somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুই বিশ্বাস কর আশরাফুল, তুই বিশ্বাস কর!!!!

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে নুরুল আমীন স্যার একটা কথা প্রায়ই বলতেন, একজন স্টুডেন্ট এর তিনটা কাজ। কি কি? পড়া, পড়া এবং পড়া। আমাকে যদি কেও জিজ্ঞাসা করে,তোমার প্রিয় খেলা কি? আমি বলব, ক্রিকেট, ক্রিকেট এবং ক্রিকেট।

বর্ষার সময় এলাকার ছেলেরা যখন ক্রিকেট ছেঁড়ে ফুটবল খেলত তখনও আমি বাসার বারান্দায়, ক্লাবের বারান্দায় ক্রিকেট খেলতাম। এটা ঠিক ফুটবল আমি তেমন ভাল পারতাম না, কিন্তু সেটা ভাল পারার কোন ইচ্ছাও আমার কোনদিন ছিল না। শীতকালে সন্ধ্যার সময় লাইট লাগিয়ে অন্যরা যখন ব্যাডমিন্টন খেলত আমি তখনও খেলতাম ক্রিকেট। এটা ঠিক ব্যাডমিন্টনও আমি তেমন ভাল পারতাম না এবং অবশ্যই সেটা ভাল পারার কোন ইচ্ছাও আমার ছিল না। আমার নিজের কোন ব্যাট ছিল না। আমাদের খেলার জন্য চাঁদা দিয়ে কিনা ব্যাট আমি প্রায়ই বাসায় নিয়ে আসতাম। রাতে ঘরের খালি জায়গায় অদৃশ্য বোলারের বিরুদ্ধে ব্যাট ঘুরাতাম, কত শট ই না প্র্যাকটিস করছি সেখানে। কত সেঞ্চুরিই না করছি সেখানে।

১৯৯৭ সালে আমরা যখন আইসিসি ট্রফি জিতি আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি। তাই বড় ভাইরা কেন রঙ মাখামাখি করছে সেটা আমার কাছে তখন অত পরিস্কার ছিল না। তখন আমার কাছে ক্রিকেট মানেই ভারত পাকিস্তান। আমার বাবা, ভাইয়া , পাড়ার বড় ভাইরা আমার বন্ধুরা সবাই দুই ভাগে বিভক্ত। কেও পাকিস্তান কেও ভারত। কেও আনোয়ার কেও শচিন। আমাকে কেও প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় এদের কথা জিজ্ঞেস করলেই আমি এক নিঃশ্বাসে পাকিস্তান, ওয়াসিম এবং আনোয়ার এর কথা বলতাম। ১৯৯৯ সালে আমরা যখন পাকিস্তানকে হারালাম তখন আমি একটু লজ্জাই পেয়েছিলাম। কারন আমার ভারত ভক্ত বন্ধুরা আমাকে বলত তোর পাকিস্তান তো বাংলাদেশ এর কাছে হারে। অবশ্য তখনই আমি বাংলাদেশের অধিকাংশ খেলোয়াড়দের চিনতাম। অপি, বিদ্যুৎ, নান্নু, বুলবুল, মনি, আকরাম প্রায় সবাইকেই চিনতাম। কিন্তু তাদের কেওই আমার ক্রিকেটীয় নায়ক ছিল না। মোঃ আশরাফুল কে আমি প্রথম দেখি যতসম্ভব জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ও নেমেই যতসম্ভব ২ তা চার মেরেছিল। একটা ছিল লফটেড অন ড্রাইভ... ওইদিনই ওকে আমার ভাল লাগছিল। আর ওকে ভাল না লাগার ও কারন নেই। যেখানে আমাদের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা উইকেট এ গিয়ে নিজের উইকেট বাঁচিয়ে রাখতেই তটস্থ সেখানে আশরাফুল যতক্ষণই খেলত, খেলত চোখ ধাঁধানো স্ট্রোক। তাই ওর ভক্ত হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। একটা সময় বাংলাদেশের খেলা থাকলে শুধু ওর ব্যাটিং টাই দেখতাম। ও আউট আমিও খেলা দেখা থেকে আউট। কোন কারনে আশরাফুল যদি দলে না থাকত খেলাই দেখতেই ইচ্ছা করতনা। জেমি সিডন্সের সময় যখন আশরাফুলের পারফরমেন্স খুব খারাপ তখনও আমি মনে মনে চাইতাম ও খেলুক। শ্রীলঙ্কার সাথে ওর অভিষেক সেঞ্চুরি ছাড়া ওর উল্লেখযোগ্য আর কোন ইনিংসই আমার মনে হয় না আমার সরাসরি দেখা বাদ গেছে।

এই কয়েকদিন আগেই তামিম একটা কথা বলছিল “ আশরাফুল ভাই হল বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেম যেমন মানুষ কোনদিন ভুলে না, আশরাফুল ভাইকেও আমরা কোনদিন ভুলবনা।” উপরে এতগুলা কথা কেন লিখছি জানিস আশরাফুল, এটাই বুঝানোর জন্য যে তুই হলি ক্রিকেটে আমার প্রথম প্রেম। এই আমি আজকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন ভক্ত হয়ে উঠার পিছনেও তোর অবদান অনেক। ভালবাসার অর্থ যদি হয় নিজের মধ্যে যা কিছু ভাল সেটাই দেওয়া তাহলে আশরাফুল তুই বিশ্বাস কর আমি তোকে অনেক ভালবাসি। ভালবাসি বলেই আজকে যখন তোর নাম শুনি, দেখি তখন তোকে আমি একজন ফিক্সার হিসেবে ভাবতে পারিনা, সেই ২০০৪ থেকে তুই আমার বিশ্বাস কে ক্রমান্বয়ে আঘাত দিয়ে আচ্ছিস সেটা আমি চিন্তাই করতে পারি না। তোকে দেবার জন্য আমার মুখ গালিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় না। বরঞ্চ এখনও তোর নাম শুনলে আমার চোখের সামনে তোর বীরত্বগাথাই ফুটে উঠে। ১৫৮, ১০০, ৮৭, ৬৪,১৯০ এই সকল সংখ্যাগুলিই চিন্তার দিগন্তে উকিঝুকি মারে। তোকে ভালবাসি বলেই কেও যখন তোকে ধুতরা ফুল বলত, তোকে শাড়ি পড়িয়ে কিংবা প্রভার সাথে ছবি দিয়ে ব্যঙ্গাত্তক ক্যাপশন দিত আমি মনে আঘাত পেতাম। তোকে ভালবাসি বলেই আর কখনও হয়ত তোর ব্যাটিং দেখবনা সেই ভাবনা আমার চোখকে ভিজিয়ে তোলে, যখন তুই কাদিস তখন আমার চোখেও পানি আসে, তোকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বারবার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।

তুই তো আমাদের সেই দুরন্ত পথিক যার সাহস, যার বীরত্ব পেছনে মুশফিক, তামিম, সাকিব নামক আরও দুরন্ত পথিকদের সৃষ্টি করেছে। কেন আজকে তুই সেই বিভীষিকায় পরিণত হলি যার ক্রিকেটীয় মৃত্যুই হয়ত হবে তোরই উত্তরসুরি দুরন্ত পথিকদের নির্ভুল এবং সুগম পথ নিশ্চিত করতে।

হয়ত তোর খেলা আমি আর কোনদিন দেখতে পারবনা এবং ব্যক্তিগতভাবেও আমিও চাই তোকে শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু বখে যাওয়া ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দেবার পরও মা যেমন তারই জন্য কাদে তেমনি তোর শাস্তি হোক সেটা চাওয়ার পরও আশরাফুল তুই বিশ্বাস কর,
আমি তোকে ভালবাসি
আমরা তোকে ভালবাসি!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×