একজন কয়েদির লাশ ও পরবর্তী ঘুমদৃশ্য
আমাদের মধ্যে যে-জন ছিল বেটেখাটো ও বেশ ক্ষিপ্রগতি
সেই ছুরিটি চালায়। রক্তাক্ত মুরগির মতো ছেলেটিকে সে
অবলীলায় ধাক্কা দিয়ে খালের মতো বড় ড্রেনে ফেলে দেয়।
তারপর আমরা তিনজন দ্রুতপদে হাঁটতে হাঁটতে
বাঁশের সাঁকো, বাতাসা-গুড়ের মাছিময় ঘিঞ্জি বাজার,
কাটা মাংসের ঘন দোকান, জনপদ─ এইসব পার হতে থাকি।
ভেতরের একটা হালকা নীল আতঙ্ক ক্রমশ আমার ভেতর
গাঢ় হয়ে উঠতে থাকে। এত সহজে একটা মানুষকে হত্যা
করা যায় ভেবে ভেতরে ভেতরে আমি বাতাসতাড়িত
খসাপালক হয়ে উঠি। টের পাই আমাদের পরবর্তী শিক্ষাবর্ষেই
মুরগির মতো প্রাণ নিয়ে সেই আধাদুষ্ট ছেলেটি আবার ঠিকই
ঘুরে বেড়াবে এবং আমাদেরকে বিশেষত আমাকে সে এই
হত্যাকান্ডের জন্য শনাক্ত করবে।
আমাদের মধ্যে যে আগাগোড়াই যাবতীয় ঘটনায় নির্বিকার
থাকতো, সে পকেটভর্তি টাকা থেকে কাঠঠোকরাদের জন্য
বড় এক প্যাকেট মটরদানা কিনে নেয়।
ঘুম ভেঙে গেলে আমি খুব হালকা বোধ করি যে এটা ছিল
একটা দুঃস্বপ্ন। এই লাশটি ছিল একজন কয়েদির। ’৭১ এ
জেল ভেঙে যখন তারা রাজপথ দিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছিল তখন
এই বৃহদাকার লাশটি এরকম বৃহৎ ড্রেনের ভেতর উপুড় হয়ে ছিল।
এটা ছিল আমার শৈশবে দেখা প্রথম লাশ। তার ওপর দিয়ে
তরতর করে স্বচ্ছ পানি বয়ে যাচ্ছিল। নিচে তার চেক-চেক
মোটা শাদা জামা মাঝে মাঝেই মরীচিকার মতো দুলে উঠছিলো।
এখনকার তুলনায় তখনকার বড় ড্রেনগুলোকে আসলে অনেক
কম জঞ্জাল বহন করতে হতো।
সমস্ত শৈশব আমি এই লাশটিকে বহন করে বেড়াই।
কৈশোর থেকে আমি তার মৃত্যুর জন্য মৃদু অপরাধবোধ করতে
থাকি। আর আজ সে পরিচিত স্বজনের মতো সারারাত
আমার ঘুমদৃশ্য দখল করে রাখলো।
.....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



