somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নয়ন বিন বাহার
তোমাদের এ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। দূরে! বহু দূরে! ঈগল চোখের আড়াল খুঁজে নিচ্ছি- যেখানে সমস্ত পাপী স্বীকারোক্তি দেয় তাদের আকন্ঠ পাপের। অন্তত তারা সত্যের আড়ালে পাপ করে না; পাপ নিয়ে করে না কোন মিথ্যাচার!

ওয়েটিং ফর লাইফ

১৭ ই মে, ২০২০ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১.
ডিসেম্বরে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমরা দুই ভাই গেছি নানু বাড়ী বেড়াতে। নানা নেই। আছেন এক মামা। মামাত ভাই-বোন ছিল পিঠাপিঠি। তাই আমরা অনেক মজা করতাম। সারা বছর তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করতাম কখন মামা বাড়ী যাব। আমাদের মামা বাড়ী গল্প কবিতার মামা বাড়ী ছিল না। ছোট একটা বাড়ী। ছোট একটা পুকুর। ছোট দুইটা বাগান। যেখানে আমারদের বাড়ীর চৌহদ্দী ঘুরে আসতে লাগত ঘন্টা খানেক। এতসব কিছু উপেক্ষা করে আমাদের প্রধান আকর্ষণ ছিল মামাত ভাই-বোনদের সাথে আড্ডাবাজি। আমরা একসাথ হলেই দুনিয়াটা আমাদের হাতের মুঠোয় থাকত।

দুই ভাই। আমি আর আমার ছোট। মামা বাড়ী যাওয়ার দু’একদিন পরেই শুরু হল তীব্র শীত। তখন আমরা খুবই ছোট। ছোট ছোট হাফ প্যান্ট পরি। তীব্র শীতে হাঁটুর নিচটা ঠক ঠক করে কাঁপছে। দুই হাত বগলের নিছে ঢুকিয়ে শীত জয়ের অপচেস্টা অব্যাহত রাখা।
নানু এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে তোদের লম্বা প্যান্ট কই? এই শীতে তো মরে যাবি। আমি ঘটনা বুঝতে পারলাম। লম্বা প্যান্ট নেই এটা কিভাবে বলি? লজ্জা পেলাম। চুপ করে রইলাম। ছোট ফস করে বলে ফেলল, না নানু, আঙ্গো লম্বা প্যান্ট নাই!

আমি তার এই স্বীকারোক্তিতে খুব বিরক্ত হলাম। আমার মনে হল সে আমার মান-সম্মান ধুলায় লুটিয়ে দিল। তীব্র শীতে লম্বা প্যান্ট থাকবে না কেন? অবশ্যই থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের নেই। তাই বলে এটা বলে বেড়ানোরও কিছু নেই। ছোটকে এসব ব্যাপার ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে। যেখানে সেখানে এসব বলে বেড়ানো যায় না।


২.
স্কুলে তখন আমরা লুঙ্গি পরে যাই। প্যান্ট পরার জন্য খুব একটা চাপ তখনো আসেনি। আমার বন্ধুরা সবাই লিনেন লুঙ্গি কিনেছে। এটার খুব চল। হঠাৎ সবাই পরতে শুরু করল। তাই আমাকেও লিনেন লুঙ্গি কিনতে হবে। মাকে বলেছি। মা আশ্বস্ত করেছে কিনে দিবে। কিন্তু বাবার হাতে টাকা নেই। এদিকে বন্ধুদের কাছে মান সম্মান টেকানো দায়। ভয়ে বাবার কাছে আমরা কোনদিনই কিছু চাইতাম না। সব আবদার মায়ের কাছেই। মাকে খুব জ্বালাতন করতে লাগলাম। এক হাটবারে মা তার পালিত মোরগ বিক্রি করতে দিলেন। এই মোরগ বিক্রির টাকা দিয়ে আমার লিনেন লুঙ্গি কেনা হবে। বাজারে গিয়ে বড় রাতা মোরগ বিক্রি করলাম নব্বই টাকা। হাঁসের ডিম বিক্রি করলাম দেড় কুড়ি। কুড়ি ষাট টাকা করে নব্বই টাকা। সব টাকা বাবাকে দিয়ে দিলাম। বাবা জানেন এটা কিসের টাকা। আমরা বাপ-বেটা লুঙ্গি কেনার জন্য কাপড়ের দোকানে দোকানে ঘুরছি। কেউ লিনেন লুঙ্গি চিনে না। তাদের কাছে নেই। তখন বাবা আমাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, এই লুঙ্গির দাম কত রে?

এটা একটা সহজ জিজ্ঞাসা। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি। বাবা ভাবছে, দোকানিরা যে কাপড় চিনতে পারছে না তার নিশ্চয় অনেক দাম। বাবার কন্ঠে ছিল উৎকন্ঠা। সেই উৎকন্ঠায় সচকিত হয়ে আমি বললাম, আব্বা লুঙ্গি যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে এখন কিনব না। পরে না হয় কিনব। এখন চলেন বাড়ী যাই।

তার পর দিন দেখি বাবা আমার জন্য লিনেন লুঙ্গি নিয়ে এসেছেন। তখন আমার কাছে মনে হল বাবা যেন কানে কানে বলছে, এই লুঙ্গির দাম কত রে?

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৩৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×