somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ হোক খুশির, ঈদ হোক আনন্দের।

৩০ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এলাকার বড় ভাইরা যখন আমার মাথাটা চেপে ধরে ডাক্তার চাচার বাসার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি এক চোখ দিয়ে আবছাভাবে আমার বন্ধুকে দৌড়ে যেতে দেখলাম। আমার অন্য চোখ তখন খুলতে পারছিলামনা। মাথা ফেটে রক্তের ধারা আমার সেই চোখের পাতায় এসে জমেছে।
আমার যে বন্ধুর জন্য আমার সেই দশা তার বাবা ছিলেন ডাক্তার। আমরা তার বাসার দিকেই যাচ্ছিলাম। বাসায় পৌঁছে কলিংবেল দেওয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে দরজা খুললেন চাচা নিজে। চাচার কাছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে চাচার সাথেই বাসায় ফিরলাম। ততোক্ষণে বাসায় খবর চলে গেছে। চাচা বাসায় বাবা মাকে আমার ঔষধ এবং অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসলেন।
তখন রমজান মাস চলছিল। বিকেল বেলায় আমি মাঠের একপাশে দাড়িয়ে এলাকার বড় ভাইদের খেলা দেখছিলাম। ছোট হওয়ায় আমি তখনও তাদের সাথে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। ইফতার এর ৪০-৪৫ মিনিট আগের ঘটনা। আমি যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম তার থেকে কিছু দূরে আমার বন্ধু বরই পারছিল। বরই পারতে পারতে সে একসময় পুরো একটা ইট নিল ঢিল দেওয়ার জন্য। বয়সে ছোট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শক্তি সামর্থেও আমরা ছোট ছিলাম। তাই আমার বন্ধুর ছোঁরা ইট স্বাভাবিকভাবেই বরই গাছে না পৌঁছে আমার মাথায় এসে অস্বাভাবিক জোরে আঘাত করল এবং আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল।
আমি খাটে শুয়ে আছি। আমার বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। আমি নিজেও খুব দুর্বল বোধ করছিলাম। যথাসময়ে আযান দিল। আমার পরিবারের অন্যান্যরা ইফতার করল। ইফতার শেষে আমার মা রান্নাঘরে ব্যস্ত; বাবা মসজিদে নামাজ পড়তে গেছেন। এই সময় ভাইয়া বাইরে থেকে আসলো
এবং মা কে জানাল ঈদ এর চাঁদ দেখা গেছে। ঈদ এর চাঁদ দেখা গেছে শুনেই আমার বন্ধুদের কথা মনে পড়ল। সবাই হয়ত এখন ঘরের বাইরে। ঈদ এর চাঁদ দেখছে। আজ কে সবাই অনেক মজা করবে। এর আমি ঘরে শুয়ে আছি। মুহূর্তেই সব ব্যথা , ক্লান্তি দুর্বলতা চলে গেল। আমি রান্নাঘরে একটা সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে আম্মাকে আমার ব্যপারে অসতর্ক দেখে সাবধানে ঘরের বাইরে পা বাড়ালাম।
মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে আমি পাকা রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছি। ঠিক কোন জায়গা থেকে চাঁদটা পরিস্কার দেখা যায় তা আমার ভাইয়ার কথা থেকে আমি শুনেছি। রাস্তার শেষ প্রান্তে সেই চিরচেনা মাঠ। মাঠ ছাড়িয়ে সেই ক্লাব। আমি সরাসরি ক্লাব এর ছাদে উঠে গেলাম। ছাদে উঠে পশ্চিম দিগন্তে তাকাতেই চাঁদটা চোখে পড়ল। পরিচিত সেই চাঁদ। ঈদ এর চাঁদ। আহ! কি আনন্দ। কাল কে ঈদ।
আগামি কাল কেও ঈদ। ঈদ এর চাঁদ দেখা গেছে। সেটাও প্রায় দেড় দুই ঘণ্টার আগের কথা। কিন্তু এই দেড় দুই ঘণ্টায় আমার একবার ও চাঁদ দেখার কথা মনে হয়নি। ঈদ এর চাঁদ দেখা গেছে, কালকে ঈদ; এই কথাটা ভেবে বা নিজেকে নিজে শুনিয়ে আমি শিহরিত হইনি বা হতে পারিনি। ঈদ মানেই যদি হয় আনন্দ,খুশি তাহলে এই খুশি কেন আমাকে স্পর্শ করছেনা। এই কথা আমরা অনেকেই অনুভব করি যে ঈদ এর প্রকৃত আনন্দ ছোটবেলায়। কিন্তু এই ছোটবেলায় কি এমন ছিল যা এখন নেই?
নতুন কাপড়, ঈদ এর সালামী, বন্ধু বান্ধবের এবং নিজ বাসার মুখরোচক খাবারের স্বাদে একদিনের জন্য পেটুক হয়ে যাওয়া, তাদের সাথে অনেক রাত পর্যন্ত নানা আড্ডায় মত্ত হয়ে থাকা। কিন্তু সেটা তো কম বেশি এখনও আছে। তাহলে সেই আনন্দটা কোথায়?
শৈশব এর ঈদগুলোতে ২-৩ দিন আগে থেকেই সমস্ত চিন্তাজগৎ জুড়ে ঈদ বিদ্যমান থাকত। ভাবনার আকাশে ঈদ এর মেঘেরা আনাগোনা করত। সেখানে অন্যকিছুর স্থান ছিলনা। তাই ঈদ তখন এত উপভোগ্য হয়ে উঠত। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে বিচরণ ক্ষেত্রও বড় হয়েছে। তাই ঈদ এখন ভাবনাজগতের খুব ক্ষুদ্র অংশই দখল করে। সেটা অনেক সময় এতই ছোট হয় যে ঈদ এর দিন আর অন্যদিন এর মধ্যে পার্থক্য প্রায় করাই যায়না। কালকে ঈদ আর এখন আমি ব্লগ লিখছি। এটা শৈশবে কল্পনাতীত যে কালকে ঈদ আর আমি এখন অন্য কাজে ব্যস্ত। এখনকার ঈদ এত পানসে হওয়ার পেছনে এটা একটা অন্যতম বড় কারন। এছাড়া বড় হতে হতে আমাদের পাওয়া না পাওয়ার অংকটাও অনেক বড় হয়ে যায়। এর মধ্যে অনেক না পাওয়াগুলো হতাশায় পরিণত হয়। আবার অনেক সময় কি চাই সেটাও ঠিক করা সম্ভব হয়না। সেটাও হতাশার ঝুলিকে ভারীই করে। তাই হয়ত এই ক্রমাগত হতাশার মধ্যে থেকে ঈদকে হয়ত আমি অনুভবই করতে পারছিনা।
আমরা কেউ ভবিষ্যৎ জানিনা। এমনও তো হতে পারে যে কালকের দিনটা আমার খুব ভাল কাটবে। কিন্তু তারপরেও একধরনের অদ্ভুত নির্লিপ্ততা আমাকে ঘিরে ধরেছে।
অনেকে বলবেন ঈদ এর আগে এত নৈরাশ্য কেন? কি করব বলেন, মনে যা ঘটছে তাই লিখলাম। সবাইকে ঈদ এর শুভকামনা জানিয়ে এটাই বলি, ঈদ হোক খুশির, ঈদ হোক আনন্দের।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×