somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ Dead Poets Society

১৩ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নটরডেম কলেজের অরিয়েন্টেশনের দিন কলেজের প্রিন্সিপাল ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা আমাদের অন্তরে গেঁথে দিলেন ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য এই কলেজের সেই তিনটি শব্দ যা আজো আমি ভুলতে পারিনি - Diligite Lumen Sapientiae অর্থাৎ জ্ঞানের আলোকে ভালোবাসো। কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে নটরডেম কলেজ সম্পর্কে অনেক মিথ শুনেছি। যেমন এখানে একবার ভর্তি হতে পারলেই হল ভালো রেজাল্ট নাকি আপনাআপনিই এসে যায়। তারপর এখানে নাকি যেনতেন ছাত্র ভর্তি হতে পারে না। ভর্তি পরীক্ষায় টিকে গেলেও অত্যান্ত সূক্ষ্ম বাছাই প্রক্রিয়ায় একমাত্র তাদেরকেই এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়া হয় যাদের ভেতরে অন্যরকম কিছু একটা আছে।
এই মিথগুলো আমার ভেতরে পাকাপাকি ভাবে বিশ্বাসে রূপান্তরিত হল যখন দেখলাম আমার আশেপাশে সব বোর্ড স্ট্যান্ডরা ভাবলেশহীন মুখে বসে আছে। ওদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল যেন বোর্ড স্ট্যান্ড কোন ব্যাপারই না। আর একেকজন শিক্ষক যেন একেকটা জ্ঞানের জাহাজ। এতো সুন্দরভাবে প্রতিটা বিষয় তারা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছিলেন যে মনেই হচ্ছিল না এখানে পড়ালেখা করতে এসেছি।
যাই হোক, এতকিছু দেখে আমার মাথায় একটা দুর্দান্ত চিন্তা খেলে গেল। আচ্ছা, আমি তো তেমন কোন ভালো ছাত্র না, তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষাতেও তেমন একটা ভালো করতে পারিনি। তাহলে এরা আমাকে এখানে ভর্তি করলো কেন? চিন্তার বিষয়। খুবই চিন্তার বিষয়!
অনেক ভেবেচিন্তে আমি আবিষ্কার করলাম আমার ভেতরে নিশ্চয়ই “কিছু” একটা আছে। এই “কিছু একটা” যে কি সেটা সম্পর্কে সেসময় ধারনা করতে না পারলেও নটরডেম সম্পর্কে আমার আগাধ বিশ্বাস ছিল। আমার বিশ্বাস ছিল যে ওরা আমার মধ্যে সেই “কিছু একটা” খুঁজে পেয়েছিল বলেই এই ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য কলেজে আমাকে ভর্তি করেছিল।
আহ! কি সব স্বপ্নের মতো দিন ছিল সেসব! নটরডেমে নিজের ভেতরের আগুনের দেখা না পেলেও Dead Poet Society দেখতে গিয়ে আমার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।
যেমনটা বলেছিলাম, Dead Poet Society-র গল্পটা শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য Weldon একাডেমীর অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে। প্রিন্সিপাল নোলান একটি গুরুগম্ভীর বক্তৃতার মধ্য দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে “Tradition. Honor. Discipline. Excellence” – এই চারটি আদর্শের ওপর ভর করে এই বিদ্যাপীঠ ও তার প্রাক্তন ছাত্ররা সফল হয়েছেন। অরিয়েন্টেশনের শেষে তিনি সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন এই একাডেমীতে আগত নতুন শিক্ষক মিঃ কিটসের সাথে। এ বছর থেকে তিনি Weldon একাডেমীর ছাত্রদের সাহিত্য পড়াবেন।
ক্লাসের শুরুতেই দেখা গেল মিঃ কিটসের পড়ানোর ঢং এই একাডেমীর অন্য শিক্ষকদের বিরক্তিকর আর গতানুগতিক ধারা থেকে একদম আলাদা। কবিতা পড়ার বদলে তিনি চেষ্টা করলেন তার ছাত্রদের মধ্যে কবিতার অনুভব ছড়িয়ে দিতে – আর শেখালেন “Carpe Diem”। ব্যাতিক্রমি এই শিক্ষকের প্রতিটি কথা ছাত্ররা গোগ্রাসে গিলতে লাগলো।
কারপে ডিয়েম, meaning Seize the day অর্থাৎ জীবনে কে কিভাবে সফল হবে সেটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা না করে কিভাবে আজকের এই দিনটাকে উপভোগ করা যায়। )



এর মধ্যেই কৌতূহলী এক ছাত্র আবিষ্কার করলো যে মিঃ কিটস একসময় এখানেই অধ্যয়ন করেছেন। স্কুলের অ্যানুয়াল বুক থেকে তারা জানতে পারল মিঃ কিটস শুধু ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রই ছিলেন না, এসময় ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন, মৃত কবিদের সংঘ নামে একটা দল তৈরি করেছিলেন, এমনকি এই অ্যানুয়াল বুকের সম্পাদকও তিনিই। অ্যানুয়াল বুক তার সম্পর্কে বলা আছে – “This man most likely to do anything!” অর্থাৎ, বদমাইশিতেওও তিনি কম ছিলেন না।
সেদিন বিকেলে তারা মিঃ কিটসকে জেঁকে ধরল বিস্তারিত জানার জন্য। উৎসাহী ছাত্রদের কৌতূহল নিবৃত্ত করতে মৃত কবিদের সংঘ প্রসঙ্গে তিনি জানালেন যে জীবনের সবটুকু আনন্দ রস আস্বাদন করাই ছিল এই দলের সদস্যদের আসল কাজ। আর কিভাবে তারা সেটা করতেন? প্রতিদিন রাতের আঁধারে একাডেমীর গেট কিপারের দৃষ্টি এড়িয়ে তারা বাইরে বেড়িয়ে আসতেন। তারপর চলে জেতেন গভীর জঙ্গলে। সেখানে এক গুহার ভেতর আগুন জ্বালিয়ে শুরু হতো কবিতা পড়া।



অত্যান্ত রোম্যান্টিক এই আইডিয়া ওদের সবার ভালো লেগে যায়। আর এই বয়সটাই এমন যে যেকোন অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেলেই নেশা লেগে যায়। ওদের যেন আর তর সইছিল না। সেদিনই মৃত কবিদের আত্মাকে জাগাতে গভীর রাতে বের হয়ে আসে কয়কজন তরুণ। মৃত কবিদের সংঘ নতুন করে প্রান ফিরে পায়। আর এর সদস্যরা ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে বাস্তবতা থেকে দূরে প্রেমময়, উচ্ছল আর স্বপ্নময় এক জগতে।
অবশ্য তাদের ভুল ভাঙতে দেরি হয় না। বাস্তবতার রূঢ় আঘাতে ভেঙ্গে পড়তে থাকে তাদের বর্ণিল পৃথিবী। কিন্তু অন্তরাত্মার কথা যারা শুনতে শিখেছে তারা কি এতো সহজেই হেরে যাবে?
রবিন ইউলিয়ামস আমার প্রিয় একজন অভিনেতা। মূলত তার অভিনয় দেখার জন্যই এই সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু সিনেমাটার গল্পটা আমাকে এতোই স্পর্শ করে গেছে যে আজকে অফিসেই যেতে পারিনি। হা হা হা।

আরও জানতেঃ Dead Poets Society In IMDB


আমার অন্যান্য রিভিউগুলোঃ

১) মুভি রিভিউঃ “π”
২) মুভি রিভিউঃ The Lunchbox

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×