রাজাকার এর কি নতুন কোন সংগা বের হচ্ছে? প্রতিদিন ই তো নতুন নতুন কত কিছুই শিখছি। সত্যি বলতে কোন কোন দিন হাসি চেপে রাখা দায় হয়ে পড়ে খুব।
এই যেমন কয়েকদিন আগে কালের কন্ঠে আবদুল গাফফার চৌধুরী একটি লেখায় বললেন, বঙ্গবন্ধু এর খুনী কারা তা তিনি প্রায় ৩০ বছর আগেই জেনেছেন এক বন্ধুর বাসায় প্ল্যানচেট এর মাধ্যমে স্বয়ং শেখ মুজিব এর আত্মা এর কাছে থেকেই। পড়ার পর হাসব না কাঁদব বুঝছিলাম না। আমি এটা বলছি না যে, শেখ মুজিবের হত্যার সাথে তারা জড়িত ছিলেন বা ছিলেন না। কিন্তু প্ল্যানচেটের মাধ্যমে স্বয়ং শেখ মুজিবের আত্মার সাথে কথা বলার এই বিরল সৌভাগ্য আর কয়জনের ই বা হয়েছিল!!
উনার টোটাল লেখাটা ভাল ছিল। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা হলেও চিন্তার খোরাক যোগায়, অনেক যৌক্তিক কৌতুহল এর অবতারনা করে অন্তত। কিন্তু এই প্ল্যানচেট এর ব্যাপারটা ছাড়া। ঘটনাটা কি সত্যি? আসলেই কি গাফফার চৌধুরী কে শেখ মুজিব এর আত্মা প্ল্যানচেটে এসে বলেছিল যে কে কে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী? নাকি এটা গাফফার চৌধুরীর একটা রাজনৈতিক স্ট্যান্ট মাত্র। এই বিংশ শতাব্দীতে এসে কি প্ল্যানচেটের সত্যতায় বিশ্বাস করব? পাঠক, আপনিই বিবেচনা করুন।
আবারো বলছি শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের নিয়ে আমার এই বক্তব্য নয়। কারন যারা অপরাধী তারা চিহ্নিত। শাস্তি পেয়েছেন বা পাচ্ছেন। আড়ালে যারা থেকেছেন ইতিহাস এর কাঠগড়ায় তাদেরও একদিন দাড়াঁতেই হবে। কিন্তু প্ল্যানচেটের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের হত্যা সম্পর্কে গাফফর চৌধুরীর সাথে কথোপকথন কি "অতিকথন" হয়ে গেল না?
এতে কি শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মান বাড়ালেন গাফফার চৌধুরী? বাকি বিবেচনা পাঠক দের। এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।
গতকালের কথা। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগ এর একটি সভায় বলেছেন, "দেশে রাজাকার বলে কোনো শব্দ নেই। দেশে কোনো রাজাকার নেই। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দাদাশ্বশুর ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রয়াত খন্দকার নূরুল হোসেন নূরু মিয়া ফরিদপুরে রাজাকারদের তালিকার ১৪ নম্বর রাজাকার হলেও তিনি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না"। একইসঙ্গে তিনি ফরিদপুরের নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেছেন, "তার ভাই শেখ সেলিম ফরিদপুরের রাজাকার মুসা বিন শমসের ওরফে নূইলা মুসার সঙ্গে ছেলে বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তা করেছেন, এটা কেন তারা কখনও বলেন না; অথচ শেখ হাসিনার মেয়ের দাদাশ্বশুর নূরু মিয়ার নামে সবাই অভিযোগ করেন যে, তিনি রাজাকার ছিলেন। নূরু মিয়া পিস কমিটির সদস্য থাকলেও যুদ্ধের সময় তিনি কোনো অপরাধমূলক কাজকর্ম করেননি"। (সত্যি কথা বলছি, প্রচন্ড কষ্টেও যে কখনো হাসি আসে তার প্রমান এই বাক্যগুলো পড়ার পর আমি টের পেয়েছি।)
চট্টগ্রামের বিখ্যাত রাজাকার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী একবার বলেছিলেন, তাকে রাজাকার বললে নাকি তিনি গর্ববোধ করেন। যারা সাকা এর চরিত্র আর কথা বলার ধরন এর সাথে পরিচিত তাদের কাছে সাকার এই কথা খুব একটা ঢেউ তুলেনি। কারন বিতর্কিত কথা দিয়ে কথার জবাব দিয়ে আরো বিতর্কিত হওয়ার বদঅভ্যাসটা সাকার পুরোনো। কিন্তু এখন যে নতুন করে ভাবতে হয়। রাজাকার তো আসলেই খারাপ কিছু না। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেছেন এইটা।
লজ্জা লাগে। আমরা ধর্মকে ব্যবসা এর হাতিয়ার বানিয়েছি। ব্যবসা এর হাতিয়ার বানিয়েছি মুক্তিযুদ্ধকেও। রাজনৈতিক মাঠ এর ইস্যু বানিয়েছি ধর্মকে, ভাষা আন্দোলনকে, মুক্তিযুদ্ধকে। আর তাইতো মুক্তিযোদ্ধারা এক বেলা ভাত এর জন্য রিকসা চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা তাদের ন্যায্য হিস্যার জন্য করেন আমরন অনশন। আর আমরা নানা সময়ে সেই স্বাধীনতাবিরোধেদের ব্যবহার করেছি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য। আবার ছুড়েও ফেলেছি সেই একই রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্যই। এই আমরাই একসময় রাজাকারদের গাড়িতে তুলে দিয়েছি ফ্ল্যাগ। আজ বিচার করছি। আজকের বিচার করাটা ভুল না। কিন্তু ১৯৯৬ আর ২০০১ এ তাদের পুর্ণবাসন করাটা কি সঠিক ছিল? বর্তমান আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেউই এর দায় এড়াতে পারেন না।
যে এরশাদকে নিয়ে কত রক্ত ঝরলো। মনে পড়ে ৯০' এর গণঅভ্যুথান এর কথা? মনে পড়ে "স্বৈরাচার নিপাত যাক" বুকে নিয়ে রাজপথের সেই রক্তঝড়া দিনগুলির কথা? আজ সেই এরশাদ কো্থায়? দুই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর এই এরশাদকে নিয়ে টানাটানি দেখতে লজ্জা করে না আপনাদের?
তবে ভয় এর কিছু নেই। আশাহত হওয়ারও কিছু নেই। এরশাদ এর বিচারও একদিন হবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় কারা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন, কারা বিপক্ষে ছিল, কে রাজাকার, কে আল বদর, কে শান্তি কমিটির প্রধান ছিল তা নিয়েও বিতর্ক অর্থহীন। কার কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল তা সবাই জানে। স্বাধীনতার পক্ষের যারা, যারা এই স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন তারা কি করেছেন আর যারা স্বাধীন বাংলার অস্তিত্ব চায়নি তারা কি করেছে তাও সবাই জানেন। এগুলো নিয়ে বিতর্ক তৈরী করবেন তারাই যারা সত্যিকারের ইতিহাস জানেন না বা জানতে চান না বা জানাতে চান না।
বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে তো এগুলোর কোন কিছু অপরিস্কার না। এই বাংলার কোটি কোটি মানুষ এর চাইতে অন্তত তিনি বাংলার স্বাধীনতার পথরেখাকে দেখেছেন অনেক কাছে থেকে। আর কষ্টটা এজন্যই। উনার মুখ থেকে এমন কথা আমরা প্রত্যাশা করি না। উনি বঙ্গবন্ধুকন্যা।
কষ্ট লাগলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও এই দলে দেখে। আবারো বলছি, অন্তত বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখ থেকে আমরা এই ধরনের কথা শুনতে চাইনা। হয়তো একজন রাজাকার এর নাতির সাথে নিজের মেয়ের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে সমালোচনাকারীদের থামাতে তিনি এই কথাগুলো বলেছেন। তাতে তার কন্যার সন্মানরক্ষা হয়তো হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সন্মান রক্ষা হলো কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



