somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গর্বিত আমি জন্মেছি এই দেশে

৩০ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চলার পথে চোখে পড়া অনিয়ম বা দেশের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অনেকেই মনে করে থাকেন বা মৌন সম্মতি দিয়ে থাকেন 'এই দেশে জন্ম নিয়ে পাপ করেছেন হয়তো' এমন কথায়! তাদের উদ্দেশ্যে আমর কিছু কথা বলতে খুবই ইচ্ছে করছে আজ। হ্যা তাদেরকেই বলছি-  এইদেশে জন্ম নেয়া পাপ না ভাই, জন্ম নেয়াটা সত্যিই অনেক সৌভাগ্যের, কারণ জন্মগতভাবে আপনি বীরদের দেশের নাগরিকের গৌরবের অধিকারী হয়েছেন। আপনি উঁচু শিরে দৃঢ়ভাবে বলতে পারেন- "এই দেশে জন্ম নিয়ে পাপ করিনি- গর্বিত আমি জন্মেছি এই দেশে"। কারণ, আপনার বীর পূর্বসূরীদের বীরত্বের মহাকাব্য ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত। তবে হ্যা, এই গৌরব উপলব্ধি করতে চাইলে নিজেকে প্রথমে বাঙালি আর দেশপ্রেমিক হিসেবে তৈরি করাটাও জরুরী।

কিন্তু! ভাই সত্য কথা'তো হলো- এই দেশে জন্ম নিয়ে আমরা যা কেবল বীরের দেশের মানুষই হয়েছি, কেউ বীর হতে পারিনি, পারিনা! আমরা এখন আর বীরের মত প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারিনা, আমাদের অনেক ভয়, চারিদিকে কেবল ভয় আর সংশয়! রাস্তায় ভয়, অফিসে ভয়, এবং কি নিজের ঘরের বউয়ের কাছেও ভয় থাকে আমাদের! আমরা সত্যি ভীতু, আমাদের সবসময় একটি ভীতিকর সময়ের মধ্য দিয়ে চলতে হয়!! আমার না জানি কি হয়ে যায় আর পরিবার পড়ে যায় বিপদে! এই যৌক্তিক ভয়ে কখনো কেউ কোন অনিয়ম দেখে প্রতিবাদ করার সাহস করতে পারছিনা, পারিনা! সবাই কেবলই নিজের জন্য ব্যস্ত সকাল সন্ধ্যা রাত্রি সবসময়! সমাজ জাতি দেশ-প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করারও সময় আমাদের নেই, থাকেনা! সেজন্য কখনো প্রতিবাদ করা হয়না কোন অনিয়মের, পারিনা আমরা।

দুঃখের ব্যাপার কি জানেন!- আমাদের এই প্রতিবাদ করতে না পারার ব্যর্থতা বা দায়বদ্ধতা কেউ স্বীকারও করতে পারিনা কখনও, সেই সৎ সাহসটুকুও নেই আমাদের মধ্যে, সেই সৎ সাহস পাই না কখনো! ভাই, আমরা বড়ই স্বার্থবাদী নাগরিক-প্রজন্ম!!

সেজন্য আমরা 'একুশে ফেব্রুয়ারি' 'একাত্তর'কে রূপকথার গল্প মনে করে একগাল হেসে উড়িয়ে দিতে চাই অনেকেই অনেকসময়!! কারণ, সেই গৌরবান্বিত দিনগুলো কতটা অসীম বীরত্বের তা উপলব্ধি'ই করতে পারিনা অনেকেই!!

আমরা যা করতে পারি তা হলো- চলার পথে চোখে পড়া অন্যায়, দুর্নীতি, এককথায় সকল অনিয়মের দায়ভার আইন-প্রশাসন ও সরকারের উপর ছেড়ে দিয়ে নিজে সমালোচনা করার জন্য উপলক্ষ্য এবং ক্ষুরধার শব্দের খোঁজ করি! আর সুযোগ পেলেই লোক সমাজে দেশের সরকার ও স্বাধীনতা'কে কঠিন তিরস্কার করার উদ্দেশ্যে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সহজেই বলে দেই "স্বাধীনতার এতবছর পেরিয়ে গেল আজও দেশ থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর হলো না! এই দেশে জন্ম নিয়ে কি পাপ করেছি আমরা"? আর বোকা ম্যঙ্গো জনতা কপালটা বাজ করে চোখেমুখে চিন্তার ছাপ ফেলে নীরব থেকে সহজেই মৌন সম্মতি দিয়ে দেই সেইসব কথায়, হয়তো কেউ স্বাধীনতার গায়ে লাগা অপবাদটুকু বুঝতেই পারিনা!!

রাস্তায় জ্যাম দেখে, বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং দেখে, সরকারি দফতরে অনিয়ম দেখে, ভেঙে যাওয়া রাস্তা দেখে, জঙ্গি হামলায় মানুষ মরতে দেখে, আগুনে পোড়া লাশগুলো নিয়ে সবারই মানবতা জেগে উঠে, সরকারকে দোষারোপ শুরু করে দেই, যতপ্রকার গালি আছে দিতে থাকি সরকার আর প্রশাসনকে। অবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার কঠোর হয়ে কোন পদক্ষেপ শুরু করতে গেলেও সমালোচনা এই আমরাই শুরু করি যে, দেশে এতো দুর্নীতি অনিয়ম হচ্ছে সেদিকে না দেখে সরকার গরিবের পেটে লাথি মারছে বা মারতে চাইছে! সরকারকে সহজেই ফাঁটা বাঁশের চিপায় ফেলে দিতে পারি সমালোচনার বিষ তীরে! শুরুতেই থামিয়ে দেই সরকারের কঠোর পথচলা! সেই অপবাদ পাওয়ার ভয় সরকারেরও থেকেই যায়। আর তাই বছরের পর বছর থেকেই যায় অনিয়ম, দুর্নীতি, ফাঁকিবাজি!!

নিত্যদিন চোখে পড়া অনিয়ম সমস্যা গুলো ছাড়াও অনেক সমস্যা আছে আমাদের দেশে, যেসব সমস্যা কেবল সরকারের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না বলেই মনে হয় আমার কাছে।

আমার মনে হয়- প্রতিটি গ্রাম বা সমাজের মধ্যে যদি মাত্র দশ'জনও দেশপ্রেমিক- সত্য ন্যায়ের পথে অকুতোভয় বীর থাকতো, তারা চারিপাশে বসবাস করা মানুষের চিন্তা, সমাজের চিন্তা, দেশ ও আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে পারতো, তবে আমাদের সামনে আর এত এত সমস্যা থাকতো না, সকল অনিয়ম, অন্যায়, দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ ধ্বংস হয়ে যেতো, না'হয় দেশ থেকে পালিয়ে যেতো, পালাতেই হতো।

আমাদের দেশের আয়তনের তুলনায় মানুষ অনেকটাই বেশি হয়ে গেছে অনেক আগেই, তারপর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের দ্রুত বড়লোক হওয়ার ভাবনা।
ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজেকে ক্ষমতাধর একজন হিসেবে সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সকল ক্ষেত্রেই নিজের কর্তৃত্বকে টিকিয়ে রাখার প্রতিযোগিতা, যা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে পরশ্রীকাতর করে তুলছে প্রতিনিয়ত।
আমরা অন্যের ভালোটা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারিনা, হিংসা হয়। পরের ক্ষতি করতে আমাদের দেশের লোকজন দুইবার ভাববার প্রয়োজন মনে করে না! কেবল নিজের লাভ হবে কিনা সেটা ভাবতে পারলেই হলো!!
এছাড়া দুর্নীতি! সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল কার্যক্রমে অক্সিজেন হয়ে আছে দুর্নীতি! বিষয়টা এমন যে দুর্নীতি না থাকলে এদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোন কাজই পরিপূর্ণ হতে পারবেনা! সরকারি বেসরকারি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত দুর্নীতি বিস্তৃত এবং আশ্রিত।
তাই আমাদের দেশের মানুষ সম্পূর্ণ সরকারি তত্বাবধানে দিনাতিপাত করবে এমনটা যেমন রাষ্ট্রীয়ভাবে চিন্তা করাও দুঃস্বপ্ন, তেমনি সাধারণ মানুষের মনমানসিকতা সেরকম এই ভাবনাটা আরও বেশি দুঃস্বপ্ন মনে হয় আমার কাছে। এদেশের কয়জনেই আর সরকারি বা রাষ্ট্রের নিয়মনীতি মেনে চলছে! সবাইকে তো কেবল সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকতে দেখতেছি! যে যেভাবে পারছে সরকার তথা রাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে, শুধু ঠকাচ্ছেই না, সরকারকে ফাঁকি দিতে পেরে অনেকেই নিজেকে চালাক ও বুদ্ধিমান মনে করে গর্ববোধ করছে! এদেশে নিজের স্বার্থের সাথে অন্যকারো স্বার্থের কোন যোগসূত্র নেই!
তাই, এই দেশ ও দেশের মানুষকে আপনি যদি বিদেশিদের মতো সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিতে চান বা ভাবেন সেটা আমার কাছে কাল্পনিক মনে হবে! আপনি দেশ মানুষের ভালো হবে এমন চিন্তাভাবনা করতে থাকলে আপনাকে চিন্তাভাবনা করার সুযোগটাই হারাতে হবে এটা একেবারেই নিশ্চিত বলতে পারি। এদেশে সত্যের পক্ষে কথা বলার লোকের খুবই অভাব, কারণ, মিথ্যার জয়োৎসব দেখে দেখে সত্যের গায়ে পেরেক পড়েছে, ভয় ঢুকে পড়েছে, নিজের স্বার্থ হারানোর ভয়!!

আরো অনেক অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে এদেশের মানুষদের সকল দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় তত্বাবধানে রাখার। সকল নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা আমাদের দেশের কোন সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে করতে পারিনা!!

দেশ থেকে সবধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ধ্বংস হোক এটা অন্তরের দাবী এবং আশাবাদী আমি- এখনও সম্ভব দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার, যদি দেশের মানুষ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকেন, কারণ শেখের বেটির যোগ্যতা ও সততার পাশাপাশি ইচ্ছে সাহস দুই'ই আছে।

আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে দুর্নীতির  বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস সঞ্চার করাটাই  প্রথম লক্ষ্য হওয়া  উচিত। অসাধারণ থেকে সাধারণ, প্রথম শ্রেণী থেকে নিম্নশ্রেণী সকল নাগরিকদের একযোগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া জরুরী বলেই মনে হয় আমার।

সবশেষে একান্ত'ই প্রত্যাশা- সমাজ জাতি দেশ দুর্নীতির কলঙ্কমুক্ত হয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য সন্ত্রাসমুক্ত সুন্দর বাসযোগ্য উন্নত বাংলাদেশ।

[ সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব মতামত, কাউকে কষ্ট বা আঘাত করতে নয়, ছবিটি শেরপুর জেলা শহরের পশ্চিমে ধোপাঘাট নামক ব্রিজ থেকে তোলা ]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৩৭
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×