somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভীনগ্রহী অতিবুদ্ধিমান প্রানীর মানুষ দর্শন!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মহাকাশযান ঈলান-এর কন্ট্রোল প্যানেলে বিষন্ন মুখে বসে আছেন ক্যাপ্টেন লু। মানুষ নামক বুদ্ধিমান প্রজাতি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি ইনাইরাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন প্রায় ঘন্টা তিনেক আগে। অথচ সেই ছেলে এখনও ফিরে আসে নি। কমবয়েসী ক্রুদের নিয়ে এই এক ঝামেলা, এদের সময়জ্ঞান খুবই কম। তাঁদের এই মহাকাশযানটি পুরো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এখন পর্যন্ত বিশটির ওপর প্রাণচঞ্চল গ্রহ খুঁজে বের করেছে, সেগুলোর বুদ্ধিমান প্রাণীদের ওপর বিভিন্নভাবে গবেষনা করেছে। বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির নিয়মিত সভায় এই প্রাণীদের ওপর রিপোর্ট তৈরি করে তাঁর তিনদিনের ভেতর জমা দেবার কথা। কিন্তু ইনাইরার তথ্য সংগ্রহে ধীর গতির কারণে সেটি আর সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। এসব ভাবতে ভাবতে তিনি মুখ দিয়ে পঞ্চম বারের মত ফোঁস জাতীয় একটা শব্দ করতে যাবেন, এমন সময় তিনি স্পিকারে ইনাইরার কণ্ঠ শুনতে পেলেন।

- মহামান্য লু, আমি কি ভেতরে আসতে পারি?

- 'এসো।' হতাশ কণ্ঠে অনুমতি দিলেন লু। তিনি প্রতিবারই ভাবেন সময়ানুবর্তিতার ওপর ইনাইরার প্রতি একটি দীর্ঘ বক্তৃতা দেবেন, ভীষণভাবে বকাবকি করবেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি আর সেটা করেন না। কেন করেন না, এ এক বিস্ময়।

- মহামান্য লু, প্রথমেই নির্ধারিত সময়ের চাইতে বেশি সময় পৃথিবীতে কাটানোর জন্যে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আপনি তো জানেন, আমি প্রতিটি প্রজাতিকেই ভীষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করি, গভীরভাবে পর্যালোচনা করি... এজন্যই সময়টা একটু বেশিই......

- আহ! ইনাইরা, এবার থামো। কাজের কথায় এসো। মনুষ্যজাতির বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে তোমার তথ্যগুলো পেশ কর।

- ধন্যবাদ, স্যার। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, মানবজাতির বুদ্ধিমত্তা আমরা যতখানি ভেবেছিলাম তার চেয়ে খুবই কম! এদের বিচার-বুদ্ধি কিংবা বিবেচনাবোধ হাস্যকর। 'বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গি'র যে মহাজাগতিক মাপকাঠি আমরা তৈরি করেছি, তার বিচারে মনুষ্যজাতির বৌদ্ধিকতা পয়েন্ট ৫-এর নিচে। বেশ কয়েকটি বিষয় পর্যালোচনা করে আমি এই রেটিং-টি করেছি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টরগুলো আমি এখানে আলোচনা করতে চাই।

- বেশ! বলতে থাকো...

- স্যার, এদের ভেতরে 'বৃহত্তর স্বার্থ' নামক একটি দূর্বোধ্য থিওরি আছে। এই থিওরিটি ব্যবহার করে এরা স্বজাতিকে হত্যা করে। এরা বৈশ্বিক শান্তির কথা বলতে বলতে দু'দুটো বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়েছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক একটি দেশ এই বৈশ্বিক শান্তির কথা বলেই ইরাক এবং আফগানিস্তান নামক দু'টো দেশকে গুড়িয়ে দিয়েছিলো। বৃহত্তর স্বার্থের ধর্মীয় সংস্করণে লাদেন নামের এক সন্ত্রাসী দুই দুইটা ভবন গুড়িয়ে দিয়েছিলো, তাতে প্রাণ হারিয়েছিলো কয়েক হাজার মানুষ। 'ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধ'-এর সাফাই গেয়ে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশ নামক একটি দেশের ত্রিশ লাখ মানুষ মেরে ফেলেছিলো। মানুষ নামক এই জীবটি পরকালে অসীম আনন্দ পাবে ভেবে বুকে বোমা বেঁধে ছুটে যায় আত্মঘাতী হামলা করবে বলে। অতঃপর অসংখ্য মানুষের দেহ ছিন্নভিন্ন করে ফেলে, ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এরা নিজেরাও। মহামান্য লু, বাংলাদেশ নামক যেই দেশটির কথা বলছিলাম, সেখানে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির দোহাই দিয়ে এরা আন্দোলনে নামে... অতঃপর এরা যানবাহন ভাঙ্গচুর করে, অগ্নিসংযোগ করে, অসংখ্য সাধারন মানুষকে পুড়িয়ে মারে, রেললাইন উপড়ে ফেলে। একবার ভাবেন স্যার, লজিক দেখিয়ে কিংবা থিওরি কপচিয়ে হত্যাকাণ্ডের মত অপরাধকে বৈধ হিসেবে ব্যাখ্যা দেবার মত ঘটনা আর কোন গ্রহে কি আমরা দেখেছি?

- না তো! সত্যিই এক বিচিত্র জীব।

- হ্যা, স্যার। এবার দ্বিতীয় ব্যাপারটা বলি। এটা অবশ্য প্রথমটির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে বেশ কৌতুকপূর্ণ। বাংলাদেশ নামে যেই দেশটা আছে, সে দেশের শহরগুলোতে অনেক স্থানেই রাস্তা পার হবার জন্য ফুট ওভার ব্রিজ নামক একধরনের ব্রিজ তৈরি করা আছে। এর নিচ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। সেগুলোর নিচে পড়লে মানুষ নামক দোপেয়ে জীবটি নির্ঘাত প্রাণ হারাবে। সেজন্যই ফুট ওভার ব্রিজের ব্যবস্থা। অথচ, মানুষ সেগুলো ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে-হেঁটে রাস্তা পার হয়!

- সে কি! কেন?

- স্যার, ওদের কাছে জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য বেশি!

- কি বিস্ময়কর!

- এবার স্যার তৃতীয় ব্যাপারটা বলি। এটা তো আরো ইন্টারেস্টিং!

লু খুব আগ্রহ ভরে ইনাইরার দিকে তাকিয়ে থাকে।

- স্যার, মানুষের ভেতর দু'টো জাতি- পুরুষ এবং স্ত্রী। পুরুষ জাতির একটা বড় অংশ স্ত্রী জাতিকে 'পবিত্র' হিসেবে আখ্যা দেয়। 'সতীত্ব' নামক একটা ধারনাও আছে। কিন্তু কোন পুরুষ যখন কোন নারীকে ধর্ষণ করে, তখন সেই নারীটির পবিত্রতা নষ্ট হয়, নষ্ট হয় সতীত্ব। স্যার, আমরা তো জানি... পবিত্র কোনকিছুকে অপবিত্র হাতে স্পর্শ করলে তো সেটির পবিত্রতা নষ্ট হয় না। ধর্মগ্রন্থকে কেউ যদি অপবিত্র হাতে স্পর্শ করে, তাহলে তো ধর্মগ্রন্থকে অপবিত্র হতে হয় না, ধর্মগ্রন্থকে দায়ী হতে হয়, অপরাধী হতে হয় না। অথচ, নারীদের পবিত্রতা কিংবা সতীত্ব এমনই অদ্ভুত কনসেপ্ট যে কোন পুরুষ তাকে স্পর্শ করা মাত্রই সেটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। শুধু কি তাই? সেজন্য আবার নারীকেই অপরাধী করা হয়। অথচ, যেই পুরুষটি ধর্ষণের মত অপরাধ সংঘটিত করল, তার সতীত্ব কিন্তু ঠিকই থাকে! সে কিন্তু আর অপরাধী হয় না। অথচ, মহাজাগতিক লজিক্যাল মানদন্ড অনুসারে অপরাধীরই সতীত্ব নষ্ট হবার কথা। কিন্তু দেখুন, এখানে ঠিক উলটো!

ক্যাপ্টেইন লু একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
- হায়, এ কোন গ্রহে এলাম... যাক গে, তোমার এই চমৎকার বিচার-বিশ্লেষণের জন্য অনেক ধন্যবাদ ইনাইরা। চল ফিরে যাই। এই গ্রহের প্রানীদের ওপর আর বেশি গবেষণা করার আগ্রহ আমি হারিয়ে ফেলেছি। আর তাছাড়া, আমাদের খুব শীঘ্রই বিজ্ঞান একাডেমীর নির্ধারিত সভায় বিস্তারিত রিপোর্টটি পেশ করতে হবে।
- ঠিকই বলেছেন স্যার। এবার তাহলে চলুন...

ক্যাপ্টেইন লু হাইপার ডাইভ অপশনটি সচল করবার জন্য কন্ট্রোল প্যানেলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে শুরু করলেন। সুবিশাল হলোগ্রাফিক স্ক্রিণে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের একটি চিত্র ভেসে ওঠে, যেখানে পচাত্তর লাখ আলোকবর্ষ দূরের চিরপরিচিত নিজস্ব গ্রহটি তাঁদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করে আছে।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×