রোযার মাস। আর কিছুক্ষন পরেই মাগরিবের আজান পরবে। বাসার সব ঘরের টেবিল গুলোতে সাদা চাদর বিছানো। আজকে মনে হয় সবাইকে ইফতারের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। আশ্চর্য! আমি কিছুই জানি না। একটা ঘরে ঢুকে দেখি আমার বড় ভাই বিশাল একটা ডিসে আপেল কেটে কেটে রাখছে আর মাঝে মাঝে মুখে দিচ্ছে। বললাম, “কি?রোযা রাখো নাই?” লজ্জিত ভঙ্গীতে জবাব দিল,“নাহ! আজকে শরীরটা তেমন ভালো না।” আমি পাশে যেয়ে বসলাম। এই ঘরটা থেকে আমাদের ডাইনিং রুমটা দেখা যায়। পিচ্চি একটা মেয়েকে দেখলাম ডাইনিং টেবিল থেকে কিছু একটা নেয়ার জন্য চেয়ারের উপর উঠে বসেছে। ভাইয়া কে বললাম, “এটা কে? স্নিগ্ধা না?” “হ্যাঁ” আমরা প্রায় ১৫ বছর আগে একটা বাসায় ভাড়া থাকতাম, স্নিগ্ধারা থাকত ওই একি বাসার দোতালায়। অবাক হলাম, এতদিন পরেও এতটুকুও বদলায়নি। হুড়মুড় করে আম্মা ঘরে ঢুকে আমাকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলল, “এই ভাবে সঙ সেজে বসে আছিস কেন? ওকে একটু হেল্প কর।” আম্মার কথা শেষ হতে না হতেই একটা ভালো রকম দোলুনি অনুভব করলাম। এরপর আরেকটা...ভুমিকম্প! ভাবলাম আর হবে না। কিন্তু তৃতীয় দোলুনিটা আর থামল না। বিশাল একটা গাছ যেমন মুড়মুড় শব্দ করে ভেঙ্গে পড়ে আমাদের বিল্ডিংটাও তেমনি কাত হয়ে নিচের দিকে পড়তে লাগল। আম্মা আল্লাহগো! বলে বিকট এক চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। নিশ্চিত মৃত্যু! এইভাবে কতক্ষন নিচের দিকে পরছিলাম জানিনা। হঠাৎ মনে হোল মৃত্যুর কাছে এইভাবে অসহায় আত্তসমর্পন কেন? শেষ একটা চেষ্টা করে দেখি না বেঁচে থাকা যায় কিনা। চোখ খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই পারছি না। প্রাণপণ চেষ্টা করে যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম নিজের বিছানায়। ঘেমে একদম জবজবা অবস্থা।
ওহ! দুঃস্বপ্ন ছিল। এক গ্লাস পানি খেয়ে ড্রয়িং রুমে যেয়ে ঝিম মেরে বসে রইলাম। ভয়টা এখনো কাটছে না। ভাবলাম টিভি দেখে ভয়টা দূর করি। আনমনে রিমোট চেপে চ্যানেল চেঞ্জ করছি আর ভাবছি এটা স্বপ্ন না হয়ে সত্যিওতো হতে পারত। ভুমিকম্প হওয়াটা তো অস্বাভাবিক কিছু না। আর শুধু ভূমিকম্প কেন! মৃত্যু তো যেকোনো সময় যেকোনো ভাবে আমাদের সামনে আসতে পারে। তারপরও কেন আমরা সবসময় জাগতিক বিষয় নিয়ে এত চিন্তা করি? বেঁচে থাকার জন্য এতো ভন্ডামি,এতো প্রতারনা। এরকম একটা আধ্যাত্মিক ভাব নিয়ে 9xm_এ শিলাকি জাওয়ানি গানটা দেখছিলাম। গানটা শুনতে শুনতে আমি ধীরে ধীরে বাস্তবে ফিরে আসি। এখনো বিয়ে করিনি। ভাবি, ক্যাটরিনার মতো সুন্দর একটা মেয়েকে পেলে কত ভাব-ভালোবাসায় জীবনটা কেটে যেত। এই কপাল নিয়ে কি আর জন্মেছি? মাথামোটা সালমান খানের উপর হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ঈর্ষা হতে লাগল। গান শেষ করে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন শুধুই ক্যাটরিনা ঘুরছে মাথার ভিতর। এইবার হয়ত স্বপ্নটা অন্যরকম হতে পারে। মৃত্যু থেকে আমাদের যেমন রক্ষা নেই তেমনি রক্ষা নেই শিলা কি জাওয়নির হাত থেকেও। আমাদের চিন্তা চেতনার বড় একটা অংশ এই শিলা কি জাওয়ানির কাছে আষ্টেপিষ্টে বাঁধা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪২