মুভ্যি এবং চটি বইয়ের সবচেয়ে বড় গ্রাহক কারা? পুরুষ নাকি নারী?
-পুরুষ

উপরের ব্যাপারগুলো যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে প্রতিটি পুরুষেরই ১৮ কেন, ১৪-১৫তেই বিয়ে হয়ে যাওয়া উচিত! তাহলেই তো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, পর্নো মুভ্যির ব্যবসা কমে যাবে, রাস্তাঘাটে ইভটিজিং বন্ধ হয়ে যাবে, ধর্ষন কমে যাবে। জানি জানি, উত্তরটি এখন 'না' আসবে।
একজন নারী কখনোই মুখ ফুটে নিজের গুপ্ত বাসনার কথা পুরুষকে বলে না, সেটা তার লজ্জা, সেটা তার প্রকৃতি। একজন পুরুষই প্রথম নারীকে গুপ্ত বাসনার কথা বলে ফেলে, এবং এটাই সত্যি, এটাই প্রকৃতিগত। তাহলে ব্যাভিচারের জন্য বারবার নারীর দিকে আঙ্গুল কেন? কেন নারীকেই বারবার কাঠগড়ায় তুলছেন?
উত্তরটি খুব সহজ। নারীর প্রতি এই প্রজাতির মানুষগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ভালো নয়। এবং এটাই সত্যি।
বিয়ের পর পড়াশোনায় বাধা প্রধান কেনঃ অধিকাংশ পাত্রপক্ষই বিয়ের পর মেয়েটির পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াতে বাধা প্রদান করে! কেন করবে? পাত্রপক্ষের কি সেই অধিকার আদৌ আছে! পাত্র, কিংবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কি আদৌ একজন নারীর ওপর খবরদারি করবার অধিকার রাখেন? একজন মানুষ বিয়ের পর পড়াশোনা করবে, এটা তার অধিকার! আইনস্বীকৃত অধিকার। এবং সেই অধিকার খর্ব করার অধিকার পাত্রপক্ষের নেই!

একসময় ভাবতাম, আমরা একবিংশ শতাব্দীতে এবং খুব আধুনিক একটা সমাজে বাস করছি, এ সমাজে পুরনো এবং মিথ্যে ধ্যান-ধারণাগুলো আর অবশিষ্ট নেই। এর পুরোটাই আসলে ভুল। সমাজে নারীর অবস্থান এখনো বিয়ের পাত্রী, ভোগ্যপণ্য, প্রজনন যন্ত্র এবং বংশরক্ষার চাবি-কাঠি। মিথ্যা এবং কুসংস্কার সবসময়ই ভাইরাসের মত নিজেকে ছড়িয়ে দেয়। আমাদের অশিক্ষিত পূর্বসূরিদের মধ্যে যেমন সেই কুসংস্কার বিরাজমান ছিলো, হাল আমলের শিক্ষিত-তরুণ-ব্লগার-ফেসবুকারদের ভেতরেও সেই কুসংস্কার খুব ভালোভাবেই টিকে আছে। আমি জানি- বিশ্ব আরো এক হাজার বছর এগিয়ে গেলেও কুসংস্কার টিকে থাকবে, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ২:৪৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×