পরশু দুপুরে গভীর ঘুমে আমি অচেতন। এমন সময় কেঁপে উঠলাম। বালিশের নিচে মোবাইল বাজচ্ছে। দেখি রুম্পার ফোন।
রুম্পার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলে। কাস শুরুর প্রথম দিন-ই হলে উঠেছিলাম। অতি উৎসাহে। আমরা যারা ঢাকার, তাদের জন্য বরাদ্দ হলো নামায রুম। সে রুমে প্রথম দিন আমি আর রুম্পার সঙ্গে উঠল আফরিন। বিশাল হল রুমে আমরা তিন বাসিন্দা। আমি হলি ক্রস , রুম্পা ভিকারুনি্নসা আর আফরিন মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ থেকে। হোয়াট আ কম্বিনেশন! প্রথম দুদিন কেন জানি তারা আমার সঙ্গে সহজে মিশতে পারল না। আমাকে কেন জানি ভয় পেয়েছিল। দুদিন পর থেকে আমরা জানি ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম। এরপর এলো ভিকারুনি্নসার শিখা, তৃষা, রিতু। কমার্স কলেজের মুন্নী। ধীরে ধীরে এ রুমে উঠল আরো অনেকে- মেরি, বহ্নি। রুম্পা অনর্গল কথা বলত। এতো কথা বলত যে তার নাম আমি দিয়ে ফেলালাম বাংলাদেশ রেডিও। তারপর দেখি শিখাও কম যায় না। তার নাম দিলাম বিবিসি। তৃশা আর বহ্নির ছিল ফোনের রোগ। যখনি রাতে হলের ফোন বাজত এই দুজন কম্পিটিশন দিয়ে দৌড়ে যেত। আফরিনেরও ফোনের রোগ ছিল তবে তা বিশেষ একজনের সঙ্গেই! আর সেই অত্যাচারটা পোহাতে হতো আমাকে। কারণ সে আমার মোবাইল দিয়ে কথা বলত। তবে আফরিন অসাধারণ চা বানাত। রাত হলেই আমি তাকে তেল মারা শুরু করতাম। এক ড্রাম তেল খাওয়ার পর সে চা বানিয়ে আনত।
আমি আগে একেবারেই সাজগোজ করতাম না। এদের পাল্লায় পরে আমারও সাজার রোগে ধরল। কাসে যাবার আগে একঘন্টা ধরে সবাই মিলে রেডি হতাম। বিকেল বেলাও এক অবস্থা। সন্ধ্যার পর ঘুরতে বের হওয়া, মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান দেখা। আর কনসার্ট বা ক্যাম্পফায়ার থাকলে তো কথাই নেই। এমন নাচা নাচতাম, যে সবাই শুধু আমাদের-ই দেখতো! বিশেষ করে জেমস, বাচ্চু আর সোলস-এর কনসার্টের নাচ আজও অনেকে মনে রেখেছে। সবচে বেশি নাচানাচি করতাম আমি। এমনকি রুমের মধ্যেও।
প্রত্যেকের জন্য আলাদা বেড থাকলেও সবাই দু'জন করে ঘুমাতাম। কখনো সারা রাত লনে বসে জোছনা পোহাতাম। মাঝে মাঝে গানের আসর বসত। আফরিন অসাধারণ গাইত। তবে আমার জন্য প্রতিরাতেই তাকে জারা জারা গানটা গাইতে হতো। কখনো ভোরে হাটতে বেরিয়ে যেতাম। সূর্যদয় দেখার জন্য। কতদিন রাস্তা ধরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে দল বেঁধে হেঁটে বেড়িয়েছি। তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও রাস্তা ধরে ভাবলেশহীনভাবে হেঁটেছি। রাতের রাতের পর রাত নিজেদের কষ্টগুলো ভাগাভাগি করেছি। লেগে থাকতাম একজন আরেক জনের পিছনে- কত ভাবে খেপানো যায়!
এডভেঞ্চার-ও কম করেনি আমরা।
এদিকে ছ'মাস পেরিয়ে গেল। নামাযরুমে ভিড় করেছে আরো অনেকে। এবার রুম চাই। রুম পেলাম। নম্বর 203! রুম্পাকে নিয়ে উঠলাম। কারণ সে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সবাই আমাদের তখন দুই সতিন বলে ডাকা শুরু করল! রুমে উঠার পরই আমি হলে থাকা কমিয়ে দিলাম। গত দু'বছরে একেবারেই থাকিনি।
রুম্পা তাই ফোন করল-তুই জানিস? সুপার ম্যাডাম তোর সিট ক্যানসেল করে দিয়েছে?
(নামায রুমের এ সময়টা আমার জীবণের সবচেয়ে মজার সময়গুলোর একটি, যা আমি বলে বোঝাতে পারব না)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



