somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি পেয়েছি ভালোবাসা

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কবির মনের আকাশ জুড়ে আজ সাদাকালো মেঘের মতই ভেসে বেড়াচ্ছে মহা-কালের চিন্তা'রা সব, যেন মাথার ভেতর ভ্রমর দিয়ে কেউ ছিদ্র করার চেষ্টা করে চলেছে প্রতিনিয়ত। নাহ! আর যেন সহ্য করতে পারছেনা কবি! সবকিছু'তে কেমন যেন বিষাদের ছায়া দেখতে পাচ্ছে, ঘরে আর থাকতে পারছেনা কিছুতেই...! কেউ যেন টানতে টানতে কবিকে আজ নিয়ে যেতে চাইছে ঘর থেকে বাহিরে, দিগন্তের পথের দিকে! কবির মন আজ বড়ই উদাস- অস্থির তার সময়গুলো বড্ড পিড়াপীড়ি করছে, নিয়ে যেতে চাইছে দূরে কোথাও...! যেথা পড়ে আছে মনের মানুষ, হয়তো মিলবে দেখা তার, কেন যেন দেখতে আজ জেগেছে দারুণ সাধ! তাই কবি মনে মনে স্থির করেই নিলো আজ আর থাকবেনা ঘরে, ছুটে যাবে যায় দুচোখ যেদিক। তেপান্তরের পথেঘাটে প্রান্তরে খুঁজতে থাকবে- মিলে যদি কোথাও চোখদুটো'র স্থবিরতা, পেয়ে যায় যদি মন-বন্ধনের খোঁজটি আবার...।

পড়ন্ত বিকেলের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হারিয়ে যাবে তাই লজ্জায় কেমন লাল করে রেখেছে মুখ, পশ্চিম আকাশ যেন সূর্যকে বিদায় জানাতেই সেজেছে রঙিন সাজে! চারিদিকে স্বর্ণালী রোদের ঝিলিক, দূর বনের দিকে নজর, রঙিন আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল কবি কিছুক্ষণ। কি যেন ভাবছে কবি মনে মনে, হয়তো গোধূলির এই ক্ষণে রঙের নেশায় কবির চোখ মুগ্ধতায় হয়েছিল স্থির, দেহ'মন হয়েছিল তাই স্তব্ধ কিছুক্ষণ। আবারও হাটতে থাকে কবি, হেঁটে চলেছে পাথরের পিচ করা পথের একপাশ দিয়ে। মাঝেমধ্যে হঠাৎ ইঞ্জিন চালিত গাড়ির শব্দে দু'দিকে তাকিয়ে দেখে কবি...। হঠাৎ চঞ্চল হয়ে ওঠে কবির চোখ, কবি নিজেও অনেকটা চঞ্চল হয়ে ওঠেছে মনে হয়! মনে মনে কি যেনো ভাবছে! কোন সাড়াশব্দ নেই মুখে, হাঁটার গতিও কিছুটা কমে এসেছে...! কিছুক্ষণ পর চিৎকার করে বলে উঠে- 'হ্যা চিনেছি, এই পথে এসে-ছিলাম, এই পথ মাড়িয়েছি বহুদিন আগে, সেদিন হাত'টি ধরে হাঁটছিল আমার প্রিয় সেই মানুষ!' মনের অজান্তেই হয়তো কথাগুলো বলে আবারও চুপচাপ হাঁটতে থাকে কবি। বারবার দুচোখে ভেসে ওঠছে যেনো হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো! কৈশোরের শেষ আর যৌবনারম্ভের দিনগুলোই কবিকে নীরব করে যায় বারবার! আর কোন ভাবনা কবিকে করতে পারেনা কখনওই এতটা স্তব্ধ ! আবারও স্তব্ধ হয়ে যায়, কোন কথা নেই মুখে আর, মাটির দিকে চেয়ে নিরবে হেঁটে যেতে থাকে কবি। জানেনা এই পথচলার কোথায় হবে শেষ।

মাঠঘাট পেরিয়ে কবি ছুটছে পথ থেকে পথে! কতো সময় হাঁটছে কবি কিছুই অনুমান করতে পারছেনা। তবে বুঝতে পারছে মনের ঘরে যেন জোছনার আলো আজ! কোথায় যেন দেখেছে কবি, মনের কিছু সুখের আনাগোনা! চারিদিকে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আলোকিত, গাছের ডালে পাখির বাসাটিও অনেকটা স্পষ্টতই যাচ্ছে বোঝা। নিজের ছায়ার পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা ক্লান্তিতে ভরে গেছে কবির পা-দুটো, ক্লান্তি মনে হয় এসেছে কবির মনেও অনেকটা! ক্লান্তিতে ভরেই উঠার কথা কারণ, সেই বিকেল থেকে এখন রাত প্রায় শেষের পথে, কিছু সময় পরেই হয়তো দেখবো সোনালী প্রভাত! তবুও থামছে'না কবি- হেঁটেই চলেছে ধীর পায়ে কুয়াশার বুক চিরে। শূন্যতা ঘেরা রাত্রির শেষ প্রহর, ক্লান্তি ভুলে মনে আজ অনেক স্বপ্ন কথা কবির! হাঁটছে মনের কোণে সেই সুখের আলো নিয়ে, রাতশেষে হয়তো আজ দেখবে প্রিয় সেই মুখ, যে মুখ দেখে কাটিয়ে দিতে পারে কবি লক্ষ কোটি বছর! স্বর্ণালী জ্যোৎস্নার আলো মাখা সেই উজ্জল মুখটি দেখবার আশায় অনেক পথ মাড়িয়েছে কবি, অনেকদিন- যুগের পরও আরেকটি যুগ।

আজও কবি হেঁটে চলেছে গ্রামের মেঠো পথ ধরে। কত সময়, কতদূর- কোন গ্রাম, কিছুই আর বুঝে উঠতে পারছেনা কবি! আলো আঁধারের পথ ধরে কেবল হাঁটছে সামনের দিকে। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে বাড়িঘরের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা পথের বাঁকে অনেকটাই অন্ধকার যেন জমাট বেঁধে আছে। তবুও থামেনি কবির পা দুটো কখনোই, এখন একটু গতিময়! হয়তো পাশের মসজিদে মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি কানে আসাতেই তাড়াহুড়ো, যদিও ভোর, তবুও কিছুটা অন্ধকার চারিদিকে আবছা দেখাচ্ছে সবকিছু। দূরের আকাশ অনেকটাই আলোকিত, হয়তো কিছুক্ষণ পরেই সূর্য মামা হেঁসে উঠবে পূবের আকাশে, মুছে দিবে যাবে সব অন্ধকার। প্রিয় মুখটি দেখার যে হলো না সৌভাগ্য এখনও! নির্মল বাতাসে শীতের রাতজাগা চোখে ক্লান্তি একটু বেশিই থাকার কথা ছিলো! কিন্তু কবির চোখে আজ কোন ক্লান্তি নেই, যেন স্বাদ নিচ্ছে নীরবতার। চোখের পাতায় দৃশ্যত চারিদিকে জলভার বায়ুর স্রোত, শীত চলে যাওয়ার পথে, তবুও ঠাণ্ডার যেন আজ প্রচণ্ড জোর! ঠাণ্ডায় যেন কেঁপে উঠছে কিছুক্ষণ পর পরই কবির শরীর, তবুও থামছে না কবি। নিজেও জানে'না হয়তো কোথায় হবে তার এই কাল রাত্রির শেষ! সারারাত হেঁটে মাঠঘাট পেরিয়ে এসেছে কবির পা, কাঙ্খিত চোখজোড়া স্বর্ণালী ভোরের আশায়। প্রিয়তম হয়তো বসেই আছে দক্ষিণা জানালা খুলে, ভীষণ প্রতীক্ষায়।

মেঘ'হীন রাত্রির আকাশে পূর্ণিমা-চাঁদের আলোয় আলোকিত সারারাত হেঁটেই শেষে থামলো পা-দুটো, স্থির হলো কবি পাকা পুকুরপাড় পেয়ে। যদিও সারারাত কুয়াশা পড়ে ভিজে আছে, তবুও হাত দিয়ে কোনরকম একটু মুছে বসে পড়লো। সামনের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে, কবির চোখদুটো একটি খোলা জানালায় স্থির। জানালার ভেতর চকচকে একজোড়া চোখ, শত জন্মের প্রতীক্ষা যেন স্পষ্ট ওই চোখে! কবি অনেকক্ষণ দেখলো চোখদুটো অপলক, যেন শত জন্মের তৃষ্ণা আজ কবির দু'চোখে! হঠাৎ চোখ যেন ঝাপসা হয়ে উঠছিল, সরিয়ে নেয় কবি! মনে হচ্ছিল সাত সাগরের পানি জমে উঠছিল দুই চোখে!
মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে কবি, দেখতে থাকে দুব্বা ঘাসে শিশিরকণা। আহ! কতো স্বচ্ছ, ঠিক যেন প্রিয়ার টলটলে দুই চোখ, ছুঁয়ে দিলেই ঝরে পড়বে মাটিতে! রাতের কান্নার যেন শিশির'ই একমাত্র প্রমাণ। শূন্যতা আর নিঃস্বতায় রাতের চোখেও নীরবে বহে কান্নার ঢল। কবির ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে, মনে মনে ভাবে- যত গোপনেই কাঁ'দো হে রাত, তোমার গোপনীয়তা কখনোই কবির চোখকে ফাঁকি দিতে পারবেনা। কবির মন ঠিক বুঝে নেবে- সুনসান নিঝুম নিরবতা ঘেরা তোমার সময়গুলো কতটা কষ্টে কাটে, এই শূন্যতা ও'বুকে কতো বেদনার, এযে কতো কালের দুঃখ তোমার।

একা একা হাসছিলে কেন?
হঠাৎ কোন কোমল কণ্ঠে এমন প্রশ্ন শুনে শিহরিত হয় কবি, থেমে যায় মনের সব কথা।
মাথাটা ঘুরিয়ে চোখদুটো স্থির নির্মল কোমল উজ্জ্বল মুখপানে।
কি হলো কবি, তুমি কি দিবে না উত্তর, বলবেনা কোন কথা আমার সঙ্গে!
কবি কিছুই বলে না শুধু চেয়ে থাকে অপলক।
নাইবা যদি বলবে কথা এই পাপিষ্ঠার সাথে, তবে কেন কবি তোমার এই ছেলেমানুষী...?
কেনইবা তবে রাতজেগে অহেতুক এ'পথচলা...? বলো কবি, আজ তোমাকে বলতেই হবে,
কি পাওয়ার আশায় এমন ঠান্ডা শীতের রাতে কুয়াশার বুক চিরে ছুটতে হলো তোমাকে...?
নির্বাক কবির চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে!
কেনো কাঁদছো কবি...?
কেনো আমাকে বসিয়ে রাখলে সারারাত খোলা জানার পাশে...?
রাতের কান্নার শব্দ শুনেছি টিনের চালে, ভেজা বাতাসে ভিজিয়েছি দুই চোখের পাতা,
এভাবে কত রাত আমার কেটে গেছে ঘুমহীন চোখে স্বপ্ন সাজিয়ে! কই, আজও তো সেই স্বপ্ন আমার হলো না পূরণ!
তোমার চোখের জল'তো আমি চাইনি কবি! রাতের পর রাত তুমি কেন বিসর্জন দিচ্ছো!
তবুও চুপ, কেবল নীরবে ভাসছে কবির দু'নয়ন।
কবির চোখদুটো মুছে দিয়ে এবার বলছে-
শুন তবে তুমি-
আর যদি কোন রাত তোমার কাটে নির্ঘুম,
ভেবে নিও সারারাত আমার চোখ বইছে হয়ে নদী।
খোলা আকাশের নিচে বসেই যদি পার হয় তোমার কোন রজনী-
তবে মনে রেখো সেদিন মরে গেছি আমি।
কবি এবার দাঁড়িয়ে পূব আকাশের রক্তিম সূর্যের দিকে চেয়ে বলছে-
পেয়েছি আমি,
আমি পেয়েছি ভালোবাসা...!
বুঝেছি ভালোবাসার কভু হয়না মরণ।
প্রিয় মুখটির দিকে তাকিয়ে বলে-
সুখে থেকো, সমৃদ্ধি ঘিরে থাকুক তোমার সময়গুলো...।
বলেই আবারও পথের দিকে পা বাড়ালো কবি।

যতদূর দেখা যায় কবির ধীর পায়ে হেঁটে যাওয়া-
প্রিয়তম তার অপলক দেখছিল অশ্রুসজল চোখে.....

___[হুদাই, আনমনে আবুল তাবুল বক বক করা মাত্র ]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×