somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনোজগতের অসীম রহস্যময়তায় একজন অসংজ্ঞায়িত, অস্বীকৃত মানুষের গল্প!

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ওর ডাকনাম পাখি। একজন মানুষই বটে। তবে ঠিক মূলধারার (main-stream) মানুষ নয়। পাখি একজন অসংজ্ঞায়িত মানুষ। কারণ ওর প্রকৃতি, অধিকার, দায়িত্ব, পরিচয় এই সভ্য সমাজ কখনো সংজ্ঞায়িত করে দেয় নি। কিংবা ও একজন অস্বীকৃত মানুষ। বছর পনেরো আগে মায়ের নিরাপদ জরায়ু ছেড়ে যেদিন ও নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেরিয়ে এসেছিলো, পাখির বাবা হাশেম আলী সেদিন ওর কানের কাছে সুর করে আযান দেন নি। সেই দিন সেই গৃহে কারো উল্লাস কিংবা আনন্দ-ধ্বনি শ্রুত হয় নি। দাদি সেদিন পাখির মা’র চুলের মুঠি ধরে বলেছিলো- “হারামজাদী, একটা কুত্তাও যদি পয়দা করতি, তাও বহুত খুশি হইতাম! এইডা পয়দা করসস্‌ ক্যান? খা*কী, মা*!!!!

দূর্গন্ধযুক্ত, ঘৃণ্য বর্জ্যপদার্থভর্তি পলিব্যাগ যেভাবে ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়, পাখি নামক এই মানুষটিকে ঠিক সেভাবেই মূল ধারার মানুষগুলো নিক্ষেপ করেছিলো এই শহরের একটি রহস্যময়, বিচ্ছিন্ন জনপদে, অস্বীকৃত একদল মানুষের ভিড়ে।
পাখি একটু একটু করে বেড়ে উঠতেই আবিষ্কার করে, তথাকথিত ভদ্র ও সভ্য সমাজ ব্যবস্থা ওকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। মূল ধারার মানুষগুলোর শিশুদের জন্য ‘শিশু দিবস’, ‘শিশু অধিকার সপ্তাহ’, নারীদের জন্য ‘নারী দিবস’ বরাদ্দ থাকলেও এই অবাঞ্চিত মানুষদের উৎসর্গ করে পৃথিবীবাসী একটা মিনিটও বরাদ্দ করতে রাজি হয় নি! বিভিন্ন পক্ষের, বিভিন্ন গোত্রের অধিকার বিষয়ে দেশে সুস্পষ্ট, সমৃদ্ধ, বলবৎযোগ্য আইন আছে। অসংজ্ঞায়িত এই মানুষদের জন্য খুব সম্প্রতি দেশের মন্ত্রীসভায় একটি আইন পাশ হলেও সেরকম কিছুর ব্যাপারে আদৌ কোন ধারণা নেই তাদের! ওদের অধিকার নিয়ে কখনো কেউ জ্বালাময়ী লেকচার দেয় নি, মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোনদিন মানববন্ধন ডাকে নি, অবস্থান কর্মসূচী ঘোষনা করে নি!

এমনকি খোদ ঈশ্বরও যেন পাখির মত মানুষদের নির্বাসনে পাঠিয়েছেন! নারী-পুরুষ কে কিভাবে স্রষ্টাকে স্মরণ করবে, কে কী ধরণের কাপড়-চোপড় পরবে; মহল্লার ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তাঁর আকর্ষনীয় ভাষনে সেসব কথা বলে ফেললেও পাখি হতবাক হয়ে আবিষ্কার করল যে, ওর মত মানুষেরা কিভাবে স্রষ্টাকে স্মরণ করবে এবং কী ধরণের কাপড়-চোপড় পরবে- সেসব কথা তিনি তাঁর ভাষনে উল্লেখ করেন নি! বাবার সম্পত্তিতে ছেলে এবং মেয়ে কতটুকু ভাগ পাবে তা নিয়ে নারীবাদী এবং মৌলবাদী শ্রেণিদ্বয় বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেছেন, চুল ছেঁড়াছেড়ি করেছেন বটে- কিন্তু বাবার সম্পত্তিতে এই স্বীকৃতিহীন মানুষগুলো কতটুকু ভাগ পাবে তা নিয়ে কোন নারীবাদী কিংবা মৌলবাদী কেউ একটা মাথার চুলও ছেঁড়ে নি, একে অপরের প্রতি এক বিন্দু কাদাও ছোঁড়ে নি, একটা বাক্যও খরচ করে নি! কি বিস্ময়কর! ওদের নিয়ে কেউ কোনদিন রাজনীতি পর্যন্ত করে নি! কোন রাজনৈতিক নেতা রাস্তার কোন ‘পাখি’কে সালাম ঠুকে তার হাত ধরে বলে নি- “এবারের ভোটটা আমাকে দেবেন।“

বিজ্ঞানের মত একটি নিরপেক্ষ বিষয়ও কিনা তৃতীয় প্রকৃতির এই মানুষগুলোকে স্থান দেয় নি! উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান টেক্সটবইতে খুব যত্ন করে নারী শরীর এবং পুরুষ শরীরের খুঁটিনাটি বর্ননা দেয়া আছে বটে, কিন্তু অসংজ্ঞায়িত মানুষের শরীরের খুঁটিনাটির বর্ণনা কোথাও নেই! ‘পাখি’দের নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠিত লেখক আজ অবধি রচনা করে নি একটি পরিপূর্ণ উপন্যাস, কোন অনন্য কথাসাহিত্যিক সৃষ্টি করে নি ছোটগল্প, কোন কবি কিংবা ছড়াকার উৎসর্গ করেন নি তাঁর কবিতার একটি অমূল্য পংক্তি!

পাখিকে নিয়ে নির্মিত হয় নি স্টার জলসা, স্টার প্লাসের সুদীর্ঘ সিরিয়ালের একটি এপিসোড, বানানো হয় নি কোন পূর্নদৈর্ঘ্য কিংবা স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। আর বানানো হলেও সেসব ছবি এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো কখনো প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার সুযোগ পায় নি। দেখেছে যথারীতি ওই মূলধারার সভ্য মানুষরাই। অস্বীকৃতদের জন্য গাওয়া হয় নি কোন গান! কোন বেসরকারি সংস্থার কর্মী অস্বীকৃত এই মানুষদের কাছে এসে ১০০০টি টাকা ধরিয়ে বলে নি- “ঋণ দিলাম। একটা ব্যবসা কর!” দেয় নি! পাখি যখন শিশু ছিলো, কোন এন. জি. ও এসে ওকে বলে নি- "তোদের জন্য বিনা বেতনে একটা স্কুল খুলেছি। আয় পড়াশোনা শিখবি?"

পনেরো বছর বয়সী পাখি যখন মনোজগতের অসীম দোলাচল, রহস্যময়তা, গ্লানিকে সামলাতে না পেরে পৃথিবীকে প্রশ্ন করেছিলো- “আমি কে? আমার পরিচয় কি?”, পৃথিবীবাসী তখন ক্রুড় হাসি হেসে বলেছিলো- “তুই একটা নপুংশক! তুই একটা হিজড়া!”
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×