somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বারবি পুতুল থেকে 'সুস্বাদু' (!) মাংসের দলা হয়ে ওঠার গল্প!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট্ট নওমির পৃথিবীটা ছিলো অসম্ভব সুন্দর। মায়ের নরম হাতে আদরস্নাত মাখা-মাখা ভাতের পরমত্ব, নির্ভরতার প্রতীক বাবার আঙ্গুল আলতো চেপে ধরে গঞ্জের হাটে চকোলেট আর বেলা বিস্কুট খেতে যাওয়া, সোনালী বিকেলজুড়ে সুমিদের সঙ্গে উঠোনে ফ্রক পরে অবাধ্য লুকোচুরি-ছুটোছুটি, গ্রামময় দৌড়ে বেড়ানো, সন্ধ্যায় সদ্য ভেজা ঘাস কিংবা ধানক্ষেত মাড়িয়ে পৃথিবীর ওপাশে হারিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতে থাকা কমলা রঙের সূর্যটা ছুঁয়ে দেখার রুদ্ধশ্বাস অভিযানের হাতছানি, রাতে হলদে চেরাগের কম্পমান শিখায় শব্দ করে নামতা মুখস্ত করা, দাদির কাছে সুয়ো রানী-দুয়ো রানীর গল্প আর নিশিপোকাদের একটানা মৃদু গুঞ্জন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া। হঠাৎ করেই সেই পৃথিবীটা যেনো একটু একটু করে বদলে যেতে শুরু করে। কিশোরী দেহে এস্ট্রোজেন হরমোনের অস্ফুট আর্তনাদে নওমি ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটি নারী সত্ত্বার অস্তিত্ব টের পায়। সেই ‘ভৌতিক’ সত্ত্বার আবির্ভাবে ওর চিরপরিচিত জগতের নিয়মগুলো মোমের মত গলে পড়তে শুরু করে, আর সেই মোমের আস্তরণের অন্যপাশে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে থাকে পৃথিবীর সংকীর্ণতা, নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতার অন্য এক গল্প। নওমি আবিষ্কার করে, ও এখন আর সেই ছোট্ট পুতুলটি নেই। ও এখন পিণ্ড। মাংসপিণ্ড। নওমি যখন পথচলত মেয়েবেলায়, আশে-পাশের সবার আচরণই ছিলো বড্ড স্বাভাবিক। আর এখন পথ চলতে গেলেই ও স্পষ্ট বুঝতে পারে, কয়েক জোড়া দৃষ্টি ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। সেই চোখগুলো যেনো মানুষের নয়, জিভ বের করে লালা ঝরাতে থাকা ক্ষুধার্ত হায়নার! কোন কোন হায়না আবার তাকিয়ে থেকেই ক্ষান্ত হতো না, ছুঁড়ে মারতো অশ্লীল সব শব্দগুচ্ছ! হতবাক হয়ে ও লক্ষ্য করে, কেউ এসবের বিচার-সালিশ করছে না! বরং সমস্ত অপরাধের ভার চাপছে ওর ওপর। এক নিমেষেই বদলে গেলো পরিবারের সদস্যদের অভিব্যক্তি! কয়েকদিনের ব্যবধানেই ‘নিরাপত্তা’র অজুহাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শুরু হলো নওমির কারাবাস। হায়! সেই কারাবাসও ওর নিরাপত্তা দিতে পারে নি। নওমির ‘জীবিত’ জীবনের গল্পটি মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে সেদিন, যেদিন ভরা বর্ষায় প্রবল বর্ষনের শব্দ ছাপিয়ে ওর ঘর থেকে চিৎকার শুনতে পেয়েছিলো আশেপাশের মানুষ।

এরপরের দিনগুলো কিভাবে কেটেছে নওমির তা মনে নেই। দুঃস্বপ্নের মত শুধু মনে আছে, ওর বাবা ওকে খুব মেরেছিলো, বাড়িভর্তি সেদিন ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ওকে গঞ্জের কোন এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, সেখানে শক্ত মুখের পুরুষ ডাক্তাররা ওর অনাবৃত শরীরের গোপন অংশ স্পর্শ করে কি কি যেনো পরীক্ষা করেছিলো! সে কী বীভৎস! পরীক্ষার পর ওরা কি সিদ্ধান্তে এসেছিলো, জানে না নওমি। সেই হায়নাটাকে গ্রেফতার হয়েছিলো কি না, জানা নেই ওর। ঠিক কি কারণে ওর সঙ্গে কেউ আর ভালো করে কথা বলে না, বুঝতে পারে নি নওমি। এক অস্বস্তিদায়ক কুতকুতে চোখে মানুষগুলো ওকে পর্যবেক্ষণ করে, কেন করে সে প্রশ্নের উত্তর নেই ওর কাছে।

নওমি শুধু জানে, ওকে এখন হাতের মোটা রশিটা দিয়ে একটা ফাঁস বানিয়ে ঘরের এই সিলিং ফ্যানটায় ঝুলে পড়তে হবে!
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×