somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাণিজ্যের ঘোড়ায় সওয়ার কবিতা যখন পণ্যপ্রভূর দাসখতে মলিন ম্লান মল

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিতাকে তোমরা আন্ডারওয়্যার বানাতে চাও
কবিতাকে তোমরা লিপিস্টিক বানাতে চাও
কবিতাকে তোমরা রিকন্ডিশনড্ গাড়ি বানাতে চাও
কবিতাকে তোমরা রুনালায়লা বানাতে চাও
এবং
আজকাল
বাংলাদেশ (অর্থাৎ বৃটিশ) টোব্যাকো কোম্পানির ক্যালেন্ডারে
সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিপ্লবী কবিদের
কবিতাও ছাপছে। ( ফরহাদ মজহার : ১৯৮৩, নভেম্বর)



পাঠক, শুরুতেই একবার মাশআল্লাহ্ বইলা ন্যান। আপনারা অবগত আছেন, সৃষ্টিশীল বাঙালি সর্বদাই, সর্বকাজেই এক নম্বর হয়। কিছুদিন পূর্বে এই উৎপাদনমুখর সৃষ্টিশীল প্রজাতিটি বোকাচোদা বাঙালিকে এমন এক সৃষ্টিকর্ম উপহার দিয়াছেন, যা এই বিশ্ব সংসারের আর কারও মুরোদে কুলায় নাই। নারীর স্তনপাছাঊরুকে কবিতাপণ্যের মায়াযাদু দিয়া মুইড়া নতুন ডায়ালগ হাজির করছেন, কবিতা সমাজের পরিধেয় । বাহ্, চমৎকার বাহ ! প্রদর্শনবাজ তরুনের কাছে কবিতাকে বেইচা দিয়া, পণ্যগ্রস্থ মাইয়ালোককে স্তনবাজি করবার শিল্পসম্মত রাস্তা বাতলাইয়া দিয়া সমাজের ইজ্জত বাড়ানোর কী চমৎকার ব্যবসা !

প্রতিদিন ধান্দার অজস্র গলিঘুপচিতে আটকাইয়া আছি আমরা। সকাল বিকাল নানা কায়দার নানা সাইজের ধান্দাকলা লইয়া রোড-ঘাট পার হই, সমাজ সেবা করি, রাষ্ট্রের পোঁদে লাথি মাইরা পর্যটন সন্ত্রাস জারি রাখি, গরিবের গোয়ায় আঙুল দিয়া রক্তেরসে উন্নয়ন প্রকল্পের আমদানি বাড়াই। আর আমাদের কবিতাপ্রিয় গেঞ্জিবিক্রেতা প্রতিষ্ঠার শ্লোক গেঞ্জির পোঁদেপাছায় কবিতার বাণিজ্যিক ছাপ দিয়া কবিতাকে ধন্য করে তোলেন, পণ্য করে তোলেন। মুর্খঅসংস্কৃতশিল্পমনস্কতাহীন বাঙালিকে, তার অনুর্বর ন্যাংটো সমাজকে কবিতার পোশাক পরিয়ে কাব্যময় রোমান্টিকতায় ভরিয়ে তোলেন। পাঠক, এতাকাল আমরা জানতাম কবিতা পাঠের জিনিস। আর এখন কর্পোরেট গেঞ্জিবিক্রেতারা বলেন কবিতা প্রদর্শনের জিনিস। কবিতা দিয়া নারীর স্তন ঢাকোন লাগবো, কবিতার ক’ না-বোঝা তরুনের প্রদর্শনজাত কাব্যপ্রীতি জাহিরের জন্য কবিতার ছাপ মারোন লাগবো টি-শার্টে।

পাঠক, বাংলাদেশে এইসব ধান্দার বিসমিল্লাহ্ হয় একুশ আর একাত্তরকে বিক্রি করার মধ্যে দিয়া। দ্যাশের পতাকা দিয়া মাইয়ালোকের জামা পায়জামা তৈয়ার কইরা দেশ প্রেম জাহিরের কী ভয়াবহ সাংস্কৃতিক আন্দোলন ! শিল্পকলা ব্যবসার মুনাফার মিঠাই আর বোকাচোদা বাঙালিকে আরও বোকাচোদা করবার সুখে চতুর্দিকে সদ্য গজিয়ে ওঠা গেঞ্জিবিক্রেতা ভাইবেরাদাররা সুলতান জয়নুল জীবনবাবু গুণ শামসুর রাহমানদের বিক্রি করার ধান্দা হাতে নেয় আর সফলও হয়। দ্যাশ, দ্যাশের তরুন পোলাপানের আবেগকে কাজে লাগাইয়া ব্যবসা প্রসারিত হয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে। কাটতি বাড়ে নকশা ( দৈনিক প্রথম আলোর বিনোদন বাণিজ্যের সাপ্তাহিক প্রকাশনা) পাতার। আহ্, দ্যাশের চোট্টা মিডিয়া ছহবতে কত সুন্দর মিইলা যায় গেঞ্জিবিক্রেতার সাথে! গেঞ্জিবিক্রেতারা হইয়া ওঠে পত্রিকার স্টার। আর এইভাবে দ্যাশপ্রেমিক সংবেদনশীল বাঙালি প্রজাতিটি তার দ্যাশপ্রেমের চেহারামোবারক দ্যাখানোর তাগিদে ছোটে নিত্য উপহারে, ছোটে শিল্পসংস্কৃতির বাণিজ্যিকীকরণের প্রধান কেন্দ্র আজিজ সুপার মার্কেটে। এরই ধারাবিহকতায় শ্লোক বিশ্বের প্রথম কবিতার টি-শার্ট প্রকাশনা বের করে তাক লাগিয়ে দেয়। কবিতা হয়ে ওঠে ব্যবসার প্রধানতম মসলা। কবিতা হয়ে ওঠে অষ্টাদশী পণ্যনারীর মাংসল বুকে গেঁথে থাকা চমৎকার শিল্পকলা !

সাধারন পাবলিকের মত আমাগোর কবিতাপ্রভুরাও খুব প্রদর্শনপ্রিয় হইয়া উঠছেন আজকাল। প্রতিমিডিয়ার গল্পবাজ ভাবুক কবি তার কাব্য প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটান কবিতাকে টি-শার্ট বিক্রেতার কাছে তুলে দিয়ে। অসম্ভব শ্রদ্ধাস্পদ কবিরা পা ফাঁক করে শুইয়া পড়েন পুঁজিদানবের সামনে। আমাদের আনিসুল হক নির্মলেন্দু গুণ রফিক আজাদেরা প্রথম আলোর নকশা পাতায় কবিতার ছাপ মারা গেঞ্জি ঝুলাইয়া পোজ দ্যান, তারা আমজনতারে কী বুঝাইতে চান, কোন ঐশী বাণী প্রচার করতে চান, আমরা বোকাচোদারা কী তা বুঝি না ?? শ্লোক তার নিজস্ব বাণিজ্যিক ধান্দায় বেছে নেয় পুঁজিবাদী স্বপ্ন ও দর্শণের সমর্থক এলিট প্রদর্শনপ্রিয় কবিগোষ্ঠিকে। যাগোর দিয়া খাঁড়া করা হইতাছে একটা ট্রেন্ট। যে ট্রেন্টে কবিকে হতে হয় টি-শার্ট বিক্রির এজেন্ট। কবির এই রকম বাণিজ্যিক চোট্টামি দেখে তার ভক্ত ছোটেন কবিতার ছাপঅলা টি-শার্টের খোঁজে। নারী তার স্তনপাছাকে আর কাব্যময় করে তুলবার জন্য ছোটেন কবিতার ছাপঅলা জামা পায়জামা কাচুঁলির খোঁজে !

আমরা বোকাচোদারা কবিতা লইয়া এই ধান্দাবাজি মানি না। কবিতাপ্রভূদের মগজে পন্যের, প্রসারের, প্রদর্শনের যে মল ময়লা জমা হইতাছে নিত্যদিন, আমরা আর কিছু না পারি তাগোর খারিজ কইরা দিয়া প্রতিশোধ তুলতে পারি বর্ণমালার অথবা আমরা কিছুই পারি না। আমাগোর সব কিছু যেমন ব্যাচা হইয়া গেছে, ভাইস্যা গেছে পুঁজির প্রশ্রাবে, তেমনি কবিতা আর কবিরাও ব্যাচা হইয়া যাইবো। গেঞ্জির বিজ্ঞাপনে কবির মুখ ভাইসা উঠবো চালাক বাক্সে; পত্রিকার লিপস্টিকমার্কা রূপসী পাতায়, পন্যনারীর পাছায়পিঠেঊরুতে বমির মতো মাইখ্যা থাকবো কবিতার ম্লান মলিন অক্ষরমালা...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৬:৩৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×