somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাইটানিক জাহাজ ডোবার কারন (লৌকিক এবং অলৌকিক)

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লৌকিক কারন:
উত্তরঃ ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিলের রাত। প্রচন্ড ব্যাস্ত ওয়্যারলেস অপারেটর ফিলিপস। যাত্রীদের নানা রকমের আনন্দ উলুসিত বার্তা একটানা প্রেরণ করে যাচ্ছে নিউফাউন্ডল্যান্ডের কেপ রেসে। সেখান থেকে আবার রিলে হয়ে পৌছে যাবে গন্তব্যে, প্রেরণকারী যাত্রীদের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে। এর মাঝেই আটলান্টিক ট্রান্সপোর্ট লাইনের জাহাজ ‘মেসবা’ থেকে এলো ষষ্ঠ আইস-ওয়ার্নিং বার্তা। ৪২-৪১.২৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৪৯-৫০.৩ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এলাকায় ভারি ও বিশালাকার তুক্রা/অবিচ্ছেদ্য বরফ এবং অসংখ্য হিমশৈল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ব্যস্ত ফিলিপস অনুধাবন করতে পারলেননা ওই বরফ/হিমশৈল এবং টাইটানিকের মধ্যবর্তী ব্যবধান। এমনকি কিছুটা বেখায়ালে বার্তার কাগজটাকে একটা পেপারওয়েট দিয়ে চাপা দিয়ে রাখলেন কনুইয়ের পাশে। সবচেয়ে বড় কথা, ওই অতি গুরুত্তপূর্ণ বার্তাটি কখনও পৌছায়নি ক্যাপ্টেন স্মিথ বা ব্রিজে কর্তব্যরত অফিসারের কাছে। যেকোন বিচারে ওই রাতটি ছিল ছিমছাম এবং অন্ধকার। তাপমাত্রা ঠিক হিমাঙ্কে। চাঁদ না থাকলেও আকাশজুড়ে ছিল ঝকমকে তারার মেলা। আর সেসব এতোটাই উজ্জ্বল ছিল যে, একজন অফিসার ওই সময় দিগন্তের ঠিক উপর দিকে উদীয়মান বৃহস্পতি গ্রহকে আরেকটি জাহাজ ভেবে ভুল করেছিল। সমুদ্র ছিল চমৎকার, শান্ত এবং সমতল (মিরির সী)। ঢেউ না থাকাতে দূর থেকে হিমশৈল দেখাও ছিল প্রায় অসম্ভব।কারন তাহলে হিমশৈলের ওপরে ভেঙে পড়া ঢেউয়ের ধবল চুড়াগুলো দৃশ্যমান হতো অনেক আগেই।


মধ্যরাতের ২০ মিনিট আগে একজন লুকআউট ফ্রেডারিক ফ্লিটের চোখে পড়ে জাহাজের ঠিক সামনেই বিশাল এক হিমাশৈল। সুতীব্র চিৎকারে সে অবহিত করলো ব্রীজকে, ‘আইস এহেড’। ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম মারডক সশব্দে চেচিয়ে উঠলেন, ‘হার্ড টু স্টারবোর্ড’ (ডানদিকে সর্বোচ্চ কোন-৩৬ ডিগ্রীতে হুইল ঘুরাও)। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মারডক এবার ইঞ্জিন রুমে টেলিগ্রাফ সঙ্কেত প্রেরণ করলেন, ফুল এস্টার্ণ(উল্টো দিকে সর্বোচ্চ গতি)। তবে বিশাল টাইটানিক চলছিল অতি উচ্চ গতিতে আর ওই হিমশৈল ছিল বড় বেশি নিকটে। হিমশৈলটি দৃশ্যমান হবার ৩৭সেকেন্ড পরে সূচিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিনে জাহাজ ধাক্কা খেলো ওই হিমাশৈলের সাথে। জাহাজের ডান দিকে সৃষ্টি হলো বিরাট ফাটল। ফলে মোটা মোটা পাঁচটা ওয়াটার টাইট চেম্বারে পানি প্রবেশ শুরু করে।প্রচন্ড ধাক্কায় ঘুমন্ত বা হলরুমে নৃত্য-গীতে বিভোর যাত্রীগণ সকলেই উপলব্ধি করলো কিছু একটা ঘটেছে। ভয়ঙ্কর কিছু!
রাত ২টা ১০ মিনিটে সাগরতলে সর্বপরি ডুবে যায় টাইটানিক। শত শত যাত্রী লাইফবোটে আরোহণ করে নিজেদের বাঁচাতে সমর্থ হয়েছিল। শীতল, সিক্ত, ভয়ার্ত চোখে তারা সকলেই অতি নিকট থেকেই প্রত্যক্ষ করেছিল জলের মাঝে টাইটানিকের হারিয়ে যাবার করুণ দৃশ্য। ২২২৩ যাত্রীর মধ্যে ৭০৫ জনকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো। বাকি ১৫১৮ নারী-পুরুষ ও শিশু হয় ডুবে না হয় প্রবল শীতের প্রকোপে জমে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। পরে ৩২০ টি মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কুনার্ড লাইনের জাহাজ ‘কাপাথিয়া’ চার ঘণ্টা ধরে পরিচালনা করে উদ্ধার কাজ।

অলৌকিক কারনঃ
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে মারা যান ‘প্রিন্সেস অব আমেন-রা’। নীলনদের পাশে ল্যুক্সরে তাঁর সৎকার করা হয়। উনিশ শতকের নব্বই দশকের শেষ দিকে চার জন ইংরেজকে ওই রাজকুমারীর মৃতদেহসহ একটি মমি ক্রয়ের জন্য আহবান জানানো হয়। উৎসাহী ইংরেজদের একজন বেশ কয়েক হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে বিক্রেতাদের কাছ থেকে মমিটি ক্রয় করেন এবং সেটাকে নিয়ে আসেন তাঁদের হোটেলে। কয়েক ঘন্টা পরে মরুভূমির দিকে হেটে যেতে দেখা যায় ওই ব্যাক্তিকে। কিন্তু তিনি আর কখনো ফিরে আসেননি! পরদিন আরেকজন ইংরেজ এক মিসরীয় ভৃত্য কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়। এমনভাবে তিনি আহত হন যে কেটে ফেলতে হয় একটি হাত! তৃতীয় ব্যাক্তি দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু দেখেন যে, ব্যাংকে গচ্ছিত তাঁর সমুদয় অর্থ লোপাট হয়ে গেছে অন্য কারও জালিয়াতির মাধ্যমে! চতুর্থ ব্যাক্তিটি হয়ে পড়েন প্রচন্ড রোগাক্রান্ত, চাকরি চলে যায় এবং শেষ পর্যন্ত রাস্তায় দিয়াশলাই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন! যা হোক, পথিমধ্যে অন্যান্য ঝামেলাসহ। সেই মমিটি পৌঁছেছিল ইংল্যান্ডে। কিন্তু অভিশপ্ত অধ্যায়ের হয়নি শেষ। ওই কফিনের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে কোন মানুষের ভাগ্যে জুটেছিল দুর্ঘটনা বা মৃত্যু। এমনকি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত মমিটির একজন দর্শনার্থীর ভাগ্যেও জোটে চরম দুর্দশা। ওই দর্শনার্থী মহিলা তাচ্ছিল্যভরে একটি ময়লা পরিষ্কার করার কাপড় দিয়ে মুছেছিলেন কফিনের উপর অঙ্কিত রাজকুমারীর মুখচ্ছবি। কয়েকদিন পরে ওই মহিলার সন্তানটি মারা যায় হাম রোগে!
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ মমিটিকে বেসমেন্টে সরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই মমি সরানোর কাজে অংশগ্রহণকারী একজন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই কাজের তত্ত্বাবধায়ককে তাঁর অফিসকক্ষের ডেস্কের ওপরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্বভাবতই বিষয়টি সংবাদপত্রের নজরে আসে। একজন ফটো-সাংবাদিক ছবি তুলে ডেভেলপ করে দেখতে পান যে, রাজকুমারীর মুখের বদলে এক বীভৎস বা বিকৃত চেহারা। জানা যায় যে বাড়ি ফিরেই ওই সাংবাদিক গুলিতে আত্মহত্যা করে।
প্রায় দশ বছর ধরে চলতে থাকে এইসব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা উপঘটনা। চূড়ান্তভাবে মমিটিকে বিক্রি করা হয় এক শৌখিন সংগ্রাহকের কাছে। বিচিত্র রকমের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির পড়ে তিনি মমিটিকে নির্বাসন দেন নিজ বাড়ির চিলেকোঠায়। এতসব অভিশপ্ত ঘটনার পরও একজন মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ কিনে নেন মিসরীয় রাজকুমারীর মমি। নিউইয়র্কগামী একটি জাহাজে বুক করেন মমিটি, নিজেও ওঠেন ওই জাহাজে। প্রিয় পাঠক, বলুনতো জাহাজটির নাম কি? সেটাই ছিল টাইটানিক! আর মমিটির কথা আজ আর কেউ জানেনা।



দৈনিক জনকণ্ঠের সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৪৫
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×