somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ র্জানি টু হানিমুন

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমি আর সায়মা হানিমুন করতে দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ীতে উঠে আমার কেন যেন মনে হচেছ, কিছু একটা বাদ পড়ে গেছে, যদিও এর কোন কারন নেই । গত রাতে সবকিছু ঠিকমত গোছগাছ করা হয়েছে। তারপরেও জিজ্ঞেস করলাম-
‘সবকিছু ঠিকমত নিয়েছো তো সায়মা?’
‘আমার তো মনে হয় নিয়েছি ।’
‘ঔষুধপত্র, কনডম, টিস্যু, টিকিট? কে জানে? ইন্ডিয়াতে আবার কনডমের দাম কেমন?’
‘আস্তে আসাদ। ড্রাইভার শুনে ফেলবে তো! সবই নিয়েছি।’
‘তুমি কি টিকিটগুলো একটু চেক করে দেখবে?’
‘চেক করা লাগবে না, আসাদ। হানিমুনে নতুন যাচিছ কিন্তু ঘুরতে তো আর নতুন যাচিছ না?’

ড্রাইভার আব্বাস ভাই আমাদেরকে গাবতলীতে ড্রপ করতে যাচেছন। আমি জানালা দিয়ে হালকা কুঁয়াশা আর ধুলিময় ঢাকা শহর দেখছি। বয়সী দেয়ালে পানির জন্য খালি কলসীর মিছিল; সুন্নতে খৎনার বিজ্ঞাপনসহ কত হরেক রকমের পোষ্টার শোভা পাচেছ! দোকানের চিপায় ফুল বিক্রেতাদের কুলি করে ফুলে পানি ছিটানো; ট্রাফিক সিগনালে হত দরিদ্র রোগা শীর্ণকায় মহিলাদের সর্বরোগের ঔষধের লিফলেট বিতরনের প্রস্তুতি নজর কাড়লো। সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগলো গাবতলীতে স্বামী, সন্তান এবং আপনজন পরিত্যাক্তা সেই অসহায় বৃদ্ধাকে দেখে। স্টেশনের পাবলিক টয়লেটের কেয়ার টেকার এই মহিলা কতগুলো বদনা নিয়ে জীবিকার জন্যে তাঁর কর্মস্থলে যাচেছ।

‘করতোয়া লাইন’ কোচ সার্ভিসের কাউন্টারে গিয়ে আবিস্কার হলো আমরা টিকিট আনতে ভুলে গেছি। মেজাজ যতখানি খারাপ হলো তার চেয়ে প্রকাশ করলাম অনেক কম কারন হানিমুনে যাচিছ আর বিয়ে হয়েছে মাত্র পাঁচদিন। জীবনের শুরুতেই বউকে তো আর মেজাজ চড়ানো ভয়ংকর চেহারাটা দেখানো যায় না। এখন হচেছ পারসোনালিটি শো করার সময়। কিন্তু কোনভাবেই কোচ সার্ভিসের লোকেরা কথা শুনতে চায় না, পারলে অন্যদের কাছে আমাদের সিট বিক্রি করে দেয়, যাত্রীর তো কোনো অভাব নেই। শেষ পর্যন্ত কোচ সার্ভিসের লোকদের বুকিংয়ের নামের সাথে পরিচয় প্রমান করে বোঝাতে গলদঘর্ম হলাম যে আমরাই প্রকৃত যাত্রী। এরই মধ্যে কোচ ছাড়ার সময় হয়ে গেল, তাড়াহুড়া করে ব্যাগ-প্যাটরা বক্সে দিয়ে গাড়িতে উঠলাম। তিন সিটের সারিতে আমাদের সিট, সেখানে অন্য একজন যাত্রী বসে আছেন। তিনি জানালার দিকে মুখ করে বসে আছেন, ভালো করে চেহারা দেখা যাচেছ না। হাবে-ভাবে, পোষাকে ভদ্রলোকই মনে হচেছ আর সবচেয়ে বড় কথা হচেছ পাতলা গড়ন। এই নয়/দশ ঘন্টার জার্নিতে মোটা হলে আর উপায় ছিল না । যথারীতি আমি বসলাম মাঝখানে, বেগানা পুরুষের সাথে তো আর নিজের বউকে বসতে দেয়া যায় না।

গাড়ী ছুটে চলেছে রংপুর বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে, মার্চ মাসের চমৎকার সুন্দর সকাল। বসন্ত দিন। ইতিমধ্যেই ঢাকা শহরের ঘুম ভেঙ্গেছে, আকাশ-বাতাস কাপিয়ে মুড়ির টিন মার্কা গাড়ীগুলো হর্ণ বাজাচেছ। ক্লান্ত চোখে দুরপাল্লার গাড়ীগুলো ঢাকা শহরে ঢুকছে। পত্রিকা বিক্রেতা হকাররা সুসংবাদ-দু:সংবাদের বান্ডিল খুলছে।

জানালার দিকে তাকাবার ভাব করে আড়চোখে আমার পাশের যাত্রীর দিকে তাকালাম। ও মাই গড! আমি তো একে চিনি। এই লোক পুষ্প’র হাসবেন্ড। আর পুষ্প? ‘সে আমার কি না হইতে পারতো!’ পুষ্প’র অফিসে এর সাথেই তো আমার দেখা হয়েছিল। নতুন বউকে এক্সট্রা কিছু আর আমাকে সুপিরিয়রিটি শো করার জন্য ভুল-ভাল ইংরেজীতে কথা বলেছিল। আমি দরদর করে ঘামছি আর মনে মনে বলছি-
‘হে আল্লাহ! তোমার দুনিয়ায় ৬০০ কোটি মানুষের মধ্যে তুমি কি আর কাউকে আমার সহযাত্রী হবার জন্য পেলে না?’
‘ কে হায়! হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে? ’

এখন কেমন হবে? কি করা যায়? এই লোকের পাশে কিভাবে নয়/দশ ঘন্টা বসে থাকবো? কপালে কি আছে, কে জানে? আচছা উনি কি আমাকে এখনও দ্যাখেননি? আর দেখলেই কি বলবে নাকি? কত যে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচেছ। যেমন, আমার কি কোন কথা বলা উচিৎ? কি বলা উচিৎ? অথবা উনিও তো প্রথমে কথা বলতে পারেন। কি বলতে পারেন? কি উত্তর দিব? চরম অস্বস্তি হচেছ। কি যে হয়? এই গজব পরিস্থিতির কোথায় শেষ? কে জানে? নামাজ-রোযা ছেড়েছি বহুদিন, ফলে খুব একটা দোয়া কালামও মুখস্ত নেই। এক দোয়া ইউনুস আর কতক্ষন জপ করবো? এখন মনে হচেছ এই গাড়ীতে না যেতে পারলেই ভালো হতো। মাথা টনটন করছে ব্যথায়। আমার হাসফাস অবস্থা দেখে সায়মা জিজ্ঞেস করলো-
‘তোমার কি হয়েছে? তুমি এত ঘামাচেছা কেন?’
‘না। কিছু হয়নি। কেন যেন খুব গরম লাগছে।’
‘টিস্যু নাও, ঘাম মোছো। কি বিশ্রী দেখাচেছ তোমাকে!’
‘হাতের কাছে প্যারাসিটামল আছে? দাও তো।’

ঘাম মুছছি আবার ঘেমে যাচিছ মুহুর্তেই, প্যারাসিটামল কাজ করছে না। মনে হচেছ প্রেসারটা বেড়ে গেছে, একটা ভারগন ট্যাবলেট খেতে পারলে ভালো হতো। ঘাড়ের শিরাগুলো টান টান হয়ে আছে, ঘাড় ব্যথা করছে। দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু পাঁচ বছর আগের স্টাডি ট্যুরের সেই ঘটনাগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচিছ হাসান এসে আমাকে বলছে-
‘দেখছিস! পুষ্প কি শুরু করেছে টনির সাথে?’
‘হু। দেখছি।’
‘মানুষ কিন্তু নানান কথা বলছে।’
‘কি বলছে?’
‘কি আর বলছে না? সবই বলছে।’
‘আমি জানি সবই। এখন আমি কি করতে পারি?’
‘তুই ওকে বল। জিজ্ঞেস কর।’

পুষ্প আমাদের ক্লাসের টনি’র সাথে হঠাৎ করেই কয়েকদিন ধরে একটু বেশী মিশতে শুরু করেছে, তাঁর সাথে দেখা হলে হেসে হেসে কথা বলছে। তাদের সম্পর্কে মানুষ নানান কথা বলাবলি শুরু করেছে। পুষ্পকে বললাম-
‘টনির সাথে তোর মেলা মেশাটা আমার ভালো লাগছে না।’
‘তুই সন্দেহ বাতিকে ভুগছিস, তাই তোর ভালো লাগছে না।’
‘সন্দেহ নয়, ভালোবাসায় ভুগছি। এ তুই বুঝবি না।’
‘আমার কাছে তোর ভালোবাসার মানে সন্দেহ মনে হয়। এরকম ভালোবাসা তো আমি চাই না।’
‘তুই কি আমাকে বলবি তুই আসলে কি চাস? তোর যদি টনিকে ভালোলাগে, আমাকে বলতে পারিস। আমি তোকে আর বিরক্ত করবো না।’

পুষ্প কোন উত্তর না দিয়ে ঠোঁটে অপছন্দের একটা মোঁচড় দিয়ে উঠে যায়। আমার তো মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়। আমি তখন একটুতেই অনেক বেশী রেগে যাচিছ, পারলে পুস্পকে নিয়ে এখনই ট্যুর থেকে চলে যাই। কিন্তু পুষ্প আরো বেশী করে টনি’র সাথে মিশতে শুরু করেছে। আমি তখন ভালোবাসা যে কত কষ্টের, কত দু:খের, কত যন্ত্রনার তা কাউকেই বোঝাতে পারছি না। আমার তখন পাহাড়, পর্বত, সাগর, হ্রদ কিছুই ভালো লাগছে না। জগতের সব কিছুই বড় অর্থহীন মনে হচেছ। এই পুষ্প’কে পাবার জন্য কত কিছুই না করেছি! সুবেহ সাদেকে ফজরের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে মোনাজাত করেছি। পুষ্প’র প্রতিবেশী, কলেজের বন্ধু জাহাঙ্গীরকে আইন কলেজে ভর্তি হতে সাহায্য করিনি। আজমল স্যারের রুমে রাতের বেলা সাপ ছেড়ে দিয়েছি। স্যারের একটু আলুর দোষ ছিল। স্যার ঘন ঘন পুষ্পকে তার রুমে যেতে বলতো, সব ব্যাচেই দু’একটা মেয়েকে টার্গেট করতো। সে কারনেই মনে হলো এই বদটাকে একটু শিক্ষা দেয়া দরকার। এক পর্যায়ে সাপ চিকিৎসার গল্প পুরো ক্যাম্পাসে রাষ্ট হয়ে গেল। নানা রকম গুজবও তেরী হলো। বেশিরভাগ গুজবই এ্যাডাল্ট জোক্স টাইপ। গুজবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা হলো --
‘স্যার নাকি অমুক মেয়ের সাথে যখন ঐকর্মটা করতে গিয়েছিল ঠিক তখনই দ্যাখে একটা গোখরা সাপ পায়ের কাছে ফনা তুলে আছে। মেয়ে তো পায়জামা হাতে লাফ দিয়ে পড়লো রুমের বাইরে।’

তারপর অনেকদিন মেয়েরা ভয়ে আর তাঁর রুমে যেতে চাইতো না। যদিও তিনি ক্লাসে, ক্যাম্পাসে মেয়েদের সাথে দেখা হলেই নানাভাবে অভয় দিতেন --
‘আমার রুমে কার্বলিক এসিড দেয়া হয়েছে । তোমরা এসো, ভয় পেয়ো না। প্রানী বিজ্ঞানের শিক্ষক ড: হালিম বলেছে- সাপটি বিষধর ছিল না, বাচচা সাপ। ও আমার বন্ধু মানুষ। সাপের উপর পি,এইচ,ডি করেছে।’

যাই হোক, তখন আমার দু:স্বপ্ন জুড়ে শুধু টনি আর টনি। এরই মধ্যে কাপ্তাই লেকে ঘোরার সময় দেখি পুষ্প আর টনি লঞ্চের ছাদে পাশাপাশি বসে হাসাহাসি করছে। নিজেকে তখন আর ধরে রাখতে পারছিলাম না। খুব খারাপ লাগছিল । বুকটা ফেটে যাচিছল। ইচেছ করেছিল চিৎকার করে কাঁদি। বুকের যত কষ্ট মনে হচিছল সব বের হয়ে যাচেছ আমার পাঁজর ভাঙ্গা নীরব কান্না আর অঝোর ধারার চোখের জলের সাথে।

রাতে হোটেলে ফিরে আমি ছাড়া সবাই রেঁস্তোরায় খেতে গেল। আমার খিদে নেই, কয়েকটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছে না; এপাশ-ওপাশ করছি। প্রচন্ড দূর্বল লাগছে; মাঝরাতে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। হাসান বেঘোড়ে ঘুমাচেছ; ডাকছি কিন্তু শুনছে না। আমার গলা দিয়ে খুব একটা শব্দও বের হচেছ না। এক সময় ছটফট করতে করতে বিছানা থেকে ঠাস করে পড়ে গেলাম। তারপর আর কিছুই মনে নেই। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম, যদ্দুর মনে পড়ে যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন পুষ্প’র এক ফোটা অশ্র“ পড়েছিল আমার নিদ্রিত চোখের পাতায়। চোখ খুলেই দেখি সে আমার কপালে হাত রেখে মাথার পাশে বসে কাঁদছে।আমি হাসপাতালে। টপ টপ করে চোখের পানি পড়ছে। হেচকি ওঠার মতো কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠছে এবং কান্না ভেজা ধরে আসা গলায় বলছে--
‘আমাকে যদি এত ভালোই বাসিস তাহলে সবার সামনে এত অপবাদ দিলি কেন? এত কলঙক না দিয়ে আমাকে মেরে ফেলতেও তো পারতি?’

পরবর্তীতে শুনেছি স্টাডি ট্যুরের সহপাঠীদের মধ্যে পুষ্প, টনি আর আমাকে নিয়ে অনেক গুজব রটেছিল। বেশীরভাগ বন্ধুরাই নাকি আমার পক্ষ নিয়ে পুষ্পকে অনেক কথা শুনিয়েছিল। আজ সেই পুষ্প’র স্বামী মাহফুজ আমার পাশেই বসে আছে। ভয়ে ভয়ে তাকালাম তাঁর দিকে। সে মুখ গোমরা করে অপলকে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষন দু:খী দু:খী দেখাচেছ তাকে। চোখের পানি টলমল করছে, যে কোন সময় বাঁধভাঙ্গা কান্নার রোল পড়তে পারে। এমন সময় মাহফুজের মোবাইল বেজে উঠলো --
‘হ্যালো। হ্যাঁ, বলো। বাঁশতলায়। আব্বার পাশে। হ্যাঁ, বাঁশতলায় কবর খোড়ো। এটা মা’র নিজের ইচছা ।’

ফোন রাখতে না রাখতেই মাহফুজ দু’হাতে মুখ ঢেকে নতজানু হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। কি ভীষন করুন কান্না! আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। খুবই বিব্রত বোধ করছি। আমার কিছু একটা বলা উচিৎ, করা উচিৎ। কাঁধে হাত দিয়ে সান্তনাটুকু তো দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না কারন ভাবছি আমার দেয়া সান্তনা কি ওর ভালো লাগবে? আশে-পাশের সিটের যাত্রীরা উৎসুক হয়ে জানতে চাচেছ ‘ওনার কি হয়েছে?’ নিজেকে ফিরে পেলাম সায়মার কথায়-
‘ওনাকে ধরো। তুমি বুঝতে পারছো না? ওনার মা মারা গেছেন।’

আমি মাহফুজকে ধরলাম,আড়ষ্ঠ হাতে ধরলাম। খুব খারাপ লাগছে ওর জন্য। আহা রে! আজ ওর সবচেয়ে দু:খের দিন। মাহফুজ কাঁদতে কাঁদতে আমার কাঁধে নেতিয়ে পড়লো। একটু পর পর কেঁপে কেঁপে দীর্ঘশ্বাস নিচেছ আর নিচু গলায় ‘মা’ ‘মা’ বলে কাঁদছে। আমি মাহফুজকে গভীর মমতায় দু’হাতে ধরে আছি আর ভাবছি এই মানুষটা আমার কত বড় শত্র“ই না ছিল! গাড়ী ব্রিজের উপর দিয়ে যাচেছ। দু’পাশে বিশাল বিস্তীর্ন যমুনা নদী সিরাজগঞ্জের বগল বেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করেছে।

হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ হলো। তারপর আর কিছু মনে করতে পারছি না। সায়মা’র কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে, হাতও কেটে গেছে। গাড়ী এ্যাকসিডেন্ট করেছে। আমার সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচেছ, কোথায় কেটেছে ভেঙ্গেছে বুঝতে পারছি না। সারা শরীর অবশ অবশ লাগছে। আমার কোলের মধ্যে মাহফুজ কোন নড়া চড়া করছে না।
‘আমার পা বের করতে পারছি না সায়মা। আমার হাতটা ধরো।’
‘দেখি তোমার পা কোথায় আটকিয়েছে?’
‘এই যে এখানে। ফুট রেষ্টের মধ্যে।’

সায়মার চেষ্টায় জুতা খুলে পা বের করতে পারলাম, এছাড়া আমার তেমন কিছু হয়নি কিন্তু মাহফুজের ডান পাঁজরে এবং হাতে কাঁচের টুকরা ঢুকে গেছে, প্রচুর রক্ত পড়ছে। এখনই হাসপাতালে নিতে হবে। মাহফুজ মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে। এতক্ষনে লুটপাট পর্ব শেষ এবং প্রকৃত উপকারী মানুষেরা এসেছে। আমরা মাহফুজকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছালাম। ডাক্তার সায়মা’র হাতে, কপালে ব্যান্ডেজ আর আমার কিছু পরীক্ষা করে ছেড়ে দিল। কিন্তু মাহফুজের অপারেশন হচেছ। কয়েক ঘন্টা সময় লাগবে। পুষ্পকে এখনই খবর দেয়া দরকার। মাহফুজের মোবাইলের কন্টাক্ট লিষ্টে নাম্বার পাওয়া গেল। যদিও আমার মোবাইলে বেনামে পুষ্প’র নাম্বার আছে কিন্ত বলি কি করে? ফোন করতে গিয়েও হাতটা কেঁপে গেল। শেষ যে বার বছর খানেক আগে ফোন করেছিলাম তখন পুষ্প অনেক দোহাই দিয়ে বলেছিল-‘আমাকে আর ফোন করিস না।’ তারপরেও অনেকবার ফোন করেছি শুধু পুষ্প’র মুখে হ্যালো শুনে রেখে দিয়েছি, কোনো কথা বলিনি। আর এখন এই মরা বাড়িতে- এত বড় দু:সংবাদ তারে আমি দিবো কি করে? তাই সায়মাকে দিয়েই ফোনটা করালাম।

অত:পর পুষ্প হাসপাতালে আসলো। মাহফুজকে বেডে দেয়া হয়েছে, এখনও জ্ঞান ফেরেনি। পুষ্প তাঁর অপরিচিতা উপকারী সায়মা’র প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও আসাদকে তেমন কিছুই বললো না। শুধু আসাদের চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। মুহুর্তে দু’জনের সাত বছরের প্রেম, আনন্দ, বেদনা সবই মনে পড়ে গেল। আসাদের পা চলছে না তবুও সায়মার হাত ধরে নি:শব্দে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। তার মন চাচেছ পিছন ফিরে আরো একবার প্রিয়তমার মুখখানি দেখতে কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। অসম্ভব কষ্ট আর ভয়ংকর এক গোপন কান্না বুকে নিয়ে হাসপাতালের কম্পাউন্ড ত্যাগ করলো। আসাদের স্মৃতির পটে অফ হোয়াইট এর উপর গাঢ় নীল পাড়ের সিল্কের শাড়ী, মুক্তোর গহনার সাথে এক পায়ে নুপুর পড়া পরীর মতো সুন্দর পুষ্প’র মুখখানি ভেসে উঠলো এবং আরো মনে পড়লো কক্সবাজারের সৈকতে সুর্যাস্তের সময় হাত ধরে হাটার সেই সুন্দরতম মুহুর্তগুলো, যখন পুষ্প বলেছিল--

‘আমরা তো কক্সবাজারটা দেখেই ফেললাম, হানিমুনে কোথায় যাবো?’
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×