somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরানের রেন্টাল রে..., দেউলিয়া হইলাম তোর কারণে

৩০ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুইক রেন্টাল এবং রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কারণে মহাসঙ্কটে এখন দেশের জ্বালানি তেল ও বিদ্যুত্ খাত। বেসরকারি খাতের এই বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলো গিলে খাচ্ছে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। তেলভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রে ভর্তুকি দিতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। পাঠক, বিদ্যুতের ঘাটতি সংক্রান্ত একটি দেশের গল্পে নিয়ে যাচ্ছি আপনাদের। বিদ্যুতের ঘাটতি চরমভাবে দেখা দেয়ায় সেদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন, এখন থেকে যারা বিদ্যুত্ অপচয় করবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এখন থেকে কেউ রাতের বেলায় বাসা বাড়িতে বাল্ব জ্বালাতে পারবে না। ফ্যান চালানো আর মোবাইল চার্জ ছাড়া অন্য কিছুই কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। টিভিপাগল মহিলাদের সুবিধার্থে সাদাকালো টেলিভিশন ব্যবহার করা যাবে, তবে কোনো অবস্থাতে কালার টিভি চালানো যাবে না। তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করল, আচ্ছা জনগণ তাহলে অন্ধকারে কীভাবে বাসায় থাকবে?
উপদেষ্টা : অন্ধকারে সবাই হ্যারিকেন বা মোমবাতি জ্বালাবে, এতে অনেক বিদ্যুত্ সাশ্রয় হবে।
সাংবাদিক : স্যার, এখন ডিজিটাল যুগ। বলছিলাম সবাই রঙিন টিভি দেখে অভ্যস্ত, এখন সাদাকালো টিভি দেখলে কারও ভালো লাগবে?
উপদেষ্টা : শুনুন, কালার টিভি যখন ছিল না তখন সাদাকালো টিভি সবাই দেখেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, কালার টিভি অনেক বেশি বিদ্যুত্ খায়। অতএব সাদাকালো টিভি ব্যবহার করলে আমাদের দেশে লোডশেডিং থাকবে না।
উপদেষ্টার ঘোষণার পর লোডশেডিং কিছুটা কমে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাকে বাহবা দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী : বাহ্! আপনি তো খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন বিদ্যুত্ ঘাটতি কমে গেছে।
উপদেষ্টা : আরও একটা কাজ করলে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়ে যাবে। ব্যাংকে যত ঋণ আছে, সেগুলোও শোধ করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী : তা কী করতে হবে বলেন?
উপদেষ্টা : সবাই যেহেতু রাতে হ্যারিকেন ব্যবহার করবে, সেহেতু আমরা তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে অল্প দিনে আমাদের আর্থিক সঙ্কটও কেটে যাবে।
প্র্রধানমন্ত্রী : বাহ্! বুদ্ধি তো খারাপ না! ঠিক আছে তেলের দাম বাড়িয়ে দিন।
এরপর তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, আর সাধারণ মানুষ রাতে কুপি বা হ্যারিকেনের পরিবর্তে মোমবাতি জ্বালাতে থাকে। একদিন এক লোক বাসায় চার্জার লাইট চার্জে লাগালে পুলিশ তাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।
পুলিশ : এই ব্যাটা জানিস না, সাদাকালো টিভি, মোবাইল চার্জ এবং ফ্যান চালানো ছাড়া অন্য কোনোভাবে বিদ্যুত্ অপচয় করা যাবে না?
ভদ্রলোক : স্যার, চার্জার লাইটে তো কারেন্ট বেশি খায় না। এইডা চার্জ দিলে সমস্যা কী? আমার বউ মোমবাতির আলোয় চোখে ভালোভাবে দেখে না, তাই চার্জ দিয়ে রাখলে মোমবাতির খরচও কম লাগে।
পুুলিশ : চুপ কর ব্যাটা, আর কোনোদিন যদি বাসায় লাইট চার্জে লাগাস, তাইলে থানায় আইনা তুলাধুনা দিমু। যা প্রথমবারের মতো ছেড়ে দিলাম।
এভাবে চলতে থাকে মানুষের ভোগান্তি। কেউ বাসায় কালার টিভি চালালে তার টিভি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। টাকা-পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয় শর্তসাপেক্ষে। শর্ত হলো আর বাসায় কালার টিভি চালাবে না।
এমন অবস্থায় বেড়ে গেল সাদাকালো টিভির বিক্রি। ডিজিটাল যুগে সাদাকালো টিভি তেমন পাওয়া যাচ্ছে না, শুধু একটি শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে। আর তাই সাদাকালো টিভির দামও অনেক বেড়ে গেল। এ ব্যাপারে জনগণ প্রতিবাদ জানালেও সরকার থেকে কোনো মনিটরিং করা হয়নি।
প্রতি মাসে মানুষ মোমবাতির বিল ও বিদ্যুত্ বিল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আর তেলের দাম বাড়ানোয় যানবাহনসহ সবকিছুর দাম ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। অতিষ্ঠ হয়ে একসময় মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে ওই সরকারকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত করে। তখন সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টাকে ওসব উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ জানতে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
পুলিশ : আপনি কেন মানুষকে সাদাকালো টিভি ব্যবহার করতে বলেছেন?
উপদেষ্টা : আসলে আমার শালা টেলিভিশনের ব্যবসা করে, বর্তমানে সাদাকালো টিভি কেউ ব্যবহার না করায় সে পানির দরে চীন থেকে কয়েক লাখ টিভি নিয়ে এসেছে। আর সেগুলো সেল দিতেই আমি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পুলিশ : দেশে অতিরিক্ত তেল থাকা সত্ত্বেও আপনি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ালেন কেন?
উপদেষ্টা : এ দেশের ৫টি বড় মোমবাতির কারখানার মালিকের কাছ থেকে আমি ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছি, তাদের সেল বাড়িয়ে দেব বলে। লোডশেডিং না হলে তো আর মোমবাতি বেশি চলবে না।
পুলিশ : তার মানে এজন্যই আপনি জনগণকে চার্জার লাইটও চার্জ দিতে দেননি?
উপদেষ্টা : ঠিকই কইছেন, আমারে আর মাইরেন না। সব তো কইয়াই দিলাম।
পাঠক, গল্প থেকে এবার বাস্তবে ফিরে আসি। তেলভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ কিনতে গিয়ে দেশের অর্থনীতি দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে। ভর্তুকির চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে, তেলের দাম ও বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে এই ভর্তুকির টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকার বিপিসিকে সরাসরি ভর্তুকি দিলেও পিডিবিকে দেয়া হয় ঋণ। আর ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে নিতে ব্যাংকগুলোর অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়েছে। উচ্চমূল্যে বিদ্যুত্ কিনে একশ্রেণীর শিল্পপতি-ব্যবসায়ীকে মুনাফা লোটার সুযোগ করে দেয়ায় এমনটি হয়েছে বলে পত্রিকায় দেখা যায়। উপরের গল্পটির উপদেষ্টার মতো কি আমাদের সরকারের ভেতরের কেউ না কেউ কোনো বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতেই দফায় দফায় তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে? যদি তাই হয়ে থাকে, তবে জনগণের ভোগান্তির কমতি তো থাকবেই না, বরং ভোগান্তি আরও বাড়তেই থাকবে। তাই আসুন আমরা গাইতে থাকি, পরানের রেন্টাল রে, দেউলিয়া হইলাম তোর কারণে...।

আমার এই লেখাটি গতকাল একটি ফান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×