somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্ছিষ্ঠের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ওরা তিনটে প্রাণী...

২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘ইয়াম্মি! চিকেনটা সেইরকম।‘- এক গাল হেসে জানালো মারুফ।

‘তুই তো আছিস ক্রিসপি নিয়া। চিলি চিকেনটা তো খেয়ে দেখিস নাই? অসাম সালা!’- বলল আবিদ।

‘ধুর! তন্দুর রুটিটা শক্ত হয়ে গেছে। আরেকটু নরম করে আনতে পারলি না?’ মুখ বাঁকা করে মন্তব্য করে কাশফিয়া।

শুভ্র হাসতে হাসতে জবাব দেয়- ‘আমি তো ফ্রাইড রাইস আনাতে চাইছিলাম। তোরাই তো এই জিনিস......’

‘ব্যাপার না। প্রন চিলিটা এত্তগুলা জোসস। তোরা যারা চিকেন নিয়া মাততেছিস, বিলিভ মি গাইজ... ইউ মিসড ইট। চিংড়ি ইজ দ্যা রিয়েল ফুড!’

‘আমার বার্গারটা কি বানের জলে ভেসে আসছে? তিনি লেয়ার বিশিষ্ট চিকেন ব্রেস্ট! ইভেন বেটার দ্যান দি জিঞ্জার বার্গার অফ কে এফ সি......’ বড় করে আরেক কামড় বসানোয় বাকি কথাগুলো আটকা পড়ে গেলো মিনহাজের।

শুভ্র বলল- ‘এতগুলা আইটেম আনলাম, কোনটা ছেড়ে যে কোনটা খাবো বুঝতেসি না... ‘
‘সবগুলাই খাইস, শুধু আমার চিলিতে হাত দিস না।‘ আবিদ জবাব দেয়।

অনেকক্ষণ ধরেই চুপ করে বসে আছে আইরিন। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল মিনহাজ- ‘ওই তুই খাস না ক্যান? অনেকক্ষন ধরে তো কথাও বলতেছিস না। ব্যাপার কি?’

হঠাৎ মুখ বিকৃত করে ফেলে আইরিন। ‘হুহু... হুহু... হুহু (আহ্লাদি ভঙ্গিতে কান্নার শব্দ), আমি শর্মা খাইতে চাইছিলাম। তোমরা কেউ শর্মা আনো নাই ক্যান? শুভ্র, তুই একটা কুত্তা। তুই জাহান্নামে যাবি। হুহু...হুহু... হুহু (আবারও ঢঙ্গিলা কান্নার শব্দ)
ড্রাই রোস্টেড বিফের প্যাকটা এগিয়ে দিয়ে আইরিনকে সান্তনা দেয় রবিন। ‘কান্দিস না দোস্ত। এইটা খাইয়া দ্যাখ। শর্মার দুঃখ ভুইলা যাবি। মাইরি বলতেছি।‘ ওর কথা শুনে হেসে ফেলে বাকিরা।

বন্ধুদের ছোট্ট দলটি গোল হয়ে বসে ইফতার করছে। খানিকটা দূরে দাঁড়িয়েই নীরবে এই দৃশ্যটি অবলোকন করছে তিনটে প্রাণী। প্রাণী তিনটির চোখেমুখে আগ্রহ, উত্তেজনা, আকাঙ্ক্ষা, লালসা। আছে অপেক্ষা, কখন ওই মানুষগুলোর খাওয়া শেষ হবে। নিশ্চই কিছু না কিছু উচ্ছিষ্ট রেখে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে মহানন্দে সেসব সাবাড় করে দেবে ওরা। চেবানো হাড্ডি, হাড্ডির সঙ্গে অলক্ষ্যে লেগে থাকা খানিকটা মাংস, চেটেপুটে খাওয়ার পর অবশিষ্ট ঝোল, সসের দাগ, বার্গার থেকে অসাবধানে পড়ে যাওয়া এক টুকরো শসা কিংবা টমেটো! আহ, চমৎকার একটা ভোজন হবে আজ। ওরা তাই ঘাপটি মেরে বসে আছে অদূরে। ওরা একে অপরের বন্ধু নয়, আত্মীয় নয়। বুদ্ধিমত্তা, চিন্তার পরিধি এবং শারীরিক গঠনের হিসেবে আকাশ-পাতাল তফাত ওদের। অথচ, আজ... আজ ওদের মধ্যে আর কোন পার্থক্য নেই! ওরা, তিনটে প্রাণী- একটি হল শহুরে নোংরা কাক, আরেকটি হল কুকুর, আর অন্যটি একজন শিশু। পথশিশু!

আগামীকাল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। আমরা যারা স্বচ্ছল, তাদের কাছেই এই ঈদ মানে 'আনন্দ', সত্যিকারের আনন্দ। হাজার টাকার দামি পাঞ্জাবি পরে আমরা ঈদের নামাযে শরিক হব, পোলাউ-রোস্ট-বিরিয়ানি কিংবা চাইনিজ-বুফে প্রভৃতি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবো, ফ্যান্টাসি কিংডম কিংবা ওয়াটার পার্কের চমৎকার সব রাইডে চড়ে ভয়-আনন্দ-উত্তেজনা মেশানো 'আআআআআআআআ...' চিৎকারে মুখরিত করে তুলবো। কিন্তু ওই পথশিশুগুলো? ওরা ঈদ কিভাবে কাটাবে? ওরা কি নতুন পোশাক পেয়েছে? ভালো খাবার পাবে ওরা? বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে পথশিশু ও দুস্থদের মধ্যে নতুন জামা ও খাবার বিতরণ করা হয়ে থাকে। তারপরও সারা দেশে দুস্থ ও পথশিশুদের এক বিরাট অংশ ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকে। আমরা কি এমন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখতে পারি না, যে সমাজে কোন পথশিশু থাকবে না। একজন মানুষও রাস্তায় শুয়ে থাকবে না, উচ্ছিষ্ঠ খেয়ে বেঁচে থাকবে না। পারি না এমন একটা সমাজ বানাতে?

সে যাই হোক, সবাইকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ঈদ কাটুক ঈদের মতই।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×