somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তানদের মধ্যে বাবা/মার পক্ষ পাতিত্য যা সন্তানের মধ্যে খারাপ প্রভাব ফেলে

১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্তানদের মধ্যে বাবামার পক্ষপাতিত্ব করা সন্তানদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে
অনেক বাবামা সন্তানদের মধ্যে কাউকে ভালবাসে কাউকে নয়। বাবামার এই ফেভারিটমজম করার অভ্যাস অন্য সন্তানদের সারা জীবনের উপরে খারাপ প্রভাব ফেলে এবং সন্তান সারা জীবন সেই কষ্ট নিয়ে বেড়ায়।
ভাইবোন অনেক সময় হয়তো যে ভাই বা  বোন টিকে বেশি ভালবাসে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করে 'তুই তো মার বেশি আদরের' বা 'মামস ফেবারিট' কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এটা কতখানি কষ্টদায়ক একটা সন্তানের জন্য।
৭০% মা এডমিট করেছে তাদের একজন ফেভারিট সন্তান আছে।
ফেভারিটজম জিনিসটা কি
একটা বোন বা ভাই বেশি জিনিস পায় বেশি ভালো ড্রেস পায় বা গিফট পায় । বা কোন সন্তান বেশি মনোযোগ পায় ইত্যাদি ।
বাবামা কেন এই বেশি ভালোবাসা দেখায়ঃ
হয়তো মেয়েটা অবিকল মায়ের মতো দেখতে তাই ,কিংবা বড়ো হলে তার স্বভাব গুলোও তার মতো হয় তখন সে মনে করে 'আমি-ই ঘুরে এসেছি'।
'বড়ো ছেলে' বা 'বড়ো মেয়ে' তাই বা 'ছোটো ছেলে' বা 'ছোটো মেয়ে' তাই। বড়োটা হওয়ার সময় মনের মধ্যে একটা বিশেষ স্থান নিয়ে রেখেছে তাই।
আর ছোটটি আদরের এই জন্য সে সব সময়ই ছোট হয়ে থাকে আর আদর পেয়ে থাকতেই থাকে।
কোন সময় যখন বাবামা অসুস্থ হয় তখন ছোটটি হয়তো দেখাশুনা করে বেশি যেহেতু বড়ো সন্তানরা কাছে থাকেনা তখন বাবামা মনে করে 'এই আমাকে হয়তো দেখবে' ।  এই মনোভাব নিয়ে তারা  তখন তাকেই বেশি ভালবাসতে থাকে।
অনেক সময় যে সন্তানের কাছ থেকে টাকা পয়সা বেশি পাওয়ার আশা থাকে তাকে ভালবাসে।
ছোট বেলায় যে সন্তান টি কম ভালোবাসার শিকার হয় সে সন্তান টি বড়ো হয়ে ডিপ্রেসান ,এঙ্গজাইটি অথবা 'আনসস্টাবল' এই সব মানসিক অসুখে ভোগে এমনকি ব্যাক্তিগত বিবাহিত জীবনে নানা রকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
ভালোবাসা না পাওয়া বাচ্চাটি সবসময় নিজেকে 'বঞ্চিত' মনে করে ,মনে করে আমি  রিজেকটেড , 'মা আমাকে ভালো বাসে নাই'  । 'মা আমাকে ভালো বাসেনাই' এই দুঃখ সে সারা জীবন নিয়ে বেড়ায় ।
''আমি মার রিজেকট হওয়া সন্তান" বড়ো হলে সেই সন্তান ভাবতে থাকে 'দরকার নাই এমন মায়ের'।  'তার কারোরেই দরকার নাই এ জীবনে'। তার এই আচরণ একলা করে ফেলে ।
সেই বেশি ভালোবাসা পাওয়া সন্তানটি অন্য সন্তান দ্বারা  resented হয় অর্থাৎ সেই ভাই বা বোনটি অন্য ভাইবোনের হিংসার পাত্র হয়।
বাবামার এই অসম আচরণ সন্তানদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কের যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে
১) সন্তানদের মধ্যে বিষাক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি
২) যে বিষাক্ত সম্পর্ক আর কোন দিনও দূর করা যায়না
৩) পরিণামে পুরো পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন ভেঙ্গে পড়ে
৪) পরিবারটি আর সেই পরিবার থাকেনা।
৫) কারোর সঙ্গে কারোর সম্পর্ক থাকেনা এই মায়ের এই  ভেদাভেদ মনোভাবের  জন্য
বাবামার অসম আচরণ বা অসম ভালোবাসা দেখানো একটা পরিবারের গঠনকে নষ্ট করে দায়। ভালোবাসা এবং মমতা হীন সম্পর্কের জন্য সবার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং পরিবারটি ভেঙ্গে পড়ে । কারোর বিপদে কেউ এগিয়ে আসেনা।বাবামার জন্যও বিপদঃ
১) বড়ো ছেলেটি একদিন বুড়ো বয়েসে ফাইন্যানসিয়ালি বা অর্থনৈতিক ভাবে    সাহায্য করবে এই ভেবে বড়ো ছেলেটিকে ভালবাসে বেশি
২) কাছে থাকা সন্তানটি হয়তো দেখাশুনা করবে তাই তাকে বেশি ভালোবাসা দেখায়
৩) বেশি ভালোবাসা সন্তান টি হয়তো সারা জীবন এমন ভাব দেখায় সে কোন দিন বাবামাকে ছেড়ে যাবেনা
কিন্তু এসবের কোন ভরসা নাই যে সত্যি তারা সেসব  কথা  রাখবে। বাবামাদের আরও বেশি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য দেখা যায় তারা অন্য সবায়কে নানা কওসোলে  দূরে সরিয়ে রাখে। যার ফলে পরিবারে দলাদলিতে ভরে যায়। বুঝতে সময় লাগেনা যে কি হতে চলেছে ।  যখন প্রকৃত সময় আসে তখন যে প্রিয় সন্তান গুলো কাছে থাকবে তার কোন গ্যারান্টি নাই । আর যে সন্তান অসম আচরণের স্বীকার হত,  তারাও তখন রিভেঞ্ছ নিতে পারে।
বেশি ভালোবাসার সন্তানের জন্যও পরে সমস্যা হয়ঃ
বিখ্যাত সাইকোলজিসস্ট উইলিয়াম বলেন 'যে সন্তান টিকে বেশি ভালোবাসা দেখানো হয়েছিলো এবং যার প্রশংসা বেশি করা হত সেও পরবর্তী জীবনে  যদি কোন কারণে ব্যর্থ হয় তখন সে ভাবে
"কেন এমন হল ,আমার তো এরকম হওয়ার কথা  নয়। আমি তো পারফেক্ট ,আমার তো কোন ভুল হতে পারেনা। বাবামা তো তাই সারা  জীবন তাই  বলেছিল । নিজ পরিবারে আমি একজন ভালোবাসার,  বাইরে কেন নয়।"
 বাবামা কি এটা থেকে বের হতে পারবেঃ
না পারবে না মোটেও পারবে না । কারণ সন্তানেরা অলরেডি বড়ো হয়ে গেছে। তারা  সেই সার্কেল থেকে বের হয়ে গেছে।
ম্যারেজ এবং ফ্যামিলির গবেষণা এবং মানুষের ইন্টার্ভিউ থেকে জানা গেছে মাত্র ১৫% সন্তান নিজ পরিবারে সমান সমান ট্রিটমেন্ট পেয়েছে তাদের বাবামার কাছ থেকে।
উইলিয়ামের গবেষণায় উঠে এসেছে মধ্য বয়সী মানুষের ডিপ্রেসানের কারণ মার কাছ থেকে পাওয়া অসম ব্যাবহার আর আচরণের তিক্ত অভিজ্ঞতা যা তাকে এতো বেশি অ্যাফ্যেক্ট করে যার ফল স্বরূপ সে আজ এই ডিপ্রেসানের শিকার ।
এই ভাগাভাগি করার প্রাত্যহিক প্রবণতা এবং কোন কারণ ছাড়াই এক সন্তানকে বেশি ভালোবাসা এবং অন্যজনকে অবহেলা,  সন্তানের  সারা জীবনের জন্য মানসিক ভাবে কষ্টের কারণ হয়।
উইলিয়ামের ভাষায় "This is a brutally honest look at how parents mold the lives, futures, and even mental health of their children" .
বাবামার করনীয়ঃ
বাবামার প্রধান কাজ হল সব সন্তান কে সমান ভাবে ভালোবাসা। সমান ভাবে দেখাশুনা করা। মনে রাখতে হবে আপনার সন্তান আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে আপনার গাইড পাওয়ার জন্য। সেখানে আপনিই যদি এই রকম ব্যাবহার করেন তাহলে তারা  কোথায় যাবে?
একজন ভালো মানুষ একজন ভালো মা হয়। যে মায়ের মধ্যে সন্তানের মধ্যে ডিভিসান করার প্রবণতা থাকবেনা,  দলাদলি করবেনা, একজনের কথা আর একজনকে বলবেনা, একজনের সামনে আরেকজনকে অপমান করবেনা, দুর্বল দিকটি নিয়ে বুলি করবেনা, প্রশংসা করবে কিছু একটা ভালো জিনিস করলে তাহলেই সন্তান আপনাকে সন্মান করবে আপনাকে ভালবাসবে। ভালোবাসা পেতে হলে সন্মান পেতে হলে আপনাকেও তা করতে হবে।প্রত্যেক মানুষ কে  বিয়ে করার আগে  বা  পরিবার আরম্ভ করার আগে শিক্ষা নিতে হবে বাবামার কর্তব্য কি। কি ভাবে ভালো বাবা মা হওয়া যায়। কি ভাবে একটি হেলদি পরিবার গোড়তে হয়।
বাচ্চা জন্ম দেয়া সহজ ব্যাপার কিন্তু প্রকৃত বাবামা হওয়া কঠিন।
তথ্য সূত্র
Childhood Emotional  Neglect , S.Effects
Amnesty International , Child Rights
Longterm  S. Effect , BatonRouge
প্রবন্ধঃ
লেখক: হুসনুন নাহার নার্গিস ,নারী ও শিশু উন্নয়ন কর্মী ,UK
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×